সর্বশেষ সংবাদ :

বাসন্তী সাজে সাজেনি রাবি চারুকলা

লাবু হক, রাবি : সাজ-সজ্জাহীন মুক্তমঞ্চ। মঞ্চ ঘিরে নেই বেলুন-ফেস্টুন। সামনেও নেই কোনো দর্শক। চারুকলার পূর্ব পাশটার খোলা মাঠে নেই সারিবদ্ধ হরেক রকমের পিঠার দোকান। পিঠা কিনতে ভীরও জমাচ্ছেন না কেউ। শিল্পীদের তুলির ছোঁয়ায় দর্শকদের গালে কিংবা হাতে রাঙাচ্ছে না আলপনা। বাঁজছে না ঢাক-ঢোল। এক তারায় সুরও তুলছে না কেউ। যাত্রার হুংকারের বিকট শব্দ কিংবা বাউল গানের সুরে চারুকলা প্রাঙ্গন মাতাচ্ছেন না কোনো শিল্পী। হয়নি মঙ্গল শোভাযাত্রাও। পুরো চারুকলা চত্ত্বর যেন স্তব্ধ নিঝুম। বসন্তের প্রথমদিনে ঠিক এমন দৃশ্যটিই বিরাজ করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ চত্ত্বরে। অথচ প্রতিবছরের এই দিনে চারুকলা চত্বরে আয়োজন করা হতো দুই দিনব্যাপী বসন্তবরণ ও পিঠা উৎসব।
পরপর দুবার বসন্তকে উদযাপন না করতে পারায় অনেকটাই মর্মাহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে অনেকের ছাত্রজীবনও শেষ হয়ে যাচ্ছে। এরপরে আর ছাত্রাবস্থায় তাদের বসন্ত আসবে না। বসন্ত আসবে ঠিকই কিন্তু ততোদিনে তারা হয়ে যাবেন প্রাক্তন শিক্ষার্থী।
জানতে চাইলে চারুকলা অনুষদের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আল আমিন ইসলান রওনক বলেন, আমরা এবারে বড় পরিসরে বসন্ত উদযাপন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু চলমান করোনা পরিস্থিতির কারনে তা করা সম্ভব হয়নি। পাশাপাশি আমাদের ছোট ভাই মাহমুদ হাবিব হিমেলের মর্মান্তিক মৃত্যুতেও আমরা সকলে শোকহত। যাহোক এক বসন্ত যাচ্ছে সেটা দুঃখের তবে আরেক বসন্ত তো সামনে আসছে সেটা আনন্দের। কিন্তু সামনে আমাদের ছাত্রজীবন শেষ হয়ে যাবে। তখন হয়ত চারুকলায় বসন্ত উদযাপন হবে তবে আমরা হয়ে যাবো প্রাক্তন শিক্ষার্থী।
চারুকলা অনুষদের তৃতীয় বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী সানজিদা আলম বলেন, চারুকলার উৎসব বলতেই বসন্তবরণ আর নববর্ষ উদযাপন। আর এ উৎসবের আয়োজন করতে গিয়ে আমরা কতোকাজ করি, শুধু একাধারে কাজই না, কাজের ফাঁকে ফাঁকে জমে উঠত আড্ডাও। এখন মনে হচ্ছে রঙিন চারুকলা কেমন যেন বিবর্ণ হয়ে গেছে। পূর্বের আয়োজনগুলোকে এখন শুধু স্মৃতিই মনে হয়।
বিগত বছর করোনার মাঝেও অনলাইনে বসন্তবরণের আয়োজন করেছিল রাবি চারুকলা অনুষদ। এবারে তেমন কোনো আয়োজন না করার বিষয়ে জানতে চাইলে বিগত বছরে ই-বসন্তবরণের আয়োজক জনি মাহমুদ বলেন, করোনার দীর্ঘ ছুটির ফলে এখন চারুকলার সবাই মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছে। অনেকের পরীক্ষা চলছে আবার যাদের পরীক্ষা নেই করোনার ছুটির ফলে তারা বাসায় অবস্থান করছে। তাই পর্যাপ্ত টেকনিশিয়ানের অভাবে এবারে অনলাইনে আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। এবারে সবাই ব্যক্তিগতভাবে বসন্ত উদযাপন করেছে।
জানতে চাইলে চারুকলা অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী বলেন, গতবছর বসন্ত উদযাপন করতে না পারায় এবারে বৃহৎ পরিসরে বসন্ত উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। স্পন্সর নিয়ে কথাও হয়েছিল। কিন্তু করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তা সম্ভব হয়নি। তবুও আমরা স্বল্প পরিসরে উদযাপন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সম্প্রতি চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী মাহমুদ হাবিব হিমেলের মর্মান্তিক মৃত্যুতে আমাদের সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শোকাহত। তাই আমরা এবারে বসন্তকে ঘিরে কোনো উৎসবের আয়োজন করিনি।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২ | সময়: ৬:৪৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ