ছোট ছোট ইফতার আয়োজনে জমে উঠে রাজশাহী কলেজ ক্যাম্পাস

জুল ইকরাম ইবতিদা: রমজান মাসে ইফতারের সময় অপরূপ সৌন্দর্যের মিলনমেলায় পরিণত হয় রাজশাহী কলেজ ক্যাম্পাস মাঠ। প্রতিদিন ইফতারের আগে কলেজ মাঠে গোল হয়ে বসা শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। কলেজ বন্ধ থাকলে বা ছুটির দিনেও কলেজ মাঠে ইফতারির জন্য ভিড়ের কমতি দেখা যায় না বরঞ্চ ছুটির দিন হওয়ায় আরও বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীরা ইফতারি করতে আসে কলেজ মাঠে। যেন এক সম্প্রীতির মিলন মেলায় পরিণত হয় রাজশাহী কলেজ মাঠ। পুরো কলেজ মাঠ জুড়ে থোকা থোকা রোজাদার ব্যক্তি বসে আছে ইফতারির অপেক্ষায়। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা খবরের কাগজে বিছিয়ে গোল করে তার চারপাশে বসে একসাথে সকলে মিলে ইফতার করে। আবার কেউবা পাতলা থালায় বাইরে থেকে কিনে আনা ইফতার পরিবেশন করে। পরিবেশনের পর সবার অপেক্ষা মাগরিবের আজানের। ইফতারির আগে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় রাজশাহী কলেজের হাজী মোহাম্মদ মহসিন ভবনের বারান্দা,রাষ্ট্রবিজ্ঞান ভবন মাঠ, কলেজ মাঠসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীদের ইফতার করতে।
অধিকাংশদের ইফতারের তালিকায় থাকে ছোলা, মুড়ি, খেজুর, পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, জিলাপি, শরবত ইত্যাদি। সঙ্গে হরেক রকমের ফলও। রেডিমেট প্যাকেজ ইফতারির প্যাকেটে রোজা ভাঙছেন কেউ কেউ। কলেজ মাঠে ইফতার করতে আসা অধিকাংশই কলেজের বিভিন্ন বিভাগ ও সংগঠনের শিক্ষার্থী।
প্রতিবছর পবিত্র রমজান মাসে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলেও করোনাকালীন শিক্ষাক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার চলছে ক্লাস। তাই এবার রোজা শেষে নিজ ক্যাম্পাসেই ইফতারটা সারছেন শিক্ষার্থীরা।
ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মিতু বলেন, ক্যাম্পাসের মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশে সবাই ইফতার করা আসলেই অনেক সুন্দর ব্যাপার। হাদিসেও সবার একসাথে ইফতারের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বর্ণনা করা হয়েছে। এতে সবার মধ্যে মিল-মহব্বত সৃষ্টি হয়, আর রমজানের বরকতে সেটা দীর্ঘস্থায়ীও হয়।
মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ,বা খ্রিস্টান সবাই বসে একসঙ্গে ইফতারে। বন্ধু-বান্ধবের মাঝে বর্ণ ভেদাভেদ দূর করে ইফতার এক অসাম্প্রদায়িক কলেজকে দিয়েছে পূর্ণতা। ইফতারকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গাতে জড়ো হয় বন্ধু-বান্ধব। বসে আড্ডার আসর, চলে বাহারি গল্প। মুহূর্তেই সেই গল্পে সবাই ভুলে যায় সারা দিনের রোজার ক্লান্তির কথা।
বন্ধুদের সাথে ইফতার করতে আসা বাংলা বিভাগের অসীম কুমার নামক অমুসলিম শিক্ষার্থীর সাথে কথা হয়। তিনি বলেন আমি মুসলিম না হতে পারি তবে আমার বন্ধুরা একসাথে ইফতার করে। তারা আমাকে যথেষ্ট ভালোবাসে ।আমরা প্রতিদিন এক সাথে কলেজ মাঠে ইফতার করি। আমি যেমন তাদের আনন্দে শরিক হই তেমনি তারাও আমাদের পূজার উৎসবে আমাদের সাথে যোগ দেয়।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহফুজ বলেন, সারাদিনের কর্ম ব্যস্ততার পর প্রিয় বন্ধু ও সহপাঠীদের সাথে খোলা আকাশের নিচে ইফতারের আয়োজন আমার কাছে স্মৃতি বিজড়িত মুহুর্ত হইয়ে থাকবে আজীবন।


প্রকাশিত: মার্চ ১৯, ২০২৪ | সময়: ৫:১৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ