হৃদয়ের আরেকটি দুর্দান্ত ইনিংসে সিলেটের হ্যাটট্রিক জয়

স্পোর্টস ডেস্ক: ক্রিজে গিয়ে প্রথম বলেই ছক্কা। এরপর ছুটতে থাকল তৌহিদ হৃদয়ের ব্যাটিং রথ। কবজির মোচড়, পেশির জোর, দুর্দান্ত টাইমিং আর স্কিল, সব কিছুর প্রদর্শনী চলতে থাকল। আগের ম্যাচে যেখানে শেষ করেছিলেন, এবার সেখান থেকেই যেন শুরু করে আরেকটি অসাধারণ ইনিংস খেললেন তরুণ এই ব্যাটসম্যান। আবারও সিলেটকে এগিয়ে নিলেন তিনি দারুণ এক জয়ের পথে।
বিপিএলে নিজেদের প্রথম আসরে টানা তৃতীয় জয়ের স্বাদ পেল সিলেট স্ট্রাইকার্স। অপরাজেয় পথচলায় এবার তারা ৫ উইকেটে হারাল আগের আসরের চ্যাম্পিয়ন্স কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সোমবার কুমিল্লা ২০ ওভারে তোলে ১৪৯ রান। সিলেট তা অনায়াসে পেরিয়ে যায় ১৪ বল বাকি রেখে।
আহের ম্যাচে বিশাল রান তাড়ায় হৃদয়ের ফিফটিতে সিলেট পেয়েছিল সাহস। এবার তার আরেকটি ফিফটি দলের কাজ করে দেয় অনেকটাই সহজ। ৩৭ বলে ৫৬ রানের ইনিংস খেলেন তিনি, যেখানে ৩ চারের পাশে ছক্কা ৪টি। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে তার হাতে ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
কুমিল্লা শিরোপা ধরে রাখার অভিযানে হোঁচট খেল প্রথম দুই ম্যাচেই। টানা কয়েকদিন কুয়াশা ও শীতের দাপটের পর এ দিন ছিল স্বস্তিদায়ক মুক্তি। স্যাঁতস্যাঁতে কয়েকটি দিনের পর সূর্যের আলোর ছোঁয়ায় শের-ই-বাংলায় ফেরে উষ্ণ দুপুর। বদলে যাওয়া কন্ডিশনে উইকেটের চরিত্রেও দেখা যায় বদল। দিনের প্রথম ম্যাচে আগের ম্যাচগুলোয় ব্যাটসম্যানদের ভোগান্তি হলেও এবার ভিন্ন। ব্যাটিং স্বর্গ না হলেও ব্যাটসম্যানের শট খেলার সুযোগ ছিল যথেষ্টই। তা কাজে লাগান হৃদয়রা। প্রথম ইনিংসের পর দেড়শ রানকে বেশ চ্যালেঞ্জিংই মনে হচ্ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লড়াই জমেইনি।
রান তাড়ার শুরু থেকেই নিজেদের চাওয়া বুঝিয়ে দেয় সিলেট। প্রথম ওভারে নাজমুল হোসেন শান্তর চারে শুরু। পরের ওভারে আবু হায়দার রনির লেংথ বল ছক্কায় ওড়ান মোহাম্মদ হারিস। পরের বলেই অবশ্য স্কুপ করতে গিয়ে উইকেট হারান এবারের আসরে প্রথম খেলতে নামা এই পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান। তবে নতুন ব্যাটসম্যান হৃদয় উইকেটে গিয়ে প্রথম বলেই মারেন ছক্কা। এক বল পর আরেকটি চার। চাপ উধাও মুহূর্তেই।
শান্তর শুরুটা নড়বড়ে হলেও পরে আত্মবিশ্বাসী হয়ে মোহাম্মদ নবিকে ছক্কা মারেন তিনি নান্দনিক এক ইনসাইড আউট শটে। পরের ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানের বলে হৃদয়ের আরেকটি দুর্দান্ত ছক্কায় দলের ফিফটি চলে আসে ৪.৫ ওভারে। শান্ত অবশ্য থেমে যান পাওয়ার প্লে শেষেই। খুশদিল শাহর বলটি ছিল মারার মতোই। তবে সেই শর্ট বলকে গায়ের জোরে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন শান্ত (২১ বলে ১৯)।
সিলেটের রানের স্রোতে তাতে বাঁধ দেওয়া যায়নি। আগের ম্যাচের আরেক নায়ক জাকির হাসান উইকেটে যাওয়ার পরপরই মোসাদ্দেক হোসেনের লেংথ বল আছড়ে ফেলেন গ্যালারিতে। পরের বলে বাউন্ডারি পেয়ে যান তিনি ফজলহক ফারুকির বাজে ফিল্ডিংয়ে। ইনিংসের মেরুদণ্ড ছিল পাঁচে নামা জাকের আলির ব্যাটিং। ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৪৩ বলে ৫৭ রানের ইনিংস খেলেন এই কিপার-ব্যাটসম্যান। সাম্প্রতিক সময়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ ফর্মে থাকা ২৪ বছর বয়সী ক্রিকেটার বিপিএলে ২০ ম্যাচ খেলে দেখা পেলেন প্রথম ফিফটির। পরে নবির বলেও ছক্কা মারেন তিনি দৃষ্টিনন্দন শটে।
আগের ম্যাচের মতো অবশ্য ইনিংসটাকে টেনে নিতে পারেননি জাকির। নবির ওই ওভারেই কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন তিনি ১০ বলে ২০ রান করে। তবে তৌহিদের ছুটতেই থাকেন অপ্রতিরোধ্য গতিতে। খুশদিলের স্পিনের ছক্কার পর টানা দুটি চার মারেন তিনি মুস্তাফিজকে অসহায় বানিয়ে। টানা ফিফটি স্পর্শ করেন ৩৫ বলে। ফিফটির পর আরেকটি ছক্কা মারেন তিনি খুশদিলকে। পরের বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মারার চেষ্টায় স্টাম্পড হয়ে থামে তার ইনিংস।
জয় তখন সিলেটের নাগালেই। থিসারা পেরেরা গিয়ে বিশাল একটি ছক্কার পর আউট হয়ে যান। তবে দলকে বিপাকে পড়তে হয়নি। ২৫ বলে অপরাজিত ২৮ করে দলকে জয়ের ঠিকানা নিয়ে যান মুশফিকুর রহিম। কিছুটা ব্যাটিং অনুশীলন সেরে নেন আকবর আলি।
ম্যাচের প্রথম ভাগে সিলেট বোলিংয়ে নামে টস জিতে। আগের দুই ম্যাচে নতুন বল হাতে নেওয়া মাশরাফি বিন মুর্তজা এ দিন শুরুতে আক্রমণে আনেন থিসারা পেরেরাকে। প্রথম বলে লিটন দাসের বাউন্ডারিতে শুরু হয় হয় ম্যাচ। কাভার দিয়ে এই বাউন্ডারির পর তৃতীয় বলে পয়েন্ট দিয়ে আরেকটি বাউন্ডারি মারেন স্টাইলিশ এই ব্যাটসম্যান।
তবে লিটনের অভিযান শেষ ওখানেই। পরের বলেই অনেক বাইরের বলে ধরা পড়েন তিনি পয়েন্ট সীমানায় ফিল্ডারের হাতে। মাশরাফি আক্রমণে আসেন চতুর্থ ওভারে। ওই ওভারে আলগা বল পেয়ে টানা তিন বলে বাউন্ডারি মারেন তিনে নামা সৈকত আলি। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনিও। ইমাদ ওয়াসিমের সোজা বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে যান ঘরোয়া ক্রিকেটের অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান (১২ বলে ২০)।
দেলকে আরও বিপদে ঠেলে পরের ওভারে বিদায় নেন ইমরুল কায়েসও (২)। আমিরের ফুল লেংথ স্লোয়ার ডেলিভারি কুমিল্লা অধিনায়ক তুলে দেন শর্ট কাভারের হাতে। ওপেনার দাভিদ মালান তখনও টিকে থাকেন এক প্রান্তে। ৪৬ রানে ৩ উইকেট হারানো দলকে এগিয়ে নেন এই ইংলিশ ব্যাটসম্যান ও জাকের।
শুরুতে একটু সময় নিয়ে জাকের নবম ওভারে স্লগ সুইপে ছক্কা মারেন ইমাদকে। এক বল পর বল বাউন্ডারিতে পাঠান তিনি ফ্লিক করে। মালান অবশ্য ছন্দ পাননি তখনও। ১০ ওভার শেষে তার রান ছিল ২৫ বলে ২৩। পরের দুই ওভারে দুটি চার মেরে তিনি চেষ্টা করেন রানের গতি বাড়ানোর। তবে শেষ পর্যন্ত পুষিয়ে দিতে পারেননি তিনি। থিসারা পেরেরার লেংথ বলে ক্যাচ দেন তিনি লং অনে। ৩৯ বল খেলে ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপজয়ী ব্যাটসম্যানের রান ৩৭।
রাজা আরেকপাশ থেকে চেষ্টা করে যান। রেজাউর রহমান রাজার লেংথ বলকে ছক্কায় ওড়ান তিনি দারুণ শটে। টি-টোয়েন্টিতে তৃতীয় ফিফটি স্পর্শ করেন তিনি ৩৫ বলে। তবে ফিফটির পর রানের গতি প্রত্যাশিত বাড়াতে পারেননি তিনি। শেষ দিকে ঝড় তুলতে পারেননি মোসাদ্দেক হোসেন। বিপজ্জনক মোহাম্মদ নবিকে (৭ বলে ৮) বোল্ড করে দেন মাশরাফি। শেষের আগের বলে আবু হায়দার রনির ছক্কায় দেড়শর কাছাকাছি যায় কুমিল্লা। তবে সিলেটের জয়ের তাড়নার কাছে শেষ পর্যন্ত যথেষ্ট হয়নি ওই স্কোর।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ১০, ২০২৩ | সময়: ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ