সর্বশেষ সংবাদ :

সেই শহীদ মিনারে গাফফার চৌধুরীকে শেষ বিদায়

সানশাইন ডেস্ক: যার লেখা গান কণ্ঠে ধরে প্রভাত ফেরির মিছিল ছোটে শহীদ মিনারে, সেই স্থানেই শেষ বিদায় জানানো হল আবদুল গাফফার চৌধুরীকে। শনিবার দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানোর পর সর্ব সাধারণের শ্রদ্ধায় সিক্ত হন প্রয়াত এই সাংবাদিক- সাহিত্যিক।
একুশের গানের রচয়িতা গাফফার চৌধুরী ৮৮ বছর বয়সে কয়েক মাস চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৯ মে যুক্তরাজ্যে মারা যান। শনিবার সকালে লন্ডন থেকে বিমানে মরদেহ ঢাকায় পৌঁছনোর পর সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় শহীদ মিনারে। দুপুর ১টায় গাফফার চৌধুরীর কফিন পৌঁছনোর পর প্রথমে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়া হয়। এসময় তার স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এরপর গাফফার চৌধুরী রচিত সেই অমর গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গেয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। শ্রদ্ধা নিবেদন পর্বের শুরুতে রাষ্ট্রপতির মো. আবদুল হামিদের পক্ষে তার সামরিক মেজর জেনারেল এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কবির আহমেদ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী শ্রদ্ধা জানান।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রামের অনেক ইতিহাস তিনি জাতির কাছে তুলে ধরেছিলেন। অনেক দিক-নির্দেশনামূলক লেখাও আমরা তার কাছ থেকে পেয়েছি। তার এই শূন্যতা সহজে পূরণ হবার নয়। “যতদিন অমর একুশের চেতনা বাঙালির মনে জাগ্রত থাকবে, ততদিন ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটির মধ্য দিয়ে জাতি চিরকাল আবদুল গাফফার চৌধুরীকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।”
আবদুল গাফফার চৌধুরীর কফিনে আওয়ামী লীগের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলের শীর্ষ নেতারা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের সংস্কৃতির সমকালের সবচেয়ে বড় বটবৃক্ষটির পতন ঘটল। তিনি মরে গেলেও একুশের আমর গানে তিনি বেঁচে থাকবেন।
“আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা শেখ রেহানার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। দুঃসময়ে, সংকটে পরামর্শ দিতেন। আজকে এই চলমান বিশ্বের সংকটে জাতিকে পরামর্শ দেওয়ার, আমরা যারা ক্ষমতার মঞ্চে আছি, আমাদেরকে পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে তার শূন্যতা অনুভব করব।” বেলা ৩ টা পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ব্যক্তিবর্গসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আবদুল গাফফার চৌধুরীর কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।
আবদুল গাফফার চৌধুরীর ছেলে অনুপম আহমেদ রেজা চৌধুরী বলেন, “আমার আব্বা বাংলাদেশকে খুবই ভালোবাসতেন। তিনিও জানতেন বাংলাদেশের মানুষ তাকে অনেক ভালোবাসেন। আব্বা সব সময় বলতেন এই দেশেই যাতে তাকে মাটি দেওয়া হয়। সেজন্য তাকে এখানে নিয়ে আসছি। “আজকে এখানে তাকে শ্রদ্ধা অনেক মানুষ এসেছেন। আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার বাবার প্রতি যে শ্রদ্ধা দেখিয়েছেন, সেজন্য আমি উনার কাছে চির কৃতজ্ঞ।”
শহীদ মিনার থেকে কফিন নেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে, সেখানে জানাজার পর মরদেহ নেওয়া হয় জাতীয় প্রেস ক্লাবে। এরপর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে এই ভাষাসৈনিক-মুক্তিসংগ্রামীকে দাফনের কথা রয়েছে। সকাল ১১টার দিকে মরদেহ দেশে পৌঁছলে বিমানবন্দরে উপস্থিত থেকে সরকারের পক্ষ থেকে তা গ্রহণ করেন মন্ত্রিসভার জ্যেষ্ঠ সদস্য, মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজম্মেল হক।
উড়োজাহাজ থেকে মরদেহ নামানোর পর জাতীয় পতাকায় ঢেকে দেওয়া হয়। পরে সেখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান মন্ত্রীরা। বিমানবন্দরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়মন্ত্রী মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের বলেন, “আবদুল গাফফার চৌধুরী ছিলেন ইতিহাসের জলন্ত সাক্ষী। ইতিহাসের টার্নিং পয়েন্ট তিনি জাতির সামনে তুলে ধরেছেন আজীবন। বাংলার মানুষ তার কাছ থেকে জানার জন্য অপেক্ষা করতেন।”
বাংলাদেশের বিমানের একই ফ্লাইটে গাফফার চৌধুরীর পরিবারের সদস্যরাও দেশে এসেছেন। একাত্তরের মুজিবনগর সরকারের মুখপত্র সাপ্তাহিক জয়বাংলার নির্বাহী সম্পাদক গাফফার চৌধুরী দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান স্বাধীনতা পদকে ভূষিত ছিলেন। পেশায় সাংবাদিক গাফফার চৌধুরী কলামনিস্ট হিসেবে ছিলেন সুপরিচিত। গল্প-কবিতা-উপন্যাসেও তিনি রেখেছেন প্রতিভার স্বাক্ষর।


প্রকাশিত: মে ২৯, ২০২২ | সময়: ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ