সর্বশেষ সংবাদ :

রাজশাহীতে জমে উঠেছে পশুর হাট 

এনায়েত করিম

আসন্ন ঈদুল আজহা তথা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে রাজশাহীতে জমে উঠেছে পশুর হাট। উত্তরবঙ্গের বৃহত্তর সিটি হাটসহ রাজশাহীর বিভিন্ন পশুর হাটে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু আসতে শুরু করেছে। বুধবার সাপ্তাহিক হাট হওয়ায় দুপুরের আগেই কোরবানির পশু দিয়ে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় সিটি হাট। এছাড়া ঈদ সন্নিকটে হওয়ায় রাজশাহীর অন্যান্য হাটগুলোতেও গরু-ছাগলের আমদানি হয়েছে।

রাজশাহীর পশুর হাটগুলো ঘিরে নিরাপত্তাব্যবস্থা, নির্বিঘ্নে যাতায়াত, জালনোট শনাক্তকরণ মেশিনসহ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট বাজার কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে রাজশাহীর সিটি পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, হাঁক-ডাকে জমে উঠেছে হাট প্রাঙ্গণ। সকাল থেকেই হাটে প্রচুর গরু-ছাগলের সরবরাহ হ”েছ। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুরুতে ক্রেতারা হাটে এসে পশুর দামাদামি করে না কিনেই ফিরে গেছেন বেশি। ঈদ কাছাকাছি চলে আসায় বিক্রি বেড়েছে। বাইরের বড় বড় ব্যবসায়ীরা না আসায় স্থানীয়রাই পশু কিনছেন বেশি। কিন্তু পশুর দাম জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে বলে অভিযোগ করছেন অনেকেই। এছাড়া বাজারে নানা আকারের গরু থাকলেও মাঝারি গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি বলে জানান বিক্রেতারা।

নওগাঁ থেকে চারটি গরু নিয়ে সিটি হাটে আসা মোজাফ্ফর আলী বলেন, মাঝারি আকারের তিনটি গরুই ভালো দামে বিক্রি হয়ে গেছে। বড় গরুটি তুলনামূলক দাম কম বলায় এখনও বিক্রি হয়নি।

অন্য এক বিক্রেতা শমশের আলী রাজশাহীর পবা থেকে দুইটি গরু নিয়ে হাটে আসেন। তিনি বলেন, মাঝারি আকারের গরুটির প্রত্যাশিত দাম পেয়ে বিক্রি করে দিয়েছি। তবে বড় গরুটা এখনও বিক্রি করতে পারিনি। হাতেগোনা কিছু মানুষ বড় গরু কিনছেন। মানুষ এসে দামাদামি করছেন ঠিকই কিন্তু মাঝারি গরু।

এদিকে, এবার পশুর দাম অনেক বেশি বলে অভিযোগ করছেন ক্রেতারা। রাজশাহীর উপশহর নিউমার্কেট এলাকার বাসিন্দা বিপুল হোসেন বলেন, দাম কমবে এই আশায় গত কয়েকদিন ধরে হাটে হাটে ঘুরলেও পশু কিনিনি। তবে দাম আরও বেড়ে যাচ্ছে। তাই সাধ্যের মধ্যে একটি ছোট গরু কিনলাম। শুধু বিপুল নয়, অধিকাংশ ক্রেতাই এমন অভিযোগ করছেন।

অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে মাহাবুর নামে এক গরু খামারি জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুর দাম ও উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় গতবারের চেয়ে এবার গরুর দাম একটু বেশি।

রাজশাহী সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু জানান, ঈদের আগে বুধবার শেষ সাপ্তাহিক হাট হওয়ায় পশুর আমদানি অনেক। তবে বন্যাসহ নানা সংকটের কারণে বড় বড় ব্যবসায়ীরা আসেননি। ফলে স্থানীয় পর্যায়ের ক্রেতাই শুধু পশু কিনছেন। এতে বেচাবিক্রি কম, তবে দামটা অত্যাধিক বেশি। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এ হাটে পশু বেচাবিক্রি হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, অসুস্থ ও অস্বাস্থ্যকর পন্থায় মোটাতাজা করা গরু বিক্রি রোধেও তৎপরতা চালাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন জানান, আগে অসাধু খামারিরা ওষুধ সেবন করিয়ে অথবা ইনজেকশন দিয়ে গরুকে মোটাতাজা করলেও এখন সেই পদ্ধতি আর নেই। এ ছাড়া হরমোন প্রয়োগ থেকেও তারা ফিরে এসেছেন। খামারিরা বর্তমানে সঠিক নির্দেশনা পেয়ে প্রাকৃতিকভাবেই গরু হৃষ্টপুষ্ট করছেন। এতে অল্প খরচে বেশি লাভবান হচ্ছে তারা। তবুও কেউ যাতে অসুস্থ ও ক্ষতিকর গরু বিক্রি করতে না পারে সেজন্য প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পক্ষ থেকে মেডিকেল টিম গঠনসহ নানা তৎপরতা চালানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় এবার কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে ২৭ লাখ ২৮ হাজার ৪৬০টি। এরমধ্যে রাজশাহী জেলায় কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত রয়েছে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৮৫২টি। ১৬ হাজার ৭৯ জন খামারির কাছে আছে এক লাখ ২১ হাজার ৩৭২টি গরু, দুই লাখ ৩৩ হাজার ২৩৫টি ছাগল, ৩৮ হাজার ২৪৫ টি ভেড়া ও তিন হাজার ২১১টি মহিষ। জেলায় এবার কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা তিন লাখ ৮২ হাজার ১১৮টি। চাহিদার চেয়ে প্রায় ১০ হাজার পশু বেশি আছে রাজশাহী জেলায়।

সানশাইন / শামি


প্রকাশিত: জুলাই ৬, ২০২২ | সময়: ৯:৫৩ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine