মঙ্গলবার, ১৪ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
সানশাইন ডেস্ক: ঈদের সড়কে কোথাও সমস্যা হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা সমাধান করতে এবার পুলিশের মোটর সাইকেল পেট্রল টিম ‘সর্বোচ্চ তৎপর’ থাকবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
সবার ‘সম্মিলিত তৎপরতায়’ মহাসড়কের পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত ‘স্বস্তিদায়ক’ রয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। মহাপরিদর্শক বলেছেন, মানুষের ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি, পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে পুলিশের সব পদমর্যাদার সদস্য ২৪ ঘণ্টা সড়কে থাকবে।
“অনেক সময় অভিযোগকারীকে যথাসময়ে সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না। এজন্য এবার সড়কে সক্রিয় থাকবে পুলিশের মোটরসাইকেল পার্টি। যাতে দ্রুত সময়ে অভিযোগ শোনার সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। এছাড়া ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি, পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ওসিসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা মাঠে থাকবেন।“
২৯ জুন ঈদ ঘিরে এবার বুধ থেকে শুক্রবার তিন দিন ছুটি। ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে ওই তিন দিনের সঙ্গে মঙ্গলবারও নির্বাহী আদেশে ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। ফলে সোমবার অফিস ছুটির পরই ঈদযাত্রার মূল চাপ শুরু হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সোমবার গাবতলী পশুর হাট পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মহাসড়ক পরিস্থিতি এবং যাত্রী সেবায় পুলিশের প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলেন আইজিপি।
মহাসড়কের পরিস্থিতি তুলে ধলে তিনি বলেন, “আমরা গাজীপুর সাভার বাইপাইল এলাকা পরিদর্শন করেছি। সড়কের অবস্থা মানুষের কথা শুনেছি। ঈদযাত্রা সরজমিনে পরিদর্শন করেছি। সাধারণ মানুষ নিরাপদে নির্বিঘ্নে যার যার গন্তব্যে যাচ্ছেন। আমাদের সঙ্গে মালিক শ্রমিক, হাটের ইজারাদার ও যাত্রীদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। কেউ হয়রানি শিকার হচ্ছেন কিনা তা জানার চেষ্টা করেছি, এখন পর্যন্ত সবাই স্বস্তিদায়ক বলেছেন।“
পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ডিএমপি পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, টুরিস্ট পুলিশ, জেলা পুলিশ রেলওয়ে পুলিশ, র্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, নৌ পুলিশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশসহ সব ইউনিট একযোগে কাজ করছে বলেও জানান তিনি। এ বছর রোজার ঈদে মানুষের যাতায়াত ‘স্মরণকালের স্বস্তিদায়ক’ ছিল মন্তব্য করে আইজিপি বলেন, “গত ঈদুল ফিতরে সকলের সার্বিক সহযোগিতায় ঈদ যাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে পেরেছি। সাধারণ মানুষ আশ্বস্ত হয়েছেন ও যার যার গন্তব্যে নির্বিঘ্নে ও যথাসময়ে গমনাগমন করতে পেরেছেন। গত ঈদের অভিজ্ঞতার আলোকে এবারের যাত্রা নিশ্চিতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।“
বিগত সময়ের সঙ্গে এখনকার পার্থক্য তুলে ধরা আবদুল্লাহ আল-মামুনের ভাষ্য, “যোগাযোগ ব্যবস্থায় দেশে ‘বৈপ্লবিক’ পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, পদ্মাসেতু হয়েছে। আগের মত অবস্থা আর নেই যে মানুষ বাসের ছাদে চড়ে গন্তব্যে যাবে।ঈদ যাত্রায় সড়কের অবস্থার কথা ভেবে মানুষ আগে বাড়িতে না-কি রাস্তায় ঈদের নামাজ পড়বেন সেই শঙ্কায় থাকতেন, সে পরিস্থিতি আর নেই।
তিনি বলেন, ফিটনেসবিহীন ও লাইসেন্সবিহীন যানবাহন না চালানোর জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সাবধান করে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হচ্ছে, টেলিভিশনে টিভিসি চালানো হয়েছে। এছাড়া খালি পিকআপ ও ট্রাকেও কোনো যাত্রী না ওঠানোর কথা বলেন তিনি।
দুই ঈদে পুলিশের দায়িত্বেও যে পার্থক্য আছে, সে কথা তুলে ধরে আইজিপি বলেন, “ঈদুল ফিতরের চেয়ে ঈদুল আযহায় পুলিশের দায়িত্ব বেশি। এবার সড়কে শুধু ঈদযাত্রায় কোরবানির হাটের নিরাপত্তা দিতে হচ্ছে পুলিশকে। পাশাপাশি মৌসুমি ফল ও কোরবানির হাটে পশুবাহী যানবাহনকে নিরাপত্তা দিচ্ছে পুলিশ। সড়কে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে প্রচার চালানো হয়েছে। “
জাল টাকার কারবারিদের হুঁশিয়ার করে আইজিপি বলেন, “যারা জাল টাকার কারবার করেন, তারা হুঁশিয়ার হয়ে যান। আমরা গত দুই মাসে ৩ কোটি ৬১ লাখ জাল টাকা উদ্ধার করেছি, গ্রেপ্তার করেছি কারবারীদের। অজ্ঞানপার্টি মলমপার্টি, ছিনতাইকারীসহ যারা প্রতারণা কাজে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। সাবধান হয়ে যান, প্রতারণামূলক কাজে জড়ালে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।” কেউ ভোগান্তিতে পড়লে, অপরাধের শিকার হলে বা প্রতারিত হলে সঙ্গে সঙ্গে ৯৯৯ এ খবর দেওয়ার আহ্বান জানান আইজিটি।
এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, মার্কেটে চুরি-ডাকাতি ঠেকাতে পুলিশের একাধিক টিম নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়া ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার আগে মূল্যবান সামগ্রী স্বজনের কাছে রেখে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। ঈদের সময়ে ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং ঈদে পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় জনসমাগমে নিরাপত্তা নিশ্চিতেও পুলিশ তৎপর থাকবে বলে জানান আইজিপি।
ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক, অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার, খ. মহিদ উদ্দিন, হারুন অর রশীদ, সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা এ সময়উপস্থিত ছিলেন।