আজীবন বহিষ্কারের দাবি: রাবি ছাত্রীর মৃত্যু, স্বামী গ্রেফতার

লাবু হক, রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী রিক্তা আক্তারের (২১) মৃত্যুর ঘটনায় স্বামী ইশতিয়াক রাব্বীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার (৩০ জুলাই) দুপুরে রিক্তার বাবা লিয়াকত জোয়ার্দার নগরীর মতিহার থানায় ৩০২ ধারায় হত্যা মামলা দায়ের করলে পুলিশ হেফাজতে থাকা রাব্বীকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার আলী তুহিন জানান, রিক্তার বাবা আজ দুপুরে ৩০২ ধারায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলার প্রেক্ষিতে রিক্তার স্বামী রাব্বীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রিক্তা কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার জোতপাড়া গ্রামের লিয়াকত জোয়ার্দারের মেয়ে। তার স্বামী ইশতিয়াক রাব্বী একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামের ইউনুস আলীর ছেলে। আড়াই বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। তারা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর এলাকার ধরমপুরে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন।
এদিন সকালে নিহত রিক্তার স্বামী রাব্বির বরাত দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর জানায়, রাত সাড়ে ১১টার দিকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে বাসার জানালার সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। এরপর নিজে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর রাব্বীকে হেফাজতে নেয় পুলিশ।
ছাত্র উপদেষ্টা বলেন, ফরেনসিক রিপোর্টের প্রাথমিক তথ্যমতে রিক্তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকদের ধারণা, রিক্তাকে বালিশ কিংবা নরম কিছু দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে সত্য ঘটনা বেরিয়ে আসবে।
ময়নাতদন্তের পর বিকাল ৪টায় রিক্তার মরদেহ ক্যাম্পাসে নিয়ে আসা হয়। এসময় ফরেনসিক রিপোর্টের প্রাথমিক তথ্যটি জানতে পেরে নিহত রিক্তার স্বামী ইশতিয়াক রাব্বির সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করেন আইন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে রাব্বিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার করাসহ নিহতের পরিবারকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতার দাবি জানান তারা।
মানববন্ধনে আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান বলেন, আমরা চাইনা আর দ্বিতীয় কেউ এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর শিকার হোক। আমরা বিভাগের পক্ষ থেকে ইশতিয়াক রাব্বির সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি। সেই সঙ্গে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন শেষে ইশতিয়াক খুনি হিসেবে প্রমাণিত হলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে নিহত রিক্তার প্রথম জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এসময় নিহত রিক্তার বাবা লিয়াকত জোয়ার্দার বলেন, আমি একজন চাষী মানুষ। খেয়ে না খেয়ে আমার মেয়েকে পড়িয়েছি। মেয়েকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু কখনও ভাবতে পারিনি আমার মেয়েকে নিয়ে দেখা স্বপ্ন এখানেই শেষ হয়ে যাবে। আমি এ ঘটনার কোনো আপোষ চাইনা। আমি আমার মেয়ের স্বামীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, রিক্তার মৃত্যুর ঘটনাটি মর্মান্তিক। আমরা চাইনা আমাদের দ্বিতীয় কোনো সন্তান এমন মৃত্যুর শিকার হোক। আমরা শোক সন্তপ্ত পরিবারের সঙ্গে আছি। আমরা চাই এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সত্যটা বেরিয়ে আসুক। আমরা বিচারের আগেই কাউকে দন্ডিত করতে চাইনা। মামলার তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী আমরা ইশতিয়াক রাব্বির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল ইসলাম, সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া, প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, ছাত্র উপদেষ্টা তারেক নূর, আইন বিভাগের সভাপতি হাসিবুল আলম প্রধানসহ আইন বিভাগের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
জানাজা শেষে নিহতের পরিবারের কাছে রিক্তার মরদেহ হস্তান্তর করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এসময় লাশ দাফন করতে নিহত রিক্তার গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তার স্বজন, সহপাঠী ও বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক।


প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২২ | সময়: ৪:২৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ