রাবির উর্দু বিভাগে ভয়াবহ ফল বিপর্যয়, সভাপতির কক্ষে তালা

বিশ্ববিদ্যালয়  প্রতিনিধিঃ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উর্দু বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষায় ভয়াবহ ফল বিপর্যয় হয়েছে।  বৃহস্পতিবার দুপুরে ফল প্রকাশের কিছুক্ষণের মধ্যে ফলাফল পুনর্মূল্যায়নের দাবিতে বিভাগের সভাপতির কক্ষে তালা লাগিয়ে আন্দোলন শুরু করেন করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা বিভাগের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন।

 

পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর সেখানে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনায় বসেন। সেখানে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আতাউর রহমান উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘ আলোচনা শেষে ছাত্র উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ও দাবিসমূহ লিখিতভাবে গ্রহণ করেন এবং আগামী রোববার আবার আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। তার আশ্বাসসে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করেন। তবে সমস্যা দ্রুত সমাধান না হলে শিক্ষার্থীরা আবার আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন।

 

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিভাগের শিক্ষকরা ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের ফল বিপর্যয় করা হয়েছে। ফল বিপর্যয়ের পেছনে শিক্ষকদের অন্তর্কোন্দল, পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যানের স্বেচ্ছাচারিতা, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, পক্ষপাতিত্ব এবং বিভাগের সভাপতির দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ করেন তারা।

 

বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ৩৫ জন নিয়মিত ও ৩জন অনিয়মিত শিক্ষার্থী রয়েছে। তারা প্রত্যেকেই প্রথম সেমিস্টারে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। গত ২২ এপ্রিল তাদের প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষা শুরু হয়ে ওই মাসেই শেষ হয়।  বৃহস্পতিবার দুপুরে তাদের ফল প্রকাশ হয়। তবে দ্বিতীয় সেমিস্টারে ৩৮ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও ৩০ জনের ফল প্রকাশিত হয়। ৬ জন নিয়মিত ও ২জন অনিয়মিত শিক্ষার্থীর ফল প্রকাশিত হয়নি এবং ৬ জন শিক্ষার্থী একটি করে কোর্সে ফেল করেছেন।

 

ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষায় ৩৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩৪ জন প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। তবে দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষায় মাত্র ৬জন প্রথম শ্রেণি পেয়েছেন। ওমর ফারুক নামে এক শিক্ষার্থী প্রথম সেমিস্টারে সিজিপিএ ৩.৫৮ পেয়ে উত্তীর্ণ হলেও দ্বিতীয় সেমিস্টারে তার ফল আসেনি। মো. আলম নামে আরেক শিক্ষার্থী প্রথম সেমিস্টারে সিজিপিএ ৩.৭৫ পেলেও দ্বিতীয় সেমিস্টারে পেয়েছেন ২.৬৪। ফৌজিয়া তুরাণী নামে এক শিক্ষার্থী প্রথম সেমিস্টারে ৩.৮৩ পেলেও দ্বিতীয় সেমিস্টারে তিনি পেয়েছেন ২.৭৮। মানিক সুমন প্রথম সেমিস্টারে পান ৩.৬৬ কিš‘ দ্বিতীয় সেমিস্টারে পেয়েছেন ২.৭৫। প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষায় সিজিপিএ ৩.৯১ পেয়ে প্রথম হন নিশাত তাসনিম। দ্বিতীয় সেমিস্টারে তিনি পেয়েছেন ৩.২৮। এভাবে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর ফল বিপর্যয় হয়েছে।

 

উর্দু বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের শিক্ষকরা ই”ছাকৃতভাবে আমাদের রেজাল্ট খারাপ করে দিয়েছেন। তাদের কথামত না চললে তারা চিহ্নিত করে রাখেন। তারা ক্লাসে আমাদেরকে সরাসরি দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। শিক্ষকদের অন্তর্কোন্দলের কারণে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের সাথে এমনটা করেছেন। আমি যেমন পরীক্ষা দিয়েছি তাতে আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি আমার রেজাল্ট না আসার প্রশ্নই আসে না। শিক্ষকদের কাছে ‘প্রাইভেট’ না পড়ার কারণেও ফল বিপর্যয় হতে পারে বলে অভিযোগ করেন ওই শিক্ষার্থী।

 

একই বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, এই বিভাগে ভর্তি হয়ে আমাদের জীবনটাই ধ্বংস। আমাদের বিভাগের শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে আমাদেরকে প্রতিনিয়তই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। বিভাগের পিকনিকে যেতে হলেও শিক্ষকদের রাজনীতির শিকার হতে হয়। ক্লাসে ভালো শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করার পরিবর্তে শিক্ষকরা উল্টো নানাভাবে নিরুৎসাহিত করেন। মূলত পরীক্ষা কমিটির সভাপতির কারণেই আমাদের এই ফল বিপর্যয় হয়েছে। তিনি ই”ছাকৃতভাবে ফল প্রকাশে বিলম্ব করেছেন। আর আজ তিনি ভারতে যাবেন তাই তড়িঘড়ি করে তিনি ফল প্রকাশ করেছেন। আমরা এই ফল দ্রুততম সময়ে পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানাচ্ছি।

 

শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আতাউর রহমান বলেন, রেজাল্ট দেখে আমার মনে হয়েছে সত্যিই ফল বিপর্যয় হয়েছে। কিন্তু কেন এমনটা হয়েছে সেটি স্পষ্ট নয়। শিক্ষার্থীদের ফল পুনর্মূল্যায়নের দাবি আমি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে জানাব। আশা করছি শিক্ষার্থীরা তাদের ন্যায্য ফল বঞ্চিত হবেন না।

 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি ন্যায্য। এখানে আসলেই ফল বিপর্যয় হয়েছে। রেজাল্ট শিট দেখে বিষয়টি আমার কাছে স্বাভাবিক মনে হয়নি। শিক্ষার্থীরা লিখিতভাবে তাদের অভিযোগ ও দাবি সমূহ আমাকে দিয়েছে। আমি আগামী রোববার তাদের সাথে আলোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

 

সানশাইন/তৈয়ব


প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০২২ | সময়: ৭:৫৬ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine