এমপির বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে কথা বলায় রাজশাহীতে আতঙ্কে এক পরিবার

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আয়েন উদ্দিনের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ায় জেলার মোহনপুর উপজেলার ঘাসিগ্রাম ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য শেখ হাবিবা ও তার পরিবার এখন খুন ও গুম হওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন। বুধবার রাজশাহী নগরীর একটি রেস্তোরায় সাংবাদ সম্মেলন করে তিনি তার শঙ্কার কথা প্রকাশ করেন।
শেখ হাবিবা জেলার মোহনপুর উপজেলার সিংহমার গ্রামের মাসুদ রানার স্ত্রী ও সাবেক ইউপি সদস্য ও উপজেলা কৃষকলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, একজন সাবেক জনপ্রতিনিধি হিসাবে মানুষের বিভিন্ন বিপদে সহায়তার সুবাদে গত ১৯ জুলাই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তার এলাকার নজরুলের মেয়ের দুই বছরের শিশুকে উদ্ধারের জন্য তিনি মোহনপুর থানায় যান। থানার ওসি তৌহিদুল ও এএসআই সোলায়মানের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে এএসআই সোলায়মান বাচ্চা উদ্ধারে অসম্মতি জানায় এবং বলে তোমার কাজ করতে এমপি স্যারের নিষেধ আছে।
হাবিবা বারবার অনুরোধ করে বলে আপনারা অন্যায় করছেন, আমি কিন্তু বিষয়টি সাংবাদিকদের জানাবো তখন পুলিশ ক্ষিপ্ত হয় এবং বলে বিষয়টি এমপির কাছে জানতে হবে বলে জানিয়ে ওসি দুই তিন জায়গায় মোবাইলে কথা বলেন।
কথা বলার ভঙ্গিমায় মনে হয় স্থানীয় এমপি ও তাঁর লোকজনের সঙ্গে কথা বলছেন ওসি। কিছুক্ষণ পর এমপির বন্ধু উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ইকবাল হোসেন থানায় এসে বলে, এই হাবিবা এমপির বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে কথা বলেছে। তাকে উচিৎ শিক্ষা দেন। এসময় হাবিবাকে গালমন্দ ও হুমকি ধামকি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুইজন মহিলা কনস্টেবল হাবিবাকে চড়-থাপ্পড় মারে এবং ওই দিনের ডিউটি অফিসার লতিফাসহ কয়েকজনে হাবিবাকে ওসির রুম থেকে টেনে হেঁচড়ে পাশের রুমে নিয়ে গিয়ে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটায়। গণমাধ্যমে এমপির বিরুদ্ধে কথা না বলতে হুশিয়ারি দেয়। ওইদিন তাকে রাতভর থানায় আটকিয়ে রাখাও হয়।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, পরদিন সকাল আনুমানিক ১১ টার দিকে এমপির পিএস একরামুল হক বিজয় এমপির ঘনিষ্ঠ লোক হিসেবে পরিচিত ডলি বেগমকে নিয়ে থানায় এসে উচিৎ শিক্ষা দেওয়ার হুমকি দেয়। এরপর ডলি বেগমকে বাদী করে একটি ও একজন এসআইকে বাদী করে আরেকটি মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেল হাজতে প্রেরন করে।
হাবিবা সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেন, গত ২৩ মার্চ একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে ‘এমপি হয়ে হঠাৎ ধনী’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। যেখানে হাবিবা এমপির বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়। ওই বক্তব্য দেওয়ার কারণে এমপির নির্দেশে তাকে পুলিশ দিয়ে এই অমানবিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে।
হাবিবা তাকে নির্যাতনে জড়িত এমপিসহ সকলের বিচার দাবি এবং এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন। তিনি বলেন, এমপি আয়েন ও তার লোকজনের অত্যাচারে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে হাবিবার মা ওই ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য মিনা বেগম, স্বামী মাসুদ রানা ও এক শিশু কন্যা উপস্থিত ছিলেন।
হাবিবার মা বলেন, আমার এলাকায় থাকতে পারছি না। বিভিন্ন মাধ্যমে গুম হওয়ার ভয়ভীতি আসছে। সাংবাদিকদের এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মোহনপুর থানার ওসি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, হাবিবা যেসব অভিযোগ করছেন তার পুরোটাই মিথ্যা । এগুলো বলতে হয়, তাই পুলিশ ও এমপির বিরুদ্ধে বলছে। ওসি বলেন, আগে হাবিবার বিরুদ্ধে দেড় লাখ টাকা আত্নসাতের অভিযোগ রয়েছে। সেই মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন ফোন রিসিভ করেন নি।