শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে এগিয়ে গেল ভারত

স্পোর্টস ডেস্ক: দারুণ সব শটের পসরা মেলে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেললেন ইশান কিষান। সঙ্গে শ্রেয়াস আইয়ারের শেষের তাণ্ডবে ভারত পেল বড় পুঁজি। পরে তাদের বোলারদের সামনে মুখ থুবড়ে পড়ল শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং। অনায়াস জয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল রোহিত শর্মার দল।লক্ষ্ণৌতে বৃহস্পতিবার তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ভারতের জয় ৬২ রানে।
স্রেফ ২ উইকেট হারিয়ে স্বাগতিকরা তোলে ১৯৯ রান। রোহিতের সঙ্গে শতরানের উদ্বোধনী জুটি গড়া কিষান ৫৬ বলে ১০ চার ও ৩ ছক্কায় খেলেন ৮৯ রানের ইনিংস। অধিনায়কের ব্যাট থেকে আসে ৪৪ রান। মাত্র ২৮ বলে অপরাজিত ৫৭ রান করেন শ্রেয়াস।
রান তাড়ায় ৬০ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে অনেকটা ছিটকে যাওয়া শ্রীলঙ্কার জন্য স্বস্তির যে তারা অলআউট হয়নি! পরে আর একটি উইকেট হারিয়ে সফরকারীরা করতে পারে ১৩৭ রান। শুরুতে জীবন পেয়ে সর্বোচ্চ ৫৩ রান করেন চারিথ আসালাঙ্কা।
দুই দলই পায়নি গুরুত্বপূর্ণ কয়েক জন খেলোয়াড়কে। ভারত পুরো সিরিজে বিশ্রাম দিয়েছে বিরাট কোহলি ও রিশাভ পান্তকে, চোট নিয়ে ছিটকে গেছেন পেসার দিপক চাহার ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের সেরা খেলোয়াড় সূর্যকুমার যাদব। কোভিডে ভানিন্দু হাসারাঙ্গা, চোটে কুসল মেন্ডিস ও মাহিশ থিকশানাকে পায়নি শ্রীলঙ্কা।
ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে সবশেষ ম্যাচের একাদশে ছয়টি পরিবর্তন আনা ভারত টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে কিষানের ব্যাটে পায় উড়ন্ত সূচনা। বাঁহাতি এই কিপার-ব্যাটসম্যান তৃতীয় ওভারে চামিরা করুনারত্নের টানা তিন বলে মারেন তিনটি চার। পরের ওভারে পরপর চার-ছক্কায় ওড়ান লাহিরু কুমারাকে। আরেকটি ছক্কা মারেন করুনারত্নের শর্ট বলে স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে।
তাতে পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ভারত তুলে ফেলে ৫৮ রান। ততক্ষণ কিষানের অন্য পাশে দর্শক হয়ে থাকা রোহিতও পরে হাত খোলেন। করুনারত্নেকে চার মারার পর স্লগ সুইপে ছক্কা হাঁকান জেফ্রি ভ্যান্ডারসের ওভারে। একই সঙ্গে মার্টিন গাপটিলকে ছাড়িয়ে টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড নিজের করে নেন তিনি।
দাপট ধরে রেখে কিষান তার দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নেন ৩০ বলে। একাদশ ওভারে ভারতের রান স্পর্শ করে একশ। পরের ওভারে রোহিতের বিদায়ে ভাঙে ১১১ রানের উদ্বোধনী জুটি। লাহিরু কুমারার স্লোয়ারে বোল্ড হওয়া ডানহাতি ব্যাটসম্যান ৩২ বলে ২ চার ও একটি ছক্কায় করেন ৪৪ রান। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১২৩ ম্যাচের ১১৫ ইনিংসে রোহিতের রান এখন তিন হাজার ৩০৭। তিন হাজার ২৯৯ রান নিয়ে দুইয়ে মার্টিন গাপটিল।
সঙ্গীকে হারানোর পরও এগিয়ে যান কিষান। কুমারার পরপর তিন বলে একটি ছক্কা ও দুটি চার মেরে জাগান সেঞ্চুরির সম্ভাবনা। কিন্তু সেটিকে পূর্ণতা পেতে দেননি লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকা। তার শর্ট বল পুল করার চেষ্টায় ক্যাচ দিয়ে কিষান বিদায় নেন সপ্তদশ ওভারে। আগের সেরা ৫৬ ছাড়িয়ে এবার করলেন ৮৯।
শ্রেয়াস শুরুতে সময় নেন কিছুটা। প্রথম ১০ বলে করেন ১১ রান। পরে ঝড় তোলেন তিনি, বিশেষ করে শেষ দুই ওভারে। শেষের আগের ওভারে করুনারত্নেকে লং অন দিয়ে ছক্কায় ওড়ানোর পর চার মারেন দুটি। শেষ ওভারে চামিরাকে ছক্কা-চারের পথে তিনি ফিফটি পূর্ণ করেন স্রেফ ২৫ বলে। ভারতের রানও পৌঁছে যায় দুইশর কাছে। ভেঙ্কাটেশ আইয়ারকে রেখে চার নম্বরে পাঠানো হয়েছিল চোট কাটিয়ে ফেরা রবীন্দ্র জাদেজাকে। ৪ বল খেলে ৩ রানে অপরাজিত থাকেন বাঁহাতি এই স্পিনিং অলরাউন্ডার।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় শ্রীলঙ্কা ধাক্কা খায় শুরুতেই। ইনিংসের প্রথম বলেই পাথুম নিসানকাকে বোল্ড করে দেন ভুবনেশ্বর কুমার। এই পেসারের পরের ওভারে ক্যাচ তুলে জীবন পেয়েও সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি কামিল মিশারা। রোহিতকে মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তার ১৩ রানের ইনিংস। তিন নম্বরে নেমে জানিথ লিয়ানাগে ১১ রান করতে খেলেন ১৭ বল। দিনেশ চান্দিমাল একটি ছক্কা মেরেই স্টাম্পড হয়ে যান জাদেজার বলে। যুজবেন্দ্র চেহেলকে রিভার্স সুইপ করে সহজ ক্যাচ দেন অধিনায়ক শানাকা। একাদশ ওভারে ৬০ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।
উইকেটের সংখ্যাটা আরও বাড়তেই পারত। চেহেলের প্রথম ওভারে ক্যাচ দিয়ে জীবন পান আসালাঙ্কা। তখন তার রান ছিল ৬। শেষ পর্যন্ত তিনিই দলের সর্বোচ্চ স্কোরার। সপ্তম উইকেটে করুনারত্নের সঙ্গে ৩৭ ও অষ্টম উইকেটে চামিরার সঙ্গে ৪০ রানের জুটিতে দলকে অল্পতে অলআউট হওয়া থেকে রক্ষা করেন আসালাঙ্কা। ৪৭ বলে ৫ চারে সাজানো তার অপরাজিত ৫৩ রানের ইনিংস। সঙ্গে করুনারত্নের ১৪ বলে ২১ ও চামিরার ১৪ বলে অপরাজিত ২৪ রানে পরাজয়ের ব্যবধানই কমে শুধু।
ভারতের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন ভুবনেশ্বর ও ভেঙ্কাটেশ। দুই স্পিনার চেহেল ও জাদেজার প্রাপ্তি একটি করে। দারুণ ইনিংসটির জন্য ম্যাচের সেরা কিষান।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২২ | সময়: ৩:৫৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ