হিলিতে চোরাইপথে আসছে ভারতীয় পেঁয়াজ!

হিলি প্রতিনিধিঃ

অভ্যন্তরীণ বাজারে সংকট হতে পারে এই কারণ দেখিয়ে বেশ কিছু দিন হলো পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ রেখেছে ভারত সরকার। তবে দেশের বাজারে ভালো চাহিদা থাকায় ও দাম কিছুটা কম হওয়ায় সীমান্ত দিয়ে চোরাইপথে ঢুকছে ভারতীয় পেঁয়াজ। দিনাজপুরের হিলির বাজারগুলোতে প্রতি কেজি ভারতীয় এই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি দরে। মান ভালো ও শুকনা হওয়ার কারণে কেউ কেউ এই পেঁয়াজ কিনলেও অধিকাংশ ক্রেতা তুলনামূলক কম দামে দেশীয় নতুন পেঁয়াজই কিনছেন।

 

শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) হিলি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারের বেশির ভাগ দোকানেই শোভা পাচ্ছে দেশীয় নতুন পেঁয়াজ। তবে একটি দোকানে দেখা গেছে ভারতীয় পেঁয়াজ যা চোরাইপথে ভারত থেকে এসেছে বলে দাবি বিক্রেতার। গত তিন দিন ধরে এই পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি হচ্ছে বলে দাবি তার। এসব পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি দরে, আর দেশীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা কেজিতে।

 

হিলি বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা রফিক হোসেন বলেন, বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ দেখলাম, যার মান বেশ ভালো রয়েছে এবং পেঁয়াজগুলো বেশ শুকনা রয়েছে। যার কারণে দেশীয় পেঁয়াজের চেয়ে দাম কিছুটা বেশি হলেও সেই ভারতীয় পেঁয়াজ কিনেছি। দেশীয় পেঁয়াজ তো এখনও কাঁচা, ফলে পরিমাণে বেশি লাগছে রান্নায়। সেই হিসেব করে ভারতীয় পেঁয়াজ কিনেছি।

 

অপর ক্রেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের পর পরই দেশে পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছিল। দাম বাড়তে বাড়তে ১৮০টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছিল। এখন দেশীয় পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ যেমন রয়েছে, তেমনি দামও কমতির দিকে। এতে করে আমাদের জন্য সুবিধা হয়েছে। তাই এক দোকানে ভারতীয় পেঁয়াজ পাওয়া গেলেও কম দামের কারণে আমরা দেশীয় পেঁয়াজ নিয়েছি।

 

হিলি বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসা ইয়াদ আলী বলেন, আমাদের বাড়ি পাঁচবিবি সীমান্ত এলাকায়। দেশের বাজারে পেঁয়াজের প্রতি কেজি ১০০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু সেই তুলনায় ভারতে পেঁয়াজের দাম বেশ কম। অপরদিকে বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। যার কারণে ভারতীয় পেঁয়াজের বেশ চাহিদা রয়েছে। তাই আমরা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে অল্প অল্প করে ভারত থেকে পেঁয়াজ নিয়ে এসে হিলি বাজারে বিক্রি করছি। ভারতে আমরা প্রতি কেজি পেঁয়াজ কিনছি ৭০টাকা দরে, আর সেই পেঁয়াজ হিলি বাজারে বিক্রি করছি ৯৫টাকা কেজি দরে। সব মিলিয়ে দিনশেষে আমাদের ৪ থেকে ৫শ টাকা করে লাভ বেরোচ্ছে। যতদিন চাহিদা থাকবে বা সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ নিয়ে আসা সম্ভব হবে ততদিন নিয়ে আসবো।

 

হিলি বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা শাকিল খান বলেন, গত ৭ ডিসেম্বর ভারত সরকার পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়। এর পর থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। এতে করে প্রথম দিকে সরবরাহ কমে দাম বেড়ে যায়। তবে এখন পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষকরা ক্ষেত থেকে দেশীয় পেঁয়াজ তুলছেন। ফলে বাজারে দেশীয় পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। তবে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় এবং বাংলাদেশে তুলনামুলক দাম বেশি হওয়ায় পার্শ্ববর্তী সীমান্ত দিয়ে কিছু টোকাই পার্টি ভারতীয় পেঁয়াজ আনছে। তারা এসব পেঁয়াজ এনে বাজারে আমাদের কাছে বিক্রি করছে। আমরা তাদের কাছ থেকে প্রতি কেজি ৯৫টাকা করে কিনে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। দেশি পেঁয়াজ এখনও কাঁচা, সেই তুলনায় ভারতীয় পেঁয়াজ শুকনা হওয়ায় ও মান ভালো হওয়ায় কিছুটা চাহিদা রয়েছে। তবে অধিকাংশ মানুষই দাম কমের কারণে দেশীয় পেঁয়াজ কিনছেন। এমন অবস্থা থাকলে হয়তোবা আর দুই-একদিনের মধ্যে ভারত থেকে এভাবে পেঁয়াজ আসা এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে।

 

প্রসঙ্গত,বন্দর দিয়ে পুর্বে প্রতিটন পেঁয়াজ ২০০ থেকে ৩০০ মার্কিন ডলার মূল্যে ভারত রফতানি করতো। কিন্তু অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে ভারতের বাজারেই পেঁয়াজের সরবরাহ কমায় দাম ঊর্ধ্বমুখি হয়ে উঠলে পেঁয়াজ রফতানি নিরুৎসাহিত করতে গত ২৮ অক্টোবর রফতানি মূল্য অনেকটা বাড়িয়ে একলাফে ৮০০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করে ভারত। এরপর থেকে সেই মূল্যেই বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি করছিলেন আমদানিকারকরা। নতুন করে আবারও সম্প্রতি ভারতে বন্যা হওয়ায় এবার রফতানি চার মাসের জন্য স্থগিত করেছে ভারত সরকার। আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত তারা পেঁয়াজ রফতানি সম্পূর্ণ বন্ধ ঘোষণা করেছে।

সানশাইন / শামি


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩০, ২০২৩ | সময়: ৬:১২ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine