সর্বশেষ সংবাদ :

বাড়ছে স্কোয়াশ চাষ

রায়হান আলম, নওগাঁ: আমাদের দেশে প্রায় সব অঞ্চলেই বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির চাষ হয়ে থাকে। বর্তমানে দেশের অনেক স্থানে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে স্কোয়াশ চাষ প্রতি বছর ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কিন্তু উত্তরের জেলা নওগাঁয় প্রথম বানিজ্যিকভাবে মধ্যপ্রাচ্যের সবজি স্কোয়াশ চাষ হচ্ছে। শীতকালীন এই সবজি পুষ্টিকর, সু-স্বাদু, সল্পমেয়াদি, উচ্চ ফলনশীল, লাভ জনক স্কোয়াশ চাষ করেছেন সদর উপজেলার কৃষক আব্দুল লতিফ।
তার এক বিঘা জমিতে বিষমুক্ত স্কোয়াশের ভালো ফলন হয়েছে। সেই সঙ্গে বাজারে স্কোয়াশের দাম ভালো থাকায় স্কোয়াশ বিক্রি করে ভালো লাভবান হবেন বলে আশা করছেন।
অন্যদিকে কম খরচে, রোগবলাই মুক্ত লতিফের স্কোয়াশ চাষ দেখে আশে পাশের গ্রামের অনেক কৃষক স্কোয়াশ চাষের আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নওগাঁ সদর উপজেলার তিলকপুর ইউনিয়নের মঙ্গলপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল লতিফ তার এক বিঘা জমিতে বিদেশি হাইব্রিড জাতের স্কোয়াশ সবজি চাষ করেছেন। জমিতে বীজ রোপনের ২মাসের মধ্যেই গাছগুলো বেড়ে ওঠেছে। সেই স্কোয়াশের গাছে গাছে অসংখ্য হলুদ রঙ্গের ফুল ফুটে আছে আর গাছের নিচে গোড়ায় গোড়ায় বোটায় ছোট বড় অনেক স্কোয়াশ ফল। কোনটির ওজন দুই থেকে আড়াই কেজির মতো। এই সবজিটি দেখতে অনেকটা শশার মত মনে হয় কিন্তু আকারে অনেক বড় এবং বাইরের ত্বক শশার মত হলেও এই সবজিটির আকৃতি একটা বড় সরু মিষ্টি কুমড়ার মতো।
প্রতিদিনই আব্দুল লতিফের স্কোয়াশ ক্ষেত দেখতে আসছেন আশে-পাশের গ্রামের অনেক কৃষক। ফলন ভালো হওয়ায় তারাই পরিকল্পনা করছেন আগামী দিনে স্কোয়াশ চাষ করার।
ফতেপুর গ্রামের কৃষক ইউনুছ আলী বলেন, আমরা মূলত দেশীয় জাতের বিভিন্ন সবজির চাষ করে থাকি। এই প্রথম আমাদের এলাকায় মঙ্গলপুর গ্রামের কৃষক লতিফ বিদেশী জাতের স্কোয়াশ চাষ করেছে।
এই সবজির নাম আমি ব্যক্তিগতভাবে আগে কখনো শুনিনি বা দেখিনি। গত বছরের নভেম্বর মাসে এ সবজির চাষ শুরু করে। বর্তমানে দুই থেকে আড়াই কেজি ওজন হয়েছে প্রতিটি স্কোয়াশের। যতদূর জানি এখন পর্যন্ত রোগবালাই হয়নি। মনে হচ্ছে এটি লাভবান একটি সবজি। আমিও পরিকল্পনা করছি স্কোয়াশ চাষ করার।
নোমান হোসেন নামের স্থানীয় আরেক কৃষক বলেন, খুব অল্প সময়ে গাছে স্কোয়াশ সবজি ধরেছে। কোন রোগবালাই নাই। বাজারে এই সবজির দামও নাকি ভালো। স্কোয়াশ চাষে খরচও তুলনামূলক অনেক কম। লতিফ ভাইয়ের সাথে আলোচনা করেছি স্কোয়াশ চাষের বিষয়ে। যদি কৃষি অফিস থেকে সহায়তা ও পরামর্শ পাই তবে আমরাও স্কোয়াশ চাষ করবো।
স্কোয়াশ চাষী আব্দুল লতিফ বলেন, শীতকালীন সময়ে আমি আলু, টমেটো,সিম,কপি এসব সবজির আবাদ করতাম। গত বছরের অক্টোবর মাসে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহযোগিতায় স্কোয়াশ চাষ শুরু করি। নভেম্বর মাসের শুরুতে এক বিঘা জমিতে বীজ বপন করি। বর্তমানে ২ মাস ৯দিনে প্রায় বিক্রির উপযুক্ত হয়ে গেছে। তবে চলতি মাসের শেষের দিকে ক্ষেত থেকে তুলে বিক্রি করা শুরু করবো। এখন প্রতিটি স্কোয়াশ দুই থেকে আড়াই কেজি ওজন হয়েছে।
লতিফ বলেন, এক বিঘা জমিতে ১৩টি সাড়ি আছে। প্রতিটি সাড়িতে ৪২টি গাছ আছে। প্রতিটি গাছ থেকে মোট ১০টি করে স্কোয়াশ সবজি পাবো বলে আশা করছি। মোট ৫৫২টির মত স্কোয়াশ গাছ আছে আমার ক্ষেতে। প্রতিদিন বিকেল বেলা করে গাছগুলোতে পানি দিতে হয়।
স্কোয়াশ সবজি চাষে খরচ ও লাভের বিষয়ে লতিফ বলেন, বীজ,সার, সেচ ওষধু খরচ দিয়ে প্রতি বিঘায় ২০-২৫ হাজার টাকার মত খরচ হয়। তবে আমাকে কৃষি অফিস থেকে কিছু সহায়তা করা হয়েছে। আর বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি স্কোয়াশ বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫টাকা কেজি দরে। যদি শেষ পর্যন্ত ফলন ভালো হয়,রোগবালাই না থাকে তবে আমার ক্ষেত থেকে প্রায় ১০০ মন স্কোয়াশ পাবো। সব খরচ বাদ দিয়ে এক লাখ টাকার মত লাভ হবে বলে আশা করছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি নওগাঁর উপপরিচালক কৃষিবিদ শামছুল ওয়াদুদ জানান, স্কোয়াশ মূলত একটি শীতকালীন ও বিদেশি জাতের সবজি। এটি মিষ্টি কুমড়ার মতো সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। মধ্যপ্রাচ্যের এই স্কোয়াশ চাষ অল্প খরচের ফসল। দ্রুত বর্ধনশীল একটি সবজি ও অল্প পরিশ্রমেই অধিক আয় করা সম্ভব। এ ফসলে কোনো রোগের উপদ্রব তেমন নেই। দেশের প্রচলিত কোনো সবজির এমন ভালো উৎপাদন ক্ষমতা নেই। স্কোয়াশ চাষ সম্প্রসারণ করা গেলে নওগাঁর কৃষি অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন আসবে।
নওগাঁ সদরের কৃষক আব্দুল লতিফকে স্কোয়াশ চাষে কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহায়তা করা হয়েছে। বর্তমানে তার ক্ষেত্রের স্কোয়াশ বিক্রির উপযোগি হয়েছে। তবে ৩মাস পর স্কোয়াশগুলো পুরোদমে পরিপক্ক হবে। স্কোয়াশ চাষে আমরা নানা ভাবে জেলার কৃষক ভাইদের মাঝে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। যদি কোন কৃষক স্কোয়াশ চাষে আগ্রহী হয়,তবে কৃষি বিভাগ থেকে পরামর্শ ও সহায়তা করা হবে।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ১২, ২০২২ | সময়: ৫:৪১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ