রাজশাহীর একটি আসনে নির্ভার আ’লীগ, লড়াই হবে ৫ টিতে

স্টাফ রিপোর্টার : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেষ প্রচার-প্রচারণা। তফসিল অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ছিলো শেষ দিন। রাজশাহীর ৬ টি আসনে এদিন বৃহস্পতিবার শেষ প্রচারে উত্তাল। কোথাও জনসভা, কোথাও মিছিল সমাবেশ আবার কোথায় গণসংযোগ করে দিন শেষ করেছেন প্রার্থীরা।
প্রার্র্থীদের প্রচার শেষে এখন ভোটারদের মধ্যে চলছে নানান জটিল হিসেব। কে পাশ করবেন আর কে হেরে যাবেন। কেন হারবেন ইত্যাদি নিয়ে সবখানে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। সাধারণ ভোটারদের বিশ্লেষণ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রাজশাহীর ৬ টি আসনের মধ্যে একটি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ের ব্যাপারে শতভাগ নির্ভার। কারন তার বিপরীতের শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বি নেই। এ আসনটি হলো রাজশাহী-৩। পবা- মোহনপুর নিয়ে এ আসন। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। তিনি এবার প্রথমবার নির্বাচন করছেন। শক্তিশালী তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বি নেই। আসনটিতে অনেকটা একতরফা নির্বাচনে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আনাই এখন নৌকা প্রার্থীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ আসনে ক্ষমতাসীন দলের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন এবার নৌকার মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে চুপচাপ রয়েছেন। নৌকার প্রার্থী আসাদ নেতাকর্মীদের নিয়ে ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন এবং ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আসতে অনুরোধ জানাচ্ছেন। তবে তার সাথে নামমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম)’র এডভোকেট এ.কে.এম মতিউর রহমান মুন্টু নোঙ্গর প্রতিক নিয়ে, জাতীয় পার্টির আব্দুস সালাম লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে।
তানোর- গোদাগাড়ী উপজেলা নিয়ে রাজশাহী ১ আসনে এবার ত্রিমুখি লড়াই জমে উঠেছে। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে এখানে। এখানে শুরু থেকে ফুরফুরে মেজাজে থাকা টানা তিনবারের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী এখন অনেকটা চুপসে গেছেন। এবারও তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। তবে তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন একই দলের চারজন। বাছাই প্রকৃয়ার এক এক করে সব স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রার্থীরা বাতিল হয়ে যায়। এতে নির্ভার হন ওমর ফারুক চৌধুরী। তবে তা বেশীদিন টেকে নি। এক একে আইনী লড়াইয়ে শেষ অবধি সবাই ফিরে পান তাদের প্রার্থীতা। এর পরই দারুন চ্যালেঞ্জের মূখে পড়েন তিনবারের এমপি ওমর ফারুক চৌধূরী। এ আসনে প্রার্থীতা ফিরে পেয়ে মাঠে নামেন তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানী, চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি, আখতারুজ্জামান ও আয়েশা আখতার ডালিয়া।
এদের মধ্যে সম্প্রতি আখতারুজ্জামান গোলাম রাব্বানীকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সড়ে দাড়ান। এখন দলীয় নেতাকর্মীরাও বিভক্ত তিন প্রার্থীকে ঘিরে। এরা হলেন আওয়ামী লীগের মনোনীত ওমর ফারুক চৌধূরী নৌকা, স্বতন্ত্র গোলাম রাব্বানী কাঁচি ও মাহিয়া মাহি ট্রাক।
রাজশাহী সদর আসন নিয়ে গঠিত রাজশাহী-২ আসন। এখানে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারন সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি এ আসনে তিনবারের এমপি। তবে আওয়ামীলীগের একটি অংশ এবার তাকে ছাড় দিচ্ছে না। ফলে মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা। এখানে দুই বাদশার কারণে এখন ভিভক্ত আওয়ামী লীগ। তবে অনেকে মনে করছেন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত তাদের নৌকাতেই ভোট দেবেন।
এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে রাজশাহী-৪ আসন (বাগমারা)। এক সময়ের রক্তাক্ত জনপদ খ্যাত রাজশাহীর বাগমারা। রাজশাহী জেলার ৬ টি আসনের মধ্যে এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি সহিংস ঘটনা ঘটছে এই বাগমারা উপজেলায়। এখানে প্রতিদিন ঘটছে সহিংসতা। হামলা পাল্টা হামলা ও অস্ত্রের প্রদর্শণ। বিশেষ করেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের সমর্থিতদের হামলায় দিশেহারা স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তার সমর্থকরা। সাধারণ মানুষ বলছেন, নৌকার প্রার্থী কালাম ভোটের মাঠে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। প্রকাশ্যে ভয়ভিতি দেখাচ্ছেন। প্রায় দিনই নির্বাচনী কার্যালয়ে আগুন, ভাঙচুর, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এখানে ভোটের হিসেব মেলানোও জটিল। শেষ পর্যন্ত কে জিতে এ নিয়ে চলছে হিসেব। এখানে নৌকা ও কাচি অর্থাৎ নতুন প্রার্থী নৌকার আবুল কালাম আসাদ ও তিনবারের এমপি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক অনেকটায় সমানে সমান।
রাজশাহী-৫ আসনেও হবে হাড্ডাহাডি লড়াই। এবার ভোটের ফলাফল স্বতন্ত্র প্রার্থীর দিকে যেতে পারে বলে ধারণা ভোটারদের। তিনি একচেটিয়া অবস্থানে আছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় ভোটাররা।এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ দারা। এ আসনের বর্তমান এমপি ডা. মনসুর রহমান। মনসুর রহমান দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে আর প্রার্থী হননি। তবে এ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়ছেন জেলা যুবলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য ওবায়দুর রহমান। তিনি ঈগল প্রতীক নিয়ে নৌকার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ইতিমধ্যে ঈগল প্রতীক নিয়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, এই আসনে নৌকার মূল প্রতিদ্বন্দ্বি হয়ে উঠেছে ঈগল প্রতীক। তার পক্ষে নেমেছে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। এছাড়াও আছে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা। কেউ গোপনে কেউ নেমেছে প্রকাশ্যে ঈগল প্রতিকের পক্ষ নিয়ে। প্রথম দিকে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ওবায়দুর রহমান দলের সিনিয়র নেতাকর্মীদের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী ওবায়দুর রহমানও সতেজ হয়ে উঠেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে এ আসনের প্রবীণ রাজনীবিদ থেকে শুরু করে নবীনরাও নৌকা ছেড়ে এখন ঈগলের ডানায় উঠে দাঁড়িয়েছেন।
এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থীসহ ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা, ঈগল প্রতিক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ওবায়দুর রহমান, জাতীয় পার্টি মনোনিত প্রার্থী আবুল হোসেন, গণফ্রন্ট মনোনিত প্রার্থী মখলেসুর রহমান, বিএনএম মনোনিত প্রার্থী শরিফুল ইসলাম ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির আলতাফ হোসেন মোল্লা নির্বাচন করছেন।
রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬ জন প্রার্থী রয়েছেন। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের দলীয় নৌকা প্রতীক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী গণসংযোগে দেখা গেলেও নিরব রয়েছেন অপর রয়েছেন ৪ জন প্রার্থী।
এ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি। তিনি পরপর তিনবার এ আসনের সংসদ সদস্য হয়েছেন। দুইবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কাঁচি প্রতীকে নির্বাচন করছেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক এমপি রাহেনুল হক রায়হান।
প্রতীক বরাদ্দের পর গণসংযোগে ব্যস্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহরিয়ার আলম এবং কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হক রায়হান। প্রতিদিন তাঁরা কর্মী সমর্থক নিয়ে বাঘা ও চারঘাট উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। বাঘা ও চারঘাট উপজেলায় নৌকা ও কাঁচির পোস্টার শোভা পেলেও অন্য প্রার্থীদের কোনো পোস্টার ও প্রচারণা তেমন চোখে পড়েনি।
স্থানীয়রা বলছেন নৌকা ও কাঁচির মধ্যে হাড্ডাাড্ডি লড়াই হবে। গণসংযোগেও এ দুই প্রার্থীকে দেখা যাচ্ছে।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ৭, ২০২৪ | সময়: ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ