সর্বশেষ সংবাদ :

অপহৃত দুই কন্যা সন্তানকে ফিরে পেতে এক মায়ের আকুতি

স্টাফ রিপোর্টার: স্বামীর সাথে তালাক হয়ে গেছে, নেশাগ্রস্ত স্বামী ও শশুর-শাশুড়ির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য দুই কন্যা সন্তানকে নিজের কাছে রাখতে চেয়ে আকুতি জানিয়েছে এক অসহায় মা। অপহৃত দুই কন্যা শিশুদের ফিরে পেতে বিজ্ঞ মূখ্য মহানগর হাকিমের আমলী আদালত ‘খুলনা থানা’ খুলনায় মামলা করেছেন মা আফরা তাসফী।
এই মামলায়- ঘুরতে নেয়ার নাম করে নাতনিকে অপহরণ করার অভিযোগ উঠেছে দাদা-দাদীর বিরুদ্ধে। এই দুই শিশু সন্তানকে ফিরে পেতে রাজশাহীতে এসেছেন মা। পুলিশের চেষ্টাতেও কন্যা শিশুদের সন্ধান পাচ্ছেন না বলে জানান মা আফরা তাসফী। মা-বাবার বিচ্ছেদকে কেন্দ্র করে এই কন্যা শিশুদের অপহরণ করে মায়ের থেকে আলাদা করেছেন শিশুর দাদা-দাদী।
মেয়েদের ফিরে পেতে আকুতি জানিয়ে মা আফরা তাসফীর বলেন, আমি এক নির্যাতিত হতভাগা মা। মিথ্যা মামলা-হামলায় আমি জর্জরিত। আমি কোন টাকা পয়সা চাই না। আমার মেয়েদের আমার বুকে পেতে চাই।
প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে আফরা তাসফীর বলেন, আমি অপহৃত কন্যা শিশুদের ফিরে পেতে বিজ্ঞ মূখ্য মহানগর হাকিমের আমলী আদালত ‘খুলনা থানা’ খুলনায় মামলা করেছি। এসবের বিচার চাই না। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হাতজোড় করছি, আমার সন্তানকে ভিক্ষা চাই। আমি এক অসহায় মা। তিনি যেন আমাকে ন্যায়বিচার পেতে এবং আমার কন্যা শিশুদের ফিরে পেতে সহায়তা করেন।
মামলার বিতরণ থেকে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৭ জুন রেজিস্ট্রি কাবিন মূলে বিবাহ হয় রাজশাহী নগরীর আরএমপি রাজপাড়া থানা এলাকার কেশবপুরের আব্দুল নোমানের ছেলে আরএম রুম্মান পিয়াসের সাথে খুলনা সদর এলাকার তারিকুল ইসলামের মেয়ে আফরা তাসফীর। বিবাহের পর থেকে বিভিন্ন অজুহাত তুলে অকারনে স্ত্রী আফরা তাসফীকে মারপিটসহ মানসিক যন্ত্রনা দিতে থাকে মাদকাসক্ত স্বামী রুম্মান পিয়াস। এরই মাঝে তাদের সংসারে দুই মেয়ে হানিন বিনতে রাশেদ (৬) ও হানসা বিনতে রাশেদ (৩)। এরপরেও স্ত্রী আফরা তাসফীরের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চলতে থাকে।
প্রায় দিনই নেশাগ্রস্ত স্বামীর এমন নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর স্ত্রী তাসফীকে তালাক দেন স্বামী পিয়াস। স্ত্রীর সাথে খারাপ ব্যবহার করবে না মর্মে একই সালের ৯ ডিসেম্বর আবারো রেজিস্ট্রি কাবিন করে বিবাহ হয়। কিছুদিন যেতে না যেতেই আবারো শুরু হয় নির্যাতন। ফলে চলতি বছরের ৬ মার্চ স্ত্রী আফরা তাসফী স্বামী রুম্মানকে তালাক দিয়ে দুই শিশু সন্তান নিয়ে বাবার বাড়ী খুলনায় চলে যান।
গত ১১ এপ্রিল পবিত্র ঈদুল ফিতরের সন্ধ্যায় শিশু হানিন বিনতে রাশেদ (৬) ও হানসা বিনতে রাশেদ (৩) এর দাদা আব্দুল নোমান, দাদী রাবেয়া নোমান ও ফুপু নিশাত আনান প্রীতিলা একটি মাইক্রো গাড়ী নিয়ে খুলনায় আফরা তাসফীর বাবার বাড়ীতে যান। এদের আদর আপ্যায়নের এক পর্যায়ে শিশু হানিন বিনতে রাশেদ (৬) ও হানসা বিনতে রাশেদ (৩)কে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার আবদার করেন দাদা আব্দুল নোমান, দাদী রাবেয়া নোমান ও ফুপু নিশাত আনান। বেড়াতে নেওয়ার সময় শিশু হানিন বিনতে রাশেদ (৬) ও হানসা বিনতে রাশেদ (৩) এর নানা তারিকুল ইসলামকেও সাথে নেন। খুলনা শহরের বিভিন্ন স্থান বেড়ানো শেষে কেডিএ এভিনিউ সাত রাস্তার মোড়ে এসে তারিকুল ইসলামকে দোকান থেকে পান আনতে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেন। সহজ সরল প্রকৃতির নানা তারিকুল ইসলাম গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথেই শিশু হানিন বিনতে রাশেদ (৬) ও হানসা বিনতে রাশেদ (৩)কে নিয়েই দ্রুত গতিতে গাড়িটি স্থান ত্যাগ করে।
শিশুদের ফিরে পেতে মা আফরা তাসফী অভিযুক্তদের সাথে শত চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলে বিজ্ঞ মূখ্য মহানগর হাকিম এর আমলী আদালত ‘খুলনা থানা’ খুলনায় দাদা, দাদি ও ফুপুকে আসামী করে মামলা করেন। অভিযুক্তদের ঠিকানা রাজশাহী শহরে হওয়ায় মা আফরা তাসফী রাজশাহীতে অবস্থান করছেন।
এদিকে অভিযুক্তদের ব্যবসায়ী ঠিকানা আরএমপি শাহ মখদুম থানা এলাকার জন্য থানা পুলিশ শিশু উদ্ধারসহ আসামীদের আটকের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আরএমপি’র শাহ মখদুম থানা পুলিশ এসআই জাহিদ হাসান জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাতেও শিশু উদ্ধারে নগরীর তিনটি বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে। তবে শিশুদের উদ্ধার সম্ভব হয়নি। তাদের উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত আছে।


প্রকাশিত: মে ৯, ২০২৪ | সময়: ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ