সর্বশেষ সংবাদ :

বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষাও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে

সানশাইন ডেস্ক: মহামারীর কারণে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোনো শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষা ওই সংক্ষিপ্ত কারিকুলামের মধ্যে রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
২০২১ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে আলোচনা চলার কথাও বলেন তিনি। এক প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষা যে সিলেবাসে হয়েছে, আমাদের মতামত হল, ঠিক সেই সিলেবাসের উপর এই ভর্তি পরীক্ষাগুলো হওয়া যৌক্তিক এবং সেটিই সঠিক।
”কাজেই এর বাইরে আমরা মনে করি না যে, অন্য কেউ করবেন। যদি কেউ করতে চান, আমরা তাদেরকে অনুরোধ করব।” ২০২০ সালে দেশে মহামারীর প্রকোপে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষা মিলিয়ে মূল্যায়ন ফল প্রকাশ করা হয়। তার ভিত্তিতেই বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়, তবে পুরো সিলেবাসের ওপরই ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়।
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের অপেক্ষায় ২০২১ সালের পরীক্ষা হয় আট মাস পিছিয়ে ডিসেম্বরে এসে। বিশেষ পরিস্থিতিতে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে গ্রুপভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে ছয়টি পত্রে এইচএসসি পরীক্ষা হয়। সময় কমিয়ে আনা হয় দেড় ঘণ্টায়। বাংলা ও ইংরেজির মত আবশ্যিক বিষয়গুলোর পরীক্ষা এবার নেওয়া হয়নি। তার বদলে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে সেসব বিষয়ের মূল্যায়ন করে পূর্ণাঙ্গ ফলাফল তৈরি করা হয়েছে।
এবার শিক্ষার্থীরা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এইচএসসি পেরোলেও পুরো সিলেবাসেই ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার কথা ভাবছে বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, যে সিলেবাসে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় বসেছে, সে অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষা না হলে তাদের প্রতি ‘সুবিচার করা হবে না’। মেডিকেল ভর্তি সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে নেওয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ ও বিএমডিসির সঙ্গে আলোচনা হওয়ার কথা বললেও এ বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত কী, সেটা খোলাসা করেননি চিকিৎসাশাস্ত্রের ডিগ্রিধারী দীপু মনি।
গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা আয়োজকরা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে নেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুচ্ছ পদ্ধতিতে করছে, তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারাও একমত।” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ গুচ্ছ পদ্ধতির বাইরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গেও ভর্তি পরীক্ষার সিলেবাস নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কিছুটা কথা হয়েছে। তারাও এই বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত জানাবেন। এবং অন্যান্য যারা গুচ্ছ পদ্ধতিতে আসেননি, চারটি-পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় তারাও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।” রেকর্ড সংখ্যক শিক্ষার্থী পাস করলেও উচ্চশিক্ষায় ভর্তিতে আসন সংকট হবে না মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “এখান থেকে কেউ উচ্চশিক্ষায় যাবেন, অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবেন, কেউ এখনই কাজে চলে যাবেন। কেউ কারিগরি শিক্ষায় যাবেন। আমাদের একেবারেই মনে হয় না, আসন সংকট হবে।
“আমাদের যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে, সেখানে এবং যে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে এবং অন্যান্য যে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, সেগুলোতেৃ সব মিলিয়ে কিন্তু আমাদের অনেক কলেজ আছে দেশে।” প্রায় আড়াই হাজার বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি দেওয়ার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “কোথাও কোথাও অনার্স-মাস্টার্সও হয়। সেখানে তাদের ভর্তি করা যাবে। আমরা প্রতিবছরই দেখি, অনেক সিট আসলে খালি থেকে যায়। কাজেই কোনো আসন সংখ্যার সমস্যা হবে না।”
অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসন খালি থাকা আর কোথাও কোথাও অতিরিক্ত শিক্ষার্থী থাকার বিষয়েও সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বলেন, “সকল শিক্ষার ক্ষেত্রে কিন্তু আমাদের আসন সংখ্যা অনেক খালি থাকে। আমাদের একটা বড় প্রবণতা আছে, আমরা সারাক্ষণই বলি আমাদের আরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লাগবে। ”কিন্তু আমরা সার্বিকভাবে বিবেচনা করি না যে, আসলে আমাদের আসন সংখ্যা সত্যি আরও বাড়ানো প্রয়োজন কি-না।”
অনেকে মনঃক্ষুণ্ন হলেও আসন সংখ্যা ঠিক করার ক্ষেত্রে ‘শক্ত’ অবস্থান নেওয়ার কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, “আমরাতো সারাদেশে এমনভাবে (আসন সংখ্যা) বাড়িয়ে দিতে পারি না, তাহলে একেবারেই শিক্ষার্থী নাই এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকবে। এখনও শোনা যায় যে, কিছু আছে।” অতিরিক্ত শিক্ষার্থী থাকার কথা তুলে ধরে দীপু মনি বলেন, “ঢাকায় এমন কলেজ আছে, যেখানে সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়েও শিক্ষার্থী বেশি। কোথাও কোথাও খালি থাকছে, আর কোথাও কোথাও ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত শিক্ষার্থী।
”আমাদের খুব নামিদামি কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা শহরে, যেখানে শিক্ষার্থীরা গায়ে গায়ে ঠেসে বসে, সেটাওতো নিশ্চয় অভিপ্রেত নয়।” জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় হলেও শিক্ষার মান প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, নতুন কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যখনই হয়, তখন তার একটা নির্দিষ্ট মানে পৌঁছাতে ‘কিছুটা সময় লাগেই’। ”কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, আমরা যে উদ্যোগগুলো নিচ্ছি, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষকদেরও যে প্রশিক্ষণের আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি, তার মধ্য দিয়ে এই সমস্যাগুলো দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারব।”
’ভালো ফলাফলে অসন্তুষ্ট হই কেন?’ রেকর্ড সংখ্যক পাসের জন্য ‘সাবজেক্ট ম্যাপিং’ এবং সংক্ষিপ্ত সিলেবাসকে অনুঘটক হিসাবে দেখিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যেসব বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়নি, সেসব ক্ষেত্রে এসএসসি ও জেএসসির ওই বিষয়ের ফলাফল বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। “সে কারণে তাদের আগের যে নম্বর সেটি এসেছে। হয়ত কম বিষয়ের পরীক্ষা, কম সিলেবাসে পরীক্ষা, কাজেই আমাদের শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি ভালো প্রস্তুতি নিতে পেরেছে। কাজেই তারা অনেক বেশি ভালো ফলাফল করেছে।”
সমালোচকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “ভালো ফলাফলে আমরা এত অসন্তুষ্ট হই কেন? আমি আসলে এটা বুঝি না। আমরা কি চাই না, আমাদের সন্তানেরা ভালো করুক? ”এমন কি কোনো দিন আসবে না, যেদিন আমাদের কেউ অনুত্তীর্ণ থাকবে না? সবাই ভালো করবে, সবাই উত্তীর্ণ হবে। এটা কেন? এই মানসিকতা কেন?”


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২২ | সময়: ৬:৩৪ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ