জাতিসংঘবিরোধী বিক্ষোভ: ডিআর কঙ্গোতে ৩ শান্তিরক্ষীসহ নিহত ১৫

সানশাইন ডেস্ক: পূর্বাঞ্চলের গোমা শহরে বিক্ষোভ শুরু হলেও পরে তা বুতেমবো-তেও ছড়িয়ে পড়ে। ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে জাতিসংঘবিরোধী বিক্ষোভের দ্বিতীয় দিনে সংঘর্ষে তিন শান্তিরক্ষী ও অন্তত ১২ বেসামরিক নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
দশককালেরও বেশি সময় ধরে চলা জঙ্গি সহিংসতায় পর্যদুস্ত অঞ্চলটির বেসামরিকদের রক্ষায় শান্তিরক্ষা মিশন ইউনাইটেড নেশনস অরগানাইজেশন স্টাবিলাইজেশন মিশন ইন দ্য ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর (এমওএনইউএসসিও) ব্যর্থতার অভিযোগে সোমবার থেকে দেশটিতে এ বিক্ষোভ শুরু হয়। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এ সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
মহাসচিবের সহকারী মুখপাত্র ফারহান হক এক বিবৃতিতে বলেছেন, “জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের ওপর যে কোনো সরাসরি হামলা যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে বলে মহাসচিব জোর দিয়ে বলেছেন, তিনি কঙ্গোর কর্তৃপক্ষকে ঘটনার তদন্ত এবং দায়ীদের দ্রুত জবাবদিহিতার মুখোমুখি করতে আহ্বান জানিয়েছেন।” সোমবার পূর্বাঞ্চলের গোমা শহরে বিক্ষোভ শুরু হলেও পরদিন তা বুতেমবো-তেও ছড়িয়ে পড়ে; বুতেমবোতেই জাতিসংঘের এক সেনা ও মিশনে কর্মরত দুই জাতিসংঘ পুলিশ গুলিতে নিহত হয়েছে বলে নিউ ইয়র্কে সাংবাদিকদের বলেছেন হক।
বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়া দুটি শহরেই বিক্ষোভকারীদের পাথর ও পেট্রল বোমা ছোড়া ও জাতিসংঘ ভবনগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া ও লুটতরাজের পাল্টায় শান্তিরক্ষীরাও বল প্রয়োগ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রয়টার্সের এক প্রত্যক্ষদর্শী গোমায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের গুলিতে দুই বিক্ষোভকারী নিহত হতে দেখেছেন। শহরটিতে মঙ্গলবার অন্তত বিক্ষোভকারী নিহত ও অর্ধশত আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সরকারের মুখপাত্র প্যাট্রিক মুয়ুয়া।
বুতেমবোতে অন্তত ৭ বেসামরিক নিহত ও অজ্ঞাত সংখ্যক আহত হয়েছে, বলেছেন শহরটির পুলিশপ্রধান পল এনগোমা। “যদি সেখানে জাতিসংঘ বাহিনীর কারণে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটে, অবশ্যই আমরা তা খতিয়ে দেখবো,” বলেছেন হক। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জাতিসংঘ বাহিনীকে কেবল কাঁদুনে গ্যাস এবং প্রয়োজন পড়লে সতর্কতামূলক গুলি ছুড়তে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল বলেও তিনি জানান।
‘অকার্যকর’ জাতিসংঘ মিশন প্রত্যাহারের দাবিতে ডিআর কঙ্গোর ক্ষমতাসীন দলের যুব শাখার একটি অংশ এই বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিল। স্থানীয় সেনাদের সঙ্গে এম২৩ বিদ্রোহী গ্রুপের ক্রমবর্ধমান সংঘর্ষে হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ায় ডিআর কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে এখন তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করছে। এক বছর মেয়াদী জরুরি অবস্থা এবং কঙ্গো ও উগান্ডার সেনাদের যৌথ অভিযান সত্ত্বেও সেখানে ইসলামিক স্টেট সংশ্লিষ্ট জঙ্গিদের হামলাও অব্যাহত রয়েছে।
তবে মহাসচিবের সহকারী মুখপাত্র হক বলছেন, তারা দশকের পর দশক ধরেই কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে স্থিতিশীলতা আনতে কাজ করেছেন। গত বছরের নভেম্বরেও এমওএনইউএসসিও-র ১২ হাজার সেনা ও এক হাজার ৬০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা ছিল, তবে বছর বছর সেখানে জাতিসংঘ বাহিনীর উপস্থিতি কমছে। ডিআর কঙ্গোতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত শান্তিরক্ষীদের মধ্যে দুইজন ভারতীয় বলে জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অন্যজন মরক্কোর নাগরিক, বলেছেন এনগোমা।


প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০২২ | সময়: ৫:৫২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর