সর্বশেষ সংবাদ :

তাড়াশে ঐতিহ্যবাহী ৩’শ বছরের দইয়ের মেলা

তাড়াশ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ঐতিহ্যবাহী ৩০০ বছরের দইয়ের মেলা বসেছে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে মেলায় দই বিক্রিতে ভাটা পড়েছে। মেলায় দই বিক্রি করতে আসা বগুড়ার শেরপুরের দই বিক্রিতা নিমাই ঘোষ জানান, ‘প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও মেলায় ৪০ মণ দই নিয়ে এসেছি। বিক্রি নাই বললেই চলে।’
মেলায় দই কিনতে আসা তাড়াশ পৌর এলাকার আব্দুল জলিল বলেন, মেলা উপলক্ষে দই, চিড়া মুড়ি মুড়কি কিনে থাকি। কিন্তু সবগুলোর দইয়ের দাম বেশি চাচ্ছে। আগে সরার (দইয়ের পাত্র) আকার ছিল বেশ বড় এখন দেখছি আকারে অনেক ছোট। প্রতি কেজি দই বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ কেজিতে। একই দই গত বছর বিক্রি হতো ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়।
মেলায় দই বিক্রি করতে আসা আনন্দ ঘোষের সাথে কথা বলে জানা যায়, ‘দুধের দাম, জ্বালানী, শ্রমিক খরচ, দই পাত্রের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দইয়ের দামও বেড়েছে। তবে মেলা এক দিনব্যাপী হলেও চাহিদা থাকার কারণে কোনো ঘোষের দই অবিক্রিত থাকে না।
হাড়া জ্বালানি গরমে চিঁড়া, মুড়ি, খই, দই, আম, কলা, দুধ, ক্ষীর এতেই যা একটু রস, মিষ্টত্ব আর পরিতৃপ্তি। দই আবহমান সময়কাল ধরে বাঙালির জীবনের প্রতিদিনের খাবার, ভোজবাড়ির অন্যতম আকর্ষণ, পেটরোগার পথ্য, পেটুকের ভালোবাসা।
ভালো নাম্বারের আশায় পরীক্ষা দিতে যাবার আগে কপালে দইয়ের ফোঁটা, ভাই ফোঁটায়, আয়ু বৃদ্ধি কামনায় কপালে দইয়ের ফোঁটা, বিজয়া দশমীর শেষে সাংসারিক সুখ সমৃদ্ধির প্রার্থনায় দরজায় দইয়ের ফোঁটা।
এসবই ঘটে তাড়াশের দই মেলাকে ঘিরে বাঙালি রসনায় দই জুড়িহীন। শেষ পাতে দই হলে তো কথাই নেই। এ ছাড়া বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান ও সামাজিক ভোজে দই পরিবেশন করা হয়ে থাকে। দই থেকেও তৈরি হয় নানা পদ।
ব্যবসায়ীদের দাবি, দুধ, চিনি ও জ্বালানির দাম ও উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সরা ছোট করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। অন্যান্য নিত্যপণ্যের সাথে বেড়েছে দুধ ও টক দইয়ের দাম। ঐতিহ্যবাহী চলনবিলের তাড়াশে দই মেলা নিয়ে রয়েছে নানা গল্প-কাহিনী।
প্রায় ৩০০ বছর আগে তাড়াশের তৎকালীন জমিদার পরম বৈঞ্চব বনোয়ারী লাল রায় বাহাদুর প্রথম দই মেলার প্রচলন করেছিলেন। জনশ্রুতি আছে তৎকালীন পরম বৈঞ্চব জমিদার রাজা রায় বাহাদুর দই ও মিষ্টান্ন পছন্দ করতেন।
এছাড়া জমিদার বাড়িতে আসা অতিথিদের আপ্যায়নে এ অঞ্চলে ঘোষদের তৈরি দই পরিবেশন করা হতো। আর সে থেকেই জমিদার বাড়ির সম্মুখে রশিক রায় মন্দিরের মাঠে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী দই মেলা বসতো। প্রতিবছর শীত মৌসুমের মাঘ মাসে শ্রী পঞ্চমী তিথিতে দই মেলায় বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর থেকে ঘোষেরা দই এনে মেলায় পসরা বসিয়ে বিকিকিনি করতেন।
কথিত আছে সবচেয়ে ভালো সুস্বাদু দই তৈরিকারক ঘোষকে জমিদারের পক্ষ থেকে উপঢৌকন প্রদান করার রেওয়াজ ছিল। তবে জমিদার আমল থেকে শুরু হওয়া তাড়াশের দইয়ের মেলা এখনো মাঘ মাসের পঞ্চমী তিথিতে উৎসব আমেজে বসার বার্ষিক রেওয়াজ এখনো আছে।
দইয়ের মেলায় আসা এ অঞ্চলের দইয়ের স্বাদের কারণে নামেরও ভিন্নতা রয়েছে। যেমন ক্ষীরসা দই, শাহী দই, শেরপুরের দই, বগুড়ার দই, টক দই, শ্রীপুরী দই এমন হরেক নামে দামের হেরফেরে বিক্রি হয় দই।
বিশেষ করে বগুড়ার শেরপুর, চান্দাইকোনা, শ্রীপুর, সিরাজগঞ্জের তাড়াশের দই প্রচুর বেচাকেনা হয়।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৪ | সময়: ৬:০০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর