বুধবার, ১৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
আনোয়ার পারভেজ, নাটোর: রেল লাইন কেটে ফেলা হলে বা ভেঙে গেলে সঙ্গে সঙ্গে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে বেজে উঠবে এলার্ম। একই সঙ্গে কল আসবে স্টেশন মাস্টারের মোবাইল ফোনেও। এমন একটি ডিভাইস আবিষ্কার করেছেন নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার মাধনগর জোয়ানপুর গ্রামের মাহবুব আলমের ছেলে আব্দুল্লাহ আল কাফি।
কাফি পাবনা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের ইলেকট্রিক বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তার দাবি মাত্র ২০হাজার টাকায় এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশনের নিরাপত্তা দেবে তার এই ডিভাইস। সম্প্রতি গাজিপুরে রেললাইন কেটে ফেলায় ঘটা ভয়াবহ দুর্ঘটনা তার মনে দাগ কাটে। রেললাইনকে নিরাপদ করতে তাই প্রযুক্তি আবিষ্কারের চিন্তা মাথায় আসে তার।
আব্দুল্লাহ আল কাফি জানান, প্রতিটা স্টেশনে একটি কন্ট্রোল বক্স স্থাপন ও রেললাইনের সঙ্গে ওয়ারিংয়ে খরচ পড়বে মাত্র ২০ হাজার টাকা। ওই স্টেশনের আওতায় রেললাইন কাটা পড়লে বা ফেটে গেলে সঙ্গে সঙ্গে কন্ট্রোল বক্সের এলার্ম বাজবে। একই সঙ্গে এলার্ম বাক্সে থাকা মোবাইল থেকে স্টেশন মাস্টারের মোবাইলে যাবে কল।
বিষয়টি জেনে রবিবার রাতে এর আবিষ্কারকের খোঁজ নিলেন ডাক, টেলিযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি (আইটিসি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী রুহুল আমিন প্রযুক্তি আবিষ্কারক আব্দুল্লাহ আল কাফির সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আব্দুল্লাহ আল কাফি।
তিনি বলেন, রবিবার রাতে প্রতিমন্ত্রীর পক্ষে রুহুল আমিন প্রযুক্তির বিষয়ে যাবতীয় খোঁজ খবর নেন। পরবর্তীতে তিনি আবার যোগাযোগ করবেন বলে জানান। রুহুল আমিন জানান, বিষয়টি ডাক ও টেলিযোগ, তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের নজরে আসার পর তাকে খোঁজ নিতে বলেন। সোমবার প্রতিমন্ত্রী কাফি-র সঙ্গে কথা বলবেন। প্রতিমন্ত্রী কাফি-র সঙ্গে কথা বলার পর তিনিই এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
আব্দুল্লাহ আল কাফি বলেন, ‘ডিভাইসটি তৈরি করতে দিনরাত পরিশ্রম করেছি আমি। এটার কাজ হলো স্বাভাবিক রেল লাইন কখনো যদি ফেটে যায় বা রেল লাইন আলাদা হয়ে যায় তাহলে এটা সয়ংক্রিয় ভাবে সংকেত দিতে থাকবে। সেইসাথে স্টেশন মাস্টারকে কল দিবে। তিনি বলেন, রেলওয়ে সেফটি ডিভাইসটি আমার তৈরি করতে ১০ হাজার টাকা খরচ পড়েছে। তবে এটা যদি পরিপূর্ণ ভাবে রেলের নিরাপত্তার জন্য ব্যাবহার করতে হয় তাহলে আরেকটু বড় করে স্থাপন করতে হবে। সেক্ষেত্রে হয়ত এটার খরচ পড়বে ২০ হাজার টাকা।
আব্দুল্লাহর বাবা মাহবুব আলম জানান, সন্তানের এমন আবিস্কারে তিনি গর্বিত। তিনি বলেন, আমার ছেলের আবিস্কার দেশের ও জনগণের কাজে লাগবে এটা ভাবতেই আমার অনেক খুশি লাগছে।
পাবনা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের সিভিল বিভাগের ৫ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী সানজিদুল হক ফাহিম বলেন, আব্দুল্লাহ’র এই আবিস্কারে একই প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ও নাটোরের মানুষ হিসেবে খুবই গর্ব অনুভব করছেন।
মাধনগর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (ইউপি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শনিবার আবদুল্লাহ তার অবিস্কার দেখাতে তার বাড়িতে আসেন। এরপর থেকে এলাকাবাসী বিষয়টি জানতে পেরে যন্ত্রটি দেখতে আবদুল্লাহর বাড়িতে ভিড় করছে। রেলযাত্রাকে নিরাপদ করতে আবদুল্লাহর আবিষ্কারকৃত যন্ত্রটি সত্যিই কার্যকরী কি না তা পরীক্ষা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেওয়ান আকরামুল হক বলেছেন, বিষয়টি এখনো তার জানা নেই। তিনি আজই খোঁজখবর নিয়ে আবদুল্লাহর আবিষ্কারকৃত যন্ত্রটি কতটা কার্যকরী তা পরীক্ষা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলবেন।