যথাযোগ্য মর্যাদায় রাবি ও রুয়েটে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত

রাবি প্রতিনিধি: যথাযোগ্য মর্যাদায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) দিনব্যাপী পৃথকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে দুই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাবির প্রশাসন ভবন, আবাসিক হল ও অন্যান্য ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত উত্তোলন করা হয়। সকাল ৮ টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে প্রভাতফেরী করে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক ও শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। সাড়ে ৮ টায় বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন করা হয়।
সকাল সাড়ে ৯ টায় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলামের সভাপতিত্বে শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে শহীদ পরিবারের সদস্যদের স্মৃতিচারণ, সম্মাননা ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মুখ্য আলোচক ছিলেন বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক চৌধুরী জুলফিকার মতিন।
আলোচনাকালে অধ্যাপক জুলফিকার মতিন বলেন, ‘পাকিস্তান আমলে এ দেশীয় আন্দোলন সংগ্রামের মূল শক্তি হিসেবে ভিত্তিভূমি দাঁড় করিয়েছে তখনকার বুদ্ধিজীবীরা। সমকাল পত্রিকাই বলি, আর আবদুল হকের প্রবন্ধের কথাই বলি, আর মুনীর চৌধুরীর কবর নাটকের কথাই বলি, সে সবের দ্বারাই তৈরি হয়েছে আমাদের ভাবজগৎ, আসলে যা ছিল পাকিস্তানী রাষ্ট্র দর্শনের বিরোধী।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি শিল্পসাহিত্যের কথাই বলি অথবা সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকলাপের দিকেই যদি তাকাই, তার সৃজনশীল রূপের বাস্তব প্রয়োগ ঘটে বুদ্ধিবৃত্তিরই পরিচর্যা দ্বারা। তাই এই ভাবজগৎ যাতে তৈরি হতে না পারে, বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা দ্বারা সমাজকে যেন আলোকিত না করা হয়, সে জন্যই হত্যা করা হয়েছে বুদ্ধিজীবীদের। এটাই হল মূল কারণ।’
এসময় উপ-উপাচার্যদ্বয় অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া ও অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম, প্রক্টর লিয়াকত আলী, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক ড. আজিজুর রহমান, বিভিন্ন অনুষদ অধিকর্তা, ইনস্টিটিউট পরিচালক, বিভাগীয় সভাপতি, সিন্ডিকেট সদস্য, ছাত্রউপদেষ্টা মো. তারেক নূরসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
দিবসটিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বিভিন্ন হল, বিভাগ, সাংবাদিক সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এদিন বাদ জোহর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকে প্রদীপ প্রজ্জ্বালন শেষে কেন্দ্রীয় মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।
এছাড়া সন্ধ্যা ৬টায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে বুদ্বিজীবী চত্বরে মুক্তমঞ্চে নাট্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কৌশিক সরকারের নির্দেশনা ও সুমনা সরকারের গ্রন্থনা ও অভিনয়ে নাটক ‘জয়জয়িতা’ মঞ্চস্থ হয়। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কাজী মামুন হায়দার নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘মরণজয়ী শহীদ কাইয়ূম’ সাজ্জাদ বকুল কর্তৃক নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘রক্তে যারা শুধলো মায়ের ঋণ’ ও কাওসার চৌধুরী নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘বধ্যভূমিতে একদিন’ প্রদর্শিত হয়।
এদিকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের প্রথম প্রহরে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) প্রশাসন মহান মুক্তিযুদ্ধে রুয়েটের শহীদদের সমাধিস্থলে শ্রদ্ধাঞ্জলী নিবেদন করেন। এসময় শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন শেষে দোয়া ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে প্রথম প্রহরের কর্মসূচি শেষ করেন তারা। বাদ জোহর রুয়েট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
দিবসটির কর্মসূচিতে রুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম সেখ, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সেলিম হোসেন, প্রকৌশল অনুষদের ডীন অধ্যাপক নিয়ামুল বারী, আইপিই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন, ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক রবিউল আওয়ালসহ বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, হলের প্রাধ্যক্ষ শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৫, ২০২১ | সময়: ৬:৩২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ