আধনিক হচ্ছে শাহ মখদুমের দরগাহ

স্টাফ রিপোর্টার : হাজার বছর পূর্বে রাজশাহী অঞ্চলটির নামকরণ ছিল মহাকাল গড়। সেসময় এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ছুটে আসেন হযরত শাহ মখদুম রূপোশ (র.)। পদ্মাতীরবর্তী এলাকায় অবস্থিত তার সেই দরগাহ শরীফ রাজশাহীর গৌরব ও ঐতিহ্যের সাথে জড়িত। ইতিহাসের সাক্ষী হাজার বছরের পুরোনো এই দরগাহটি পরিদর্শনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ও বিভিন্ন ধর্মের মানুষ ছুটে আসেন। ঐতিহ্যবাহী সেই দরগাহ শরীফের পুরো এলাকাটি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন। সেজে উঠবে হযরত শাহ মখদুম রূপোশ (র.) দরগাহ শরীফ।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ২৪ কোটি ৮৭ লাখ ২৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘হযরত শাহ মখদুম রূপোশ (র.) দরগাহ শরীফের উন্নয়ন প্রকল্প’ অনুমোদিত হয়েছে। প্রকল্পটির অনুমোদন হওয়ায় বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন। এছাড়া পরিকল্পনা মন্ত্রী এম.এ মান্নান সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন রাসিক মেয়র মহোদয়।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ জানিয়েছে, ২৪ কোটি ৮৭ লাখ ২৭ হাজার টাকার শাহ মখদুম রূপোশ (র.) দরগাহ শরীফের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মসজিদ ও মাজার কমপ্লেক্স নির্মাণে স্থাপত্য নক্সা ও প্রকৌশল নক্সা প্রণয়ন ও নির্মাণ তদারকিতে পরামর্শক নিয়োগ, ৪ তলা মাজার কমপ্লেক্স-এর প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, ৪ তলা মিনারসহ মসজিদ নির্মাণ, মাজার নির্মাণ, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, প্রবেশ গেইট নির্মাণ ও ল্যান্ড স্কেপিং করা হবে।
উল্লেখ্য, ২৪ কোটি ৮৭ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সাপেক্ষে ‘হযরত শাহ মখদুম রূপোশ (র.) দরগাহ শরীফের উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দাখিল করে। গতকাল ৮ ফেব্রুয়ারি পরিকল্পনা মন্ত্রী এম.এ মান্নান প্রকল্পটির অনুমোদন দেন।
বিভিন্ন সূত্র অনুসারে, রাজশাহী নগরীর নাম ছিল মহাকাল গড়। এখানে মাহকাল দেও এর বিখ্যাত মন্দিরে নরবলি দেয়া হতো। হযরত শাহ্ মখদুম রূপোশ (রহ.) বাংলায় দেও জাতিকে ইসলামের সুমহান আদর্শে দিক্ষীত করার উদ্দেশ্যে ১২৮৯ খ্রিষ্টাব্দে রাজশাহী অঞ্চলে আগমন করেন। এসময় এই অঞ্চলে মানুষ বলী দেয়ার প্রথা প্রচলিত ছিল। তৎকালীন রাজার সাথে যুদ্ধজয়ের পর ১৩২৬ খ্রিষ্টাব্দে রাজশাহী মহানগরী বা সেকালের মহাকালগড়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এখানেই তিনি ১৩৩১ খ্রিষ্টাব্দে পরলোক গমন করেন। তাঁর মৃত্যুর পরও দরগা শরীফকে কেন্দ্র করে ইসলাম প্রচারের কাজ চলতে থাকে। তার শিষ্য ও অনুসারীগণের মধ্যে কয়েকজনের নাম পাওয়া যায়। তারা হলেন হযরত আব্বাস শাহ্ (রহ.), (মখদুম নগরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তার মাজার বিলীন হয়ে গেছে), শাহ্ করম আলী (রহ.) (পুঠিয়া, বিড়ালদহ), হযরত দিলাল বোখারী (রহ.) (আলাইপুর, বাঘা), হযরত শাহ্ সুলতান (রহ.) (সুলতানগঞ্জ, গোদাগাড়ী)।
বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, হযরত শাহ্ মখদুম রূপোশ (রহ.) ছিলেন বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) এর পৌত্র এবং আজালস্না শাহ ২য় পুত্র। তিনি ৬১৫ হিজরির ২ রজব বাগদাদে জন্ম গ্রহণ করেন। রূপোশ তার উপাধি। শব্দটি ফারসী। যার অর্থ মুখ আবরণকারী। তাঁর উপাধি থেকে একথা বোঝা যায় যে, সাধারণ মানব বৈশিষ্ট্য ছাড়াও তাঁর মধ্যে অসাধারণ ক্ষমতা লুকায়িত ছিল। তাঁর রাজশাহী আগমনের অনত্মরালে আছে এক বিসত্মৃত ইতিহাস।
১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দে মোগলীয় যোদ্ধা হালাকু খান বাগদাদ আক্রমণ করলে বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানীর বংশধরগণ বাগদাদ থেকে কাবুল, কান্দাহার ,পারস্য ও পাক-ভারতের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করেন। হযরত শাহ্ মখদুম রূপোশ (রহ.) এর পিতা আজালস্না শাহ্ দিলস্নীতে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তাঁর উন্নত চরিত্র ও গুণাবলীর প্রতি মুদ্ধ হয়ে দিলস্নীর সম্রাট ফিরোজ শাহ্ তাঁর কাছে বায়েত হন। পিতার সহচার্যে তিন পুত্র সৈয়দ মুনির উদ্দীন আহমেদ (রহ.), হযরত শাহ্ মখদুম রূপোশ (রহ.) ও সৈয়দ আহমদ তম্বরী (রহ.) আধ্যাত্মিক সাধনায় সমৃদ্ধ লাভ করেন। হালাকু খানের মৃত্যুর পর শাহ্ আজ্জালা বাগদাদে ফিরে গেলেও তাঁর পুত্রগণ ইসলামের বাণী প্রচারের মাধ্যমে মানুষকে হেদায়েতের উদ্দেশ্যে অনুচরবর্গসহ বাংলায় আগমন করেন।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২২ | সময়: ৬:২৪ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ