গাজায় এখন আর ‘স্বাভাবিক শিশু’ জন্ম নিচ্ছে না: জাতিসংঘ

সানশাইন ডেস্ক: ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার মানবিক পরিস্থিতি মা ও শিশুদের জন্য একটি ‘দুঃস্বপ্ন’। সেখানে ছোট এবং অসুস্থ নবজাতক জন্ম নিচ্ছে। মৃতশিশু প্রসবসহ পর্যাপ্ত অ্যানেস্থেসিয়া ছাড়াই সিজার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন নারীরা। গাজার ডাক্তারদের বরাত দিয়ে শুক্রবার এসব তথ্য জানিয়েছেন জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এই খবর জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) এর প্রতিনিধি ডমিনিক অ্যালেন। জেরুজালেম থেকে একটি ভিডিও সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে চলতি সপ্তাহে আমি গাজা ছেড়ে চলে যাচ্ছি। এখানকার ১০ লাখ নারী এবং কিশোরীর জন্য আমি আতঙ্কিত। বিশেষ করে ওই ১৮০ জন নারীর জন্য যারা প্রতিদিনই সন্তান জন্ম দিচ্ছেন।’
উত্তর গাজায় মানবিক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। সেখানে এখনও মাতৃকালীন সেবা দিচ্ছে এমন হাসপাতালগুলো পরিদর্শন করে ভিডিও কনফারেন্সে সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে অ্যালেন বলেছেন, ‘ডাক্তাররা জানিয়েছেন, তারা এখন আর কোনও স্বাভাবিক আকারের শিশু জন্ম নিতে দেখছেন না। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি, তারা যা দেখেছেন তা হলো আরও বেশি মৃত শিশুর জন্ম। আরও বেশি নবজাতকের মৃত্যু। এসবের কিছু ঘটছে অপুষ্টি, ডিহাইড্রেশন এবং কিছু জন্মকালীন জটিলতার জন্য।’
প্রসবকালীন জটিলতায় ভোগা নারীর সংখ্যা গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগের সংখ্যার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। সেখানকার মায়েরা অতিরিক্ত মানসিক চাপ, ভয়, অপর্যাপ্ত খাবার এবং ক্লান্ত অনুভব করেন। সেখানে তাদের সেবাদানকারীরা প্রায়ই প্রয়োজনীয় সরবরাহের অভাব থাকার কথা জানিয়েছেন। অ্যালেন বলেছেন, সিজারের জন্য ‘আমাদের কাছে পর্যাপ্ত অ্যানেস্থেসিয়া নেই, যা অচিন্তনীয়’।
তিনি আরও বলেছেন, ‘ওই শিশুদের মায়ের বাহুডোরে জড়িয়ে থাকার কথা, তাদের দেহ ব্যাগে মোড়ানোর কথা নয়।’ অ্যালেন বলেছেন, কিছু ইউএনএফপিএ এর ধাত্রীদের জন্য প্রসবকালীন কিট এবং ফ্ল্যাশলাইট ও সোলার প্যানেলের মতো সরবরাহ প্রবেশের অনুমতি দিতে অস্বীকার করেছিল ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেছিলেন, ‘এটি একটি দুঃস্বপ্ন যা মানবিক সংকটের চেয়েও অনেক বেশি কিছু। এটি মানবতার সংকটৃবিপর্যয়ের উর্ধ্বে।’
গাজায় গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় যে চিত্র তিনি দেখেছিলেন সে সম্পর্কে অ্যালেন বলেছিলেন, তা দেখে ‘সত্যিই আমার হৃদয় ভেঙে গেছে।’ তখন তিনি যাকেই অতিক্রম করেছেন বা যার সঙ্গেই কথা বলেছেন, অ্যালেনের বক্তব্যে, তারা ‘অসহায়, নরকঙ্কাল ও ক্ষুধার্ত’ এবং বেঁচে থাকার লড়াইয়ে প্রতিদিনের সংগ্রামে ক্লান্ত ছিলেন।
একটি সামরিক চেকপয়েন্টের কাছে প্রায় বছর বয়সী একটি ছেলেকে দেখেছিলেন অ্যালেন। ছেলেটি তার হাত উঁচু করে হাঁটছিল। সে যে ভীত তা স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছিলো। ছেলেটির পেছনেই তার সদ্য বড় বোনটি একটি সাদা পতাকা ধরে পিছনে পিছনে এগিয়ে যাচ্ছিলো। ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাস দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছিল। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের মতে, ওই হামলায় এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন।
ওই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ওইদিনই ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় আকাশ ও স্থলপথে পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওইদিনের শুরু করা হামলা টানা ৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরায়েল নির্বিচার হামলায় এখন পর্যন্ত ৩১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। খাদ্যের তীব্র সংকটের মধ্যেই অঞ্চলটির প্রায় ২৩ লাখ বাসিন্দাই অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।


প্রকাশিত: মার্চ ১৭, ২০২৪ | সময়: ৩:০৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ