পুণর্ভবা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়া ভেঙ্গে গেছে বাঁধ, বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

গোমস্তাপুর প্রতিনিধি

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে পুণর্ভবা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিল অঞ্চলগুলোতে পানি প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। শনিবার রাধানগর ইউনিয়নের বিভীষণের উপর অস্থায়ীভাবে নির্মাণ করা বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় সিঙ্গাবাদ পাথার এলাকায় নতুন করে আবার ঢলের পানি তীব্রবেগে প্রবেশ করছে। ফলে বিলে থাকা শত শত বিঘা জমির ধান কাটা এবং উঠা নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছে কৃষকরা।

 

কৃষকরা জানান, গত কয়েকদিন যাবত বিলে পুণর্ভবা নদীর পানি প্রবেশ করায় এবং পানির তোড়ে অস্থায়ী বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ঘাটের উপরে থাকা প্রায় অর্ধশতাধিক ধান বোঝাই ট্রাক আটকা পড়েছে। শনিবার ও রবিবার সরেজমিনে ওই এলাকা পরিদর্শন করে দেখা যায় কৃষকগণ আতঙ্কিত হয়ে নৌকাযোগে কিছু কিছু করে ধান সংগ্রহ করার চেষ্টা করছে। বাঁধ ভেঙে বিল এর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আটকে পড়া ধান পরিবহন করতে কৃষকদের খুব কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। অনতিবিলম্বে বাঁধটি সংস্কার করে বিলের সাথে সড়ক যোগাযোগের ব্যবস্থা চালু করার জোর দাবি জানান তারা।

বাধেঁর পাশে গচ্ছিত রাখা কৃষকের ধান –  প্রতিনিধি

 

উল্লেখ্য গত সপ্তাহে পূণর্ভবা নদী থেকে পানি প্রবেশ করে পার্শ্ববর্তী  বিলের সাথে সংযোগ থাকায় সেখানে বিলের পানি প্রবেশের সম্ভাবনা রয়েছে। গত সপ্তাহের প্রবাহিত পানির তোড়ে কৃষকদের কয়েক হাজার বিঘা জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কৃষকগণ খুব কষ্ট করে ধান উত্তোলন করে কিছুটা রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করছে।

 

পরিদর্শনে আরও দেখা যায় হঠাৎ করে হাওর অঞ্চলের মতো পানি প্রবেশ করায় কেটে রাখা ধান পানিতে নিমজ্জিত হতে দেখে উপস্থিত কৃষকদের মধ্যে হাহাকার পড়ে যায়। তারা জানায় এমনিতেই ধান কাটার শ্রমিকের সংকট সে কারণে সময়মতো তারা ধান উঠাতে পারেনি। তার উপর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে কাটা ধানগুলো জমি থেকে উঠানো সম্ভব হয়নি। হঠাৎ করে ঢলের পানিতে পানির উপর অস্থায়ীভাবে তৈরি করা বাঁধ এবং সংলগ্ন রাস্তাটি পানিতে সয়লাব হয়ে যাওয়ায় বোরো ধান নিয়ে চরম বিপাকে দিন পার করছে কৃষকগণ। তাদের দীর্ঘদিনের দাবি বিল কুজাইন, সিঙ্গাবাদ পাথার ও যশইল বিভীষণ খাড়ীর ঘাটে কালভাট বা সেতু নির্মাণের কোনো ব্যবস্থা না হওয়ায় ধান সংগ্রহ করতে তাদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

 

ভেঙে যাওয়া বাঁধ প্রসঙ্গে ইউপি সদস্য মাহবুবুর রহমান জানান, গত কয়েকদিন যাবত স্থানীয়ভাবে বাঁধ সংস্কারে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু পানির অব্যাহত তোড়ের কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠেনি।

 

রাধানগর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মতিউর রহমান বলেন পানির অব্যাহত বৃদ্ধির কারণে আমার ইউনিয়নে বিল কুজাইন ও সিঙ্গাবাদ বিল এলাকার কৃষকদের হাজার হাজার মণ ধান বর্তমানে পানি বন্দি অবস্থায় রয়েছে। বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে কাটা ধানগুলো পরিবহন করা যাচ্ছে না। কৃষকদের এত অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে যা আমার জীবনে আমি দেখিনি। বিষয়টি ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক মহোদয় ও উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। আমরা স্থানীয়ভাবে সমস্যাটি সমাধান করে কৃষকদের ধান উঠানোর ব্যবস্থা করতে চেষ্টা করে যাচ্ছি।

 

ওই এলাকার বাসিন্দা এবং গোমস্তাপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান নূহূ বলেন, উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় বিলের এই দুরাবস্থার কথা বারবার তুলে ধরা হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

 

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানান, বাঁধ ভাঙ্গার বিষয়টি আমাদের জানা রয়েছে। তবে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না থাকায় এ মুহূর্তে বাঁধ সংস্কার বা নির্মাণের কোন উদ্যোগ নেয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন ভালো বাখ্যা দিতে পারবেন।

 

উপজেলা নির্বাহি অফিসার আসমা খাতুন বলেন রাধানগর ইউনিয়নের নতুন করে বাঁধ ভাঙার বিষয়টি আমরা জেনেছি। সাথে সাথে বিষয়টি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের মাধ্যমে এলজিইডি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তারা খুব দ্রুত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। আমরা জেনেছি গত সপ্তাহে পানির তোড়ের কারণে নিমজ্জিত জমির সংখ্যা ছিল ৩৭০ হেক্টর। গতকাল বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় এবং পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নিমজ্জিত জমির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আশা করছি সকলে মিলে খুব দ্রুত কৃষকদের ন্যায্য দাবি বাঁধ নির্মাণ ও রাস্তা সংস্কার এর কাজ সম্পন্ন করা হবে।

সানশাইন / শামি


প্রকাশিত: মে ২২, ২০২২ | সময়: ৬:৪৪ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine