ভোটের পথ ‘কুসুমাস্তীর্ণ’ নয়, উপলব্ধি সিইসির

সানশাইন ডেস্ক: বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ভোট বর্জনের মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের নানা চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচনের এ যাত্রা ‘কুসুমাস্তীর্ণ নয়’।
সবার মিলিত প্রচেষ্টা ও দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে জনগণ ও বহির্বিশ্বের কাছে নির্বাচনকে ‘গ্রহণযোগ্য’ করার তাগিদও দিয়েছেন তিনি। রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে নির্বাহী হাকিমদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন সিসিই।
তিনি বলেন, “সবার সহযোগিতার মধ্য দিয়ে এ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ করতে হবে। বহির্বিশ্বে প্রশংসিত হবে এবং জনগণের কাছে বিশবাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য হবে।” দেশে নিবন্ধিত ৪৪ দলের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ ভোটে আছে ২৭টি। অন্যদিকে বিএনপিসহ ১৫টি দল ভোট বর্জন করেছে।
সিইসি বলেন, “সাধারণ নির্বাচন খুব উৎসবমুখর পরিবেশে হয়। কিন্তু রাজনৈতিক নেতৃত্বের একটা অংশ নির্বাচন বর্জন করছে। ২০১৪ সালে নির্বাচন বর্জন করা হয়েছে, সহিংসতা হয়েছে। সেটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বচনে কিছু বিতর্ক হয়েছে, সার্বিকভাবে অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে কোনো চ্যালেঞ্জ ছিল না।“
এবারের নির্বাচনের কিছু চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে সিইসি আউয়াল বলেন, “নির্বাচন আমাদের দ্বারপ্রান্তে। কুসুমাস্তীর্ণ পথে আমরা এগোচ্ছি না। কিছুদিন ধরে বিতর্ক চলছে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে, নির্বাচন প্রশ্নে বাকবিতণ্ডা হচ্ছে, সহিংসতাও হয়েছে। আমাদের বেশি মনোযোগী হতে হবে আকেরটি কারণে রাজনৈতিক অঙ্গনে কিছুটা বাকবিতণ্ডা আছে।” দলীয় সরকারের অধীনে ভালো নির্বাচনের প্রমাণ দেওয়ারও তাগিদ দেন তিনি।
“যে কোনো মূল্যে আমাদের প্রমাণ করতে হবে যে একটা সরকার থাকা অবস্থায় নির্বাচন কমিশন ভালো নির্বাচনের আয়োজন করতে পারে। ইসিকে বলা হয় ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বডি। সরকার বাধ্য ইসিকে সহায়তা করতে। সরকারের সহায়তা ছাড়া আমরাও নির্বাচন করতে পারি না।”
নির্বাচন আয়োজনকারীর সাংবিধানিক এই সংস্থার প্রধান জানান, ভোট আয়োজনে প্রায় ১৬ লাখ মানুষ নানা ধরনের দায়িত্বে আছেন। এর মধ্যে ৮ লাখ সরাসরি ভোটের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাকি অংশ আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর, তারা ভোটের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে কাজ করছেন। ভোটের দিন অরাজক পরিস্থিতি হলে এর ফলাফল কী হতে পারে সেই আভাসও দিয়েছেন সিইসি।
নির্বাচনি কর্মকর্তাদের দায়িত্বের বিষয়ে সজাগ থাকার নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, “ব্যালট বাক্সে সিল মেরে ভরে দেওয়া, কেন্দ্র দখল, কেন্দ্রের ভেতরে পেশী শক্তির প্রভাব পরিবেশ নষ্ট করে। কেন্দ্রের ভেতরে অরাজকতা হলে ভোটাররা কেন্দ্র থেকে ফিরে যাবে। নিরপেক্ষ ভোট না হলে তারা ভোটটাকে প্রত্যাখ্যান করে চলে যাবে।”
ভোট নিয়ে অনাচার চোখে পড়লে নির্বাহী হাকিমদের ‘তাৎক্ষণিক তৎপরতর মাধ্যমে জনগণের কাছে আস্থা তৈরি করতে হবে’ বলেও মন্তব্য করেন সিইসি। তিনি বলেন, নির্বাহী হাকিমরা সচরাচর ভোটকেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করবেন না। কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং অফিসার প্রয়োজনে নির্বাহী হাকিমদের তলব করবেন।
“শৃঙ্খলা রাখতে পারছে না, কেন্দ্র দখল করার উপক্রম হয়েছে, তখন নির্বাহী হাকিম, পুলিশের ডাক পড়বে। এছাড়া অননুমোদিত কাউকে ভেতরের প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। বাইরে থেকে পর্যবেক্ষণ করা হবে।“ সংবাদমাধ্যম ও পর্যবেক্ষকদের ভূমিকা তুলে ধরে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, “নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে দৃশ্যমানতার মধ্য দিয়ে। সেক্ষেত্রে গণমাধ্যম দৃশ্য ফুটিয়ে তুলতে পারে। অনুমোদিত ব্যক্তিরা শুধু গোপনকক্ষে প্রবেশ করবে না। তারা কেন্দ্রে বিচরণ করে ছবি তুলে তাৎক্ষণিকভাবে সব প্রচার করতে পারবে। জনগণ যদি দেখে ভেতরের পরিবেশ স্বচ্ছ, তাহলে তারা বেরিয়ে এসে বলবে সুন্দরভাবে ভোট দিয়েছি। তাহলে ভোটটা স্বচ্ছ হবে, গ্রহণযোগ্য হবে।
“জনগণ যদি বিশ্বাস করে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, অবাধ, নিরপেক্ষ হয়েছে, গ্রহণযোগ্য হয়েছে- তাহলে ভালো ভোট হয়েছে। মানুষ যদি বেরিয়ে এসে যদি বলে ভেতরে পরিবেশই নাই, কেন্দ্রের ভেতরে মাস্তান- ভোটাররাই প্রকৃত সত্য তুলে ধরবেন।“ ভোট নিয়ে সোশাল মিডিয়ার ‘অপপ্রচারকে’ বড় সমস্যা হিসেবে দেখছেন সিইসি।
তিনি বলেন, “সোশাল মিডিয়াতে অপপ্রচার হতে পারে। মিস ইনফরমেশন রোধ করতে হবে। ডিজইনফরমেশন ইজ প্রবলেম। এটা আমাদের বড় ধরনের ঝামেলা। সঙ্গে সঙ্গে এটাকে কাউন্টার করা যায় কিনা দেখতে হবে। এটা আসলেই ঘটছে কি না বা পাতানো কিনা।” সোশাল মিডিয়ায় বর্তমানে প্রকাশ হওয়া খবরাখবরের শতকরা ৯০ ভাগই ‘বানোয়াট’ বলে মন্তব্য করেন হাবিবুল আউয়াল।
তিনি বলেন, “প্রথম প্রথম ইউটিবে যা দেখতাম. অনেকের মত বিশ্বাস করতাম। ভাবতাম এসব বোধহয় সত্যি। এখন বুঝতে পারি, ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি থাকে। এসব পাতানো। এখন দেখি ৯০ পার্সেন্টই বানোয়াট।” নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান অনুষ্ঠানে বলেন, “শুধু আমাদের দৃষ্টিতে অবাধ, সুষ্ঠ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করলে হবে না। আমাদের দিকে সমগ্র বিশ্ব তাকিয়ে আছে। এই নির্বাচন সুষ্ঠ, সুন্দর এবং গ্রহণযোগ্য না করতে পারি, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
“বাংলাদেশ সব ধরনের বিষয়-বিশেষ করে আর্থিক, সামাজিক, ব্যবসা বাণিজ্য সহ সব কিছু থমকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বাংলাদেশ হয়তবা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।“ নির্বাচনকে ‘যে কোনো’ মূল্যে সুষ্ঠ, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক করার আহ্বান জানান কমিশনার আনিছুর রহমান। প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠনে সভাপতিত্ব করেন ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেসবাহ উদ্দিন চৌধুরী, ইটিআই মহাপরিচালক এসএম আসাদুজ্জামাননহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ১, ২০২৪ | সময়: ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ