শীত আর কুয়াশা উপেক্ষা করে ধান রোপণে ব্যস্ত কৃষক

রাণীনগর প্রতিনিধি: সূর্যের দেখা নেই, প্রকৃতিতে বয়ছে হাড় কাঁপানো হীমেল হাওয়া আর কুয়াশা। এরই মধ্যে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার চাষীরা পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছে ইরি-বোরো ধান রোপণের যাবতীয় কাজ। তবে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলে ধানের উৎপাদন কমে যাওয়া সহ ধানগাছে বিভিন্ন ধরনের পোকার আক্রমণ হতে পারে এমন শঙ্কায়ও রয়েছেন কৃষক।
রাণীনগর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ফারজানা হক বলেন, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় ১৯ হাজার দুইশত হেক্টর জমিতে ধান চাষ করছেন চাছিরা। এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৭৫০হেক্টর জমিতে ধান রোপণের কাজ শেষ হয়েছে।
এ বছর ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লক্ষ ১৭ হাজার ১২০ মেট্রিক টন। যা চাল আকারে ৮৭ হাজার ১০ মেট্টিক টন ধরা হয়েছে। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এ উপজেলার সদর, বড়গাছা, কালীগ্রাম, গোনা, একডালা সহ মোট ৮টি ইউনিয়নেই ইরি-বোরো ধান চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পৌষের কনকনে ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে ধানের জমি প্রস্তুত, বীজতলা থেকে ধানের চারা তোলা, সার ছিটানো ও ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত চাছিরা।
অধিকাংশ কৃষক বলছেন, আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলে ধানের উৎপাদন কমে যাবে। চলমান কুয়াশাচ্ছন্ন অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে ধানগাছে বিভিন্ন ধরনের পোকার আক্রমণ হতে পারে। সেক্ষেত্রে তাদের খরচের বোঝা আরও বেড়ে যাবে।
রাণীনগর উপজেলার সিস্বা গ্রামের কৃষক মাসুদ রানা (৩৬), আলাউদ্দিন ফকির (৫২) জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে নিজের এবং অন্যের কিছু জমি চাষ করে আসছেন। গত বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলনও ভালো হয়েছিল। নিজের খোরাকি রেখে বাঁকি ধান বাজারে বেশ ভাল দামে বিক্রি করেছিলেন।
আলাউদ্দিন ফকির চলতি বছর ১৫ বিঘা, মাসুদ রানা প্রায় ১০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করছেন। আবহাওয়া ভালো থাকলে ফলনও বেশ ভাল হবে বলে আশা করছেন। তবে পানি সেচের দাম ও শ্রমিকের মজুরি নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় আছেন।
সেচের দাম ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় খরচ পোষানোর শঙ্কায়ও রয়েছেন তারা। বর্তমানে প্রতি বিঘা জমিতে ধান রোপণের জন্য শ্রমিকদের দিতে হচ্ছে ১৭ শত টাকা, গভীর নলকূপের সেচ মূল্য ২ হাজার টাকা, অগভীর নলকূপের (ডিজেল চালিত) ৫ হাজার টাকা।
এছাড়া জমি চাষ শুরু থেকে ধান কাটার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন ধরণের সার ৩ বার এবং ৪ বার কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। সব মিলিয়ে ধান উৎপাদন করতে বিঘা প্রতি ১৬-১৭ হাজার টাকা খরচ হয়। আর ধান কাটা-মাড়াই এর খরচ তো আছেই।
চলতি সৌসুমে রাণীনগর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি জিরাশাইল জাতের ধান চাষ হচ্ছে। এছাড়াও ব্রি ধান ৮৯, ৯২, বঙ্গবন্ধু ১০০ এবং কাটারি জাতের ধান চাষ করা হচ্ছে বলে স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২৪ | সময়: ৬:৪০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ