রিক্তা ‘হত্যার’ সর্বোচ্চ শাস্তি চান রাবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগের ছাত্রী রিক্তা আক্তারকে ‘হত্যার’ প্রতিবাদ জানিয়েছে আইন বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ফরেনসিক রিপোর্টের প্রাথমিক তথ্যমতে রিক্তাকে হত্যা করা হয়েছে চিকিৎসকদের বরাতে এমন তথ্য জানার পরে মানববন্ধন করেন তারা। রোববার বেলা ১১টায় রাবির প্যারিস রোডে সিনেট ভবনের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রিক্তার রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত রিক্তার স্বামী আব্দুল্লাহ ইসতিয়াক রাব্বিকে তাৎক্ষণিকভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার ও তদন্তে খুনি হিসেবে প্রমাণিত হলে আজীবন বহিষ্কার করাসহ ৫ দফা দাবি জানান তারা।
দাবিগুলো হলো- সুষ্ঠু এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার বাস্তবায়ন, অভিযুক্ত ও তার সহায়তাকারীদের ছাত্রত্ব বাতিল, নিহতের পরিবারকে যথাযত ক্ষতিপূরণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহ কুচক্রী মহল যেন মামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে না পারে সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নজরদারি রাখা।
আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কায়েস আহমেদ বলেন, রিক্তার স্বামী রিক্তাকে আমাদের সাথে মিশতে দিতো না। এই জন্য ডিপার্টমেন্টে তার কোনো কাছের বন্ধু নেই। রাব্বি রিক্তার কাছে ১ লাখ টাকা যৌতুক চেয়েছিল যেটা না দেওয়ায় তাকে শারিরীক এবং মানসিকভাবে নির্যাতন করা হতো। আমরা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এবং যাবতীয় প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে ধরে নিতে পারি এটা একটা পরিকল্পিত হত্যা। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে পাঁচটি দাবি আছে, আমারা এই হত্যাকান্ডের দ্রুত এবং সুষ্ঠু বিচার , অভিযুক্ত রাব্বির ছাত্রত্ব বাতিল , বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, মামালা দ্রুত নিষ্পত্তি এবং ভিকটিমের পরিবার কে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
মানববন্ধনে আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী আরিফুল কবীর বলেন, আমাদের বোনকে মেরে, আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। সবাই বিশ্বাস করে আইনী প্রক্রিয়া জটিল। একারণে বিচারে দেরি হয়। আমরা আইনের শিক্ষার্থী। আমরা চাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার হোক। এ বিচারটি একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকুক। যাতে ভবিষ্যতে আমাদের কোন বোনের সাথে কেউ এরকম জঘন্য কাজ করতে না পারে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ রাবি শাখার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক মোর্বারা সিদ্দিকা বলেন, আমি যদি ধরেও নিই, মেয়েটা দোষী। সে হয়তো খারাপ চরিত্রের ছিল, তাহলে কি স্বামীর অধিকার জন্মায় তাকে হত্যা করার? এটা হতে পারে না। মেয়েটি নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছে। এ অবস্থায় আসার পর একটা মেয়ের এভাবে ঝড়ে যাওয়া কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান বলেন, সুস্পষ্ট ভাবে আমরা বলে দিতে চাই, এটি কোন স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। ফরেনসিক রিপোর্টের প্রাথমিক তথ্যমতে এটি একটি হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মধ্য দিয়ে দোষীদের সবোর্চ্চ শাস্তি প্রদান করা হোক।
আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আহসান হাবীব আদনানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরো বক্তব্য দেন আইন বিভাগের অধ্যাপক বেগম আসমা সিদ্দিকা, অধ্যাপক সায়েদা আনজু, অধ্যাপক সাহাল উদ্দিন, অধ্যাপক আব্দুর রহিম মিয়া, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক আক্তার বানু, পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সাবরিনা নাজ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, রিক্তা আক্তারের (২১) রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় স্বামীকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাত ১২ টার দিকে নগরীর ধরমপুরে অবস্থিত ভাড়া বাসা থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঐ শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গতকাল শনিবার দুপুরে মেয়ের বাবা লিয়াকত আলী জোয়ারদার বাদী হয়ে নগরীর মতিহার থানায় স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশি হেফাজতে থাকা নিহত রিক্তার স্বামী ইশতিয়াক রাব্বিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।


প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২২ | সময়: ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ