বোয়ালিয়া ভূমি অফিসে মিস কেসের সমাধান পেতে হয়রানির অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী ভূমি অফিসে মিস কেসের সমাধা পেতে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। আবার জাল দলিল থেকে রেহাই পেতেও অপেক্ষার শেষ থাকে না। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট ও জাল দলিলকারিদের হস্তক্ষেপে একই দিনে সদর সাব রেজিষ্ট্রি অফিস রাজশাহীতে ১৪ হাজার ৭৫৯টি দলিল সম্পন্ন হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। ভূমি অফিসে মিস কেস করেও ভূক্তভোগিরা সমাধান পাচ্ছেন না। প্রেক্ষিতে জমির প্রকৃত মালিকরা অনেকটা অসহায় অবস্থায় পড়েছেন। অন্যদিকে শাস্তি ও সমাধান না হওয়ায় জাল দলিলকারিরা উৎসাহিত হচ্ছেন।
জানা গেছে, মৌজা শিরোইল, জে.এল. নং-১৩৪, আর, এস. খতিয়ান-১১৭২, দাগ নং-৪২২৪, পরিমাণ- ১৬৪৭ একর, মালিক তাহেরা খাতুন, স্বামীঃ আব্দুস সালাম। তাহেরা খাতুনের মৃত্যুর পর তাঁর তিন ছেলে তাহেরুল ইসলাম, মফিদুল ইসলাম ও নাসিমুল ইসলাম, পিতাঃ আব্দুস সালাম ওয়ারিশ সূত্রে ২০১৫ সালের ২৬ মে খারিজ প্রাপ্ত হন। যার প্রস্তাবিত খতিয়ান-৬১১৫, হোল্ডিং-৩৩৬৫, এবং ১৪৩০ বাংলা সন পর্যন্ত খাজনা পরিশোধ আছে। একটি জালিয়াতচক্র ওয়ারিশদের নামে খারিজ বাতিলের মিস কেস করেন যার নম্বর-১১৫/২০২০-২০২১ তে। সেখানে বাদী আব্দুস সালাম, পিতাঃ মোঃ সাজ্জাদ হোসেন দিং, বিবাদী তাহেরুল ইসলাম দিং।
জানা যায়, জালিয়াতচক্র জাল দলিল তৈরি করেন যার দলিল নং- ২৫৫৩, ১৯৮৪ সালের ২ অক্টোবর। দলিল দাতা বিবাদী তাহেরুল ইসলাম দিং এর মাতা তাহেরা খাতুন। গ্রহিতা জালিয়াত ভূমিদস্যু মিস কেস ১১৫/২০২০-২০২১ এর বাদী আব্দুস সালাম দিং। পরবর্তীতে এই দলিলের নকল তোলার জন্য সদর সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে আবেদন করেন। মৌখিকভাবে জানানো হয়, ভলিয়ম বই ত্রুটিপূর্ণ থাকায় নকল কপি দেয়া যাবেনা।
পরে ইনডেক্স (সূচিপত্র) তুলে দেখা যায় জাল দলিল-২৫৫৩ তে মৌজা শিরোইল পৃষ্ঠা-১৪৩-১৪৫, সূচিপত্রে মৌজা মুসরইল, পৃষ্টা-১৩৮ থেকে ১৪০ মিল নাই। ভূমি অফিসে যে নকল কপি দাখিল করিয়াছেন সেটিও জাল। রেকর্ড রুমে যিনি কপি নকল করিয়াছেন তাঁর নাম মিতা দলিলে লেখা আছে। কিন্তু উল্লেখিত তারিখের পূর্বেই তিনি অবসরে গেছেন। হাতের লেখাটিও মিতার না। এমনকি রেকর্ড রুমের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার স্বাক্ষরটিও জাল।
এছাড়াও একই দিনে আরেকটি দলিল জাল করে তারা। যার নম্বর-১৭৩১২, ১৯৮৪ সালের ২ অক্টোবর, দলিল দাতা হোসনে আরা, গ্রহিতা জালিয়াতি চক্র আব্দুস সালাম দিং, পিতাঃ সাজ্জাদ হোসেন। এই দুই দলিলই রাজশাহী সদর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে একই দিনে একই তারিখে রেজিষ্ট্রি হয়। একটির নম্বর- ২৫৫৩, ১৯৮৪ সালের ২ অক্টোবর, আরেকটির নম্বর-১৭৩১২, ১৯৮৪ সালের ২ অক্টোবর। ওই দুই দলিলের নম্বরের যে ব্যবধান তা চোখে পড়ার মতো। একদিনে সদর সাব রেজিষ্ট্রি অফিস রাজশাহীতে ১৪ হাজার ৭৫৯টি দলিল রেজিষ্ট্রি হয়। যা কর্মকর্তরাতো বটেই, ভারসাম্যহীন মানুষেরও বিশ্বাসের অযোগ্য।
এ ব্যাপারে যুগ্ম জেল জজ আদালতে মুকদমা নং- ০২/২০২৩। বাদী তাহেরুল ইসলাম দিং বিবাদী আব্দুস সালাম দিং চলমান।
প্রকাশ থাকে যে হোসনে আরা ১৭৩১২ নম্বর দলিলে ০২/১০/১৯৮৪ ইং, ২৫৫৩, তাং ০২/১০/১৯৮৪ এর দলিলের গ্রহিতা আব্দুস সালাম, পিতাঃ সাজ্জাদ হোসেন দিং এর নিকট বিক্রয় করেন। আবার ১৯৮৫ সনে হোসনে আরা ৯১৪৩/৮৫ নং দলিলে তাহেরা খাতুনের স্বামী আব্দুস সালাম, পিতাঃ আব্দুল গফুর এর নিকট বিক্রয় করেন এবং খারিজ খাজনা চালু থাকা অবস্থায় ছেলেদের নামে খারিজ হয় এবং খাজনা পরিশোধ আছে। একবার ১৯৮৪ সনে বিক্রয় করেন আবার ১৯৮৫ সনে বিক্রয় করেন।
ভুক্তভোগিরা ২৫৫৩ আর ১৭৩১২ দলিল দুইটির যোগসূত্র থাকায় তদন্তের স্বার্থে দুটোকেই আমলে নেওয়ার অনুরোধ করেছে এবং সমস্ত বিষয়াটি সঠিকভাবে তদন্ত করে এই জালিয়াতি চক্রের হাত থেকে পরিত্রাণ এর ব্যবস্থা গ্রহণে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন।
এব্যাপারে সদর দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব মহিদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনের পরে দেশের কোন রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে একইদিনে ১৪ হাজারতো দুরের কথা এক হাজার দলিল সম্পন্ন করাও সম্ভব নয়। আমাদের এই অফিসে ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৯০ টি দলিল সম্পন্ন হয়েছে। প্রেক্ষিতে বলা যায়, বিষয়টি গুরুত্বের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ প্রয়োজন।
বোয়ালিয়া সহকারি কমিশনার (ভূমি) শাহীন মিয়া জানান, ‘একদিকে আদালতে মামলা রয়েছে এবং অন্যদিকে এই দপ্তরের আবেদন হয়েছে। এই দপ্তরের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সোমবার (১২ ফের্রুয়ারী) উভয় পক্ষের শুনানী হয়েছে। অধিকতর নির্ভুলতার জন্য আবারো শুনানীর দিন ধার্য হয়েছে। অর্থাৎ বিষয়টি এখনো চলমান রয়েছে’।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৪ | সময়: ৭:১১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ