বাগমারায় বেশি দামে সার বিক্রির অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার, বাগমারা: রাজশাহীর বাগমারায় প্রতি কেজি ৬ টাকা ইউরিয়া সারের দাম বৃদ্ধিতে কৃষকদের মধ্যে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। কৃষি কাজে সব চেয়ে বেশী ব্যবহারকৃত ইউরিয়া সারের সরকারী ভাবে হঠাৎ করে দাম বাড়ায় কৃষকরা ফসলচাষে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
এছাড়া এলাকায় ইউরিয়া সার সরকার নির্ধারিত দামে মিলছে না বলে কৃষকরা দাবি করেছেন। বস্তাপ্রতি ১শ থেকে ২শ টাকা অতিরিক্ত দাম দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন কৃষকরা। কৃষকদের অভিযোগ, ডিলার কিংবা খুচরা বিক্রেতারা নিজস্ব গোডাউনে রাসায়নিক সার মজুত রেখে বাজারে সংকট দেখিয়ে সিন্ডেকেট করে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছে। বেশী দামে সার ক্রয় করে ধানচাষে লোকশানের শঙ্কা প্রকাশ করছেন কৃষকরা।
তবে ডিলাররা বলছেন, কৃষকদের অভিযোগ মিথ্যা। সরকার নির্ধারিত দামেই সার বিক্রি করা হচ্ছে।
সরেজমিনে বুধবার উপজেলার বিভিন্ন সার ডিলারের গোডাউন ঘুরে দেখা যায়, গোডাউনে পর্যাপ্ত সার মজুত আছে। তারপরও ডিলাররা অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করছেন।
বাগমারা উপজেলার সগুনা গ্রামের কৃষক আব্দুস সালাম উপজেলার ভবানীগঞ্জ বিসিআইসি নিবন্ধিত ডিলার সরদার ইন্টার প্রাইজের আসেন সার কিনতে। সাইনবোর্ডে সারের বাজার মূল্য দেখে সার কিনতে চাইলেও ডিলার বস্তাপ্রতি বেশি নিয়েছেন।
এতে ১১শ টাকার বস্তা (৫০ কেজি) ইউরিয়া সার ১২’শ টাকায় ক্রয় করতে হয়েছে। একই ভাবে গোপালপুর গ্রামের জালাল উদ্দিন তামান্না টের্ডাসে সার ক্রয় করতে গিয়ে ১১৮০ টাকায় ক্রয় করেছেন বলে জানান।
ডিলারের বিষয় ভবানীগঞ্জ বাজারের কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করেন, উপজেলার বাজারের সারের ডিলার সরদার ইন্টার প্রাইজের সার বিক্রেতা খানজাহান আলী সব সার বস্তাপ্রতি একশ থেকে দুশ টাকা বেশি নিয়ে থাকেন। চার্ট অনুযায়ী টিএসপি সার ১১০০ টাকা লেখা থাকলেও বিক্রি করছেন ১৪০০ টাকায়। ইউরিয়া ১১শ লেখা থাকলে ১২শ থেকে ১২৫০ টাকা বিক্রি করছেন। পটাশ সার ৭৫০ টাকা লেখা থাকলেও ১১০০ থেকে ১২০০শ টাকার কমে দেন না।
উপজেলার বাসুপাড়া ইউনিয়নের কৃষক আবদুল করিম জানান, বোরো মৌসুমের প্রথম দিকে স্থানীয় ডিলাররা সার গোডাউনে রেখে কৃষকদের সার সংকট দেখান। বস্তাপ্রতি বেশী মূল্য দিলে মিলছে সার। আমরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার কিনতে চাই। অথচ সময় মত সার নেই বলে জব দেন ডিলাররা।
এদের অনেকেই রাতের অন্ধকারে বেশী দামে ছোট ছোট সার ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে। ওই সব ছোট ব্যবসায়ীরা বেশী দামের সার কিছু লাভ হলেই ছেড়ে দেন।
বালানগর গ্রামের কৃষক ফছির উদ্দিন জানান, ভবানীগঞ্জ আমি এক ডিলারের কাছে ইউরিয়া সার কিনতে গেলে প্রথমে বলে সার নেই। টাকা বেশি দিতে চাইলে সার দেয়। ১১০০ টাকার সার ১২০০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে।
একই এলাকার কৃষক আব্দুল মান্নান জানান, হঠাৎ করে বস্তা প্রতি ৮০০শ টাকার মুল্যের ইউরিয়া সার ১১০০শ টাকা ঘোষণা করায় চাষ আবাদ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন। এক দিকে শ্রমিকের মজুরিবৃদ্ধি অন্য দিকে বেশী দরকারী ইউরিয়া সারের দাম। এতে করে ফসলের ন্যায্য দাম সময় মত না পেয়ে লোকশান গুণতে হয়। এর মধ্যে ডিলার কিংবা খুচরা বিক্রেতারা নিজস্ব গোডাউনে সার মজুত রেখে বাজারে সংকট দেখিয়ে সিন্ডেকেট করে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন। সরকারিভাবে তদারকি না করায় কৃষকরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে তিনি দাবি করেন।
নরসিংহপুর গ্রামের আব্দুল করিম নামে এক কৃষক জানান, বিভিন্ন খুচরা সার বিক্রেতারা প্রতি কেজি ২২ টাকার ইউরিয়া সার কেজিতে ২৫ টাকায় ক্রয় করতে বাধ্য হয়েছেন।
সারের দাম বৃদ্ধি নিয়ে বাসুপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাষ্টার লুৎফর রহমান বলেন, আমাদের ইউনিয়নের সার ডিলার হাফিজুর রহমান ভবানীগঞ্জ বাজারের দোকানে সার বিক্রি করেন। তবে ইউনিয়নে দেউলিয়ায় একটি সার গোডউন রয়েছে। বাজারে বেশী দামে সার বিক্রি চলছে বলে তিনি শুনেছেন। তবে সে বেশী দামে বিক্রি করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি। বিসিআইসি অনুমোদিত সার ডিলার তামান্না ট্রেডার্সের মালিক হাফিজুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা সরকার নির্ধারিত মূল্যেই সার বিক্রি করি। একটি টাকাও বেশি নেই না। কৃষকরা মিথ্যা অভিযোগ করছেন বলে দাবি করেন।
নন্দনপুর চিকাবাড়ি বাজারের এক খুরচা সার বিক্রেতা বলেন, ডিলারদের কাছ থেকে পাইকারিভাবেই বেশি দামে সার কিনেছি। এজন্য খুচরা পর্যায়েও বেশি দামে বিক্রি করা হয়। কৃষকদের উপকারে সার সংকট এড়াতে বেশী মূল্যে সার ক্রয় করতে বাধ্য হয়েছেন বলে তিনি স্বীকার করেন।
বাগমারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সরকারিভাবে ২২ টাকায় ইউরিয়া সারের দাম নির্ধারন। ডিলাররা ২০ টাকায় ক্রয় করে ২২ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য। বেশী দাম নেয়ার অভিযোগ পেলে সেই ডিলারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।


প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০২২ | সময়: ৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ