বড়াইগ্রামে পানি খেতে যাওয়ায় শিক্ষার্থীকে পেটালো দুই শিক্ষক

বড়াইগ্রাম প্রতিনিধি: নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার রাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্লাশ রুম থেকে বের হয়ে টিউবওয়েলে পানি খেতে যাওয়ায় দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এক শিক্ষার্থীকে মারপিটের অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় কামরুল হাসান কমল (৪২) ও মাসুদ রানা (৩৫) নামে ওই বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের নামে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীর বাবা কালাম হোসেন।
শিক্ষক কামরুল হাসান কমল উপজেলার গোপালপুর গ্রামের কালাম মাস্টারের ছেলে এবং মাসুদ রানা একই উপজেলার পরাণপুর গ্রামের বাদশার ছেলে। ওই বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ শ্রেণী পর্যন্ত দুই শিফটে দুই হাজার ১০০ জন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সিদ্দিক এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, গত মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১ টার সময় ওই বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। বুধবার সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীর বাবা বাদি হয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।
এ ব্যাপারে আইনি প্রক্রিয়া শেষে আদালতের নির্দেশনা চাওয়া হবে। সেখান থেকে নির্দেশনা পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। তবে প্রাথমিক তদন্তে বিষয়টি তুচ্ছ ঘটনা বলেই মনে হয়েছে। তবুও ব্যাপারটি আন্তরিক ভাবেই দেখভাল করছে পুলিশ।
থানায় লিখিত অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, উপজেলার রামেশ্বরপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কালাম হোসেনের ছেলে শাকিল হোসেন (১৩) রাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্র। গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে শাকিল ক্লাশ রুমের বাইরে টিউবওয়েলে পানি খেতে যায়।
পানি খেয়ে ক্লাশ রুমে প্রবেশের পর ওই দুই শিক্ষক অন্যান্য শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে শাকিলকে প্লাষ্টিকের পাইপ দিয়ে পেটায়। এতে তার শরীরে কালশিরা দাগ পড়ে। ছুটির পর বিদ্যালয় থেকে ফিরে বিষয়টি তার বাবাকে খুলে বলে। পরে শিক্ষার্থীর বাবা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে স্থানীয় ভাবে আপোষ মিমাংসায় ব্যর্থ হয়ে শিক্ষার্থীর পিতা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
শিক্ষার্থীর পিতা কালাম হোসেন মোবাইলে জানান, বিদ্যালয়ের ভিতরে ক্লাশরুম থেকে টিউবওয়েলে পানি খেতে যাওয়ায় তার ছেলেকে ওই দুই শিক্ষক বেদম মারপিট করেছে। একজন ধরে রেখেছে, অন্যজন প্লাষ্টিকের পাইপ দিয়ে পিটিয়েছে। এতে তার শরীরে কালশিরা দাগ পড়ে যায়। এটা কোন ভাবেই কাম্য নয়।
অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মুখে তিনি শুনেছেন, কারণে অকারণে ওই শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মারপিট করে থাকে। তিনি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচার চান।
এ ব্যাপারে জানতে ওই দুই শিক্ষকের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করে তাদের পাওয়া যায়নি।
প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম স্বপন জানান, ক্লাশ ক্যাপ্টেনের অনুমতি ছাড়াই বাইরে বের হয় শাকিল। তাকে ওই সময় বের না হয়ে পরে বের হতে বললে ক্যাপ্টেনকে ধাক্কা দিয়ে বিদ্যালয়ের বাইরে যায় সে। এই ঘটনায় ক্যাপ্টেন তাৎক্ষনিক ভাবে শিক্ষককে বিষয়টি জানালে ওই শিক্ষার্থী উল্টো ক্যাপ্টেনকে হুমকি দেয়। এ কারণে দুই শিক্ষক মিলে শাকিলকে শাসন করেন এবং তাকে দুই একটি বেত্রাঘাত করেন।
নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, ওই বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এক শিক্ষার্থীকে মারপিটের অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত করতে বড়াইগ্রাম থানার পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।


প্রকাশিত: জুন ৩, ২০২২ | সময়: ৫:২১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ