আমরা ক্রিকেটাররা হাসির চেয়ে বেশি কাঁদি: সৌম্য

স্পোর্টস ডেস্ক: সৌম্য সরকারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছে ২০১৪ সালে। পেস বোলিং অলরাউন্ডার হয়েই মূলত জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন এই টপ অর্ডার ব্যাটার। কিন্তু শুরুর পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারেননি। লম্বা সময় অফ ফর্মে থাকা সৌম্য মাঝে মধ্যে রান করছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম না করেও তার সুযোগ মিলেছে জাতীয় দলে। তবু নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। ৫ বছর পর বুধবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছেন ক্যারিয়ার সেরা ১৬৯ রানের ইনিংস। এমন ইনিংসের পর গণমাধ্যমের সামনে অভিমানী সুরে কথা বলেছেন অভিজ্ঞ ওপেনার।
বুধবার নেলসনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চতুর্থ বাংলাদেশি ব্যাটার হিসেবে তাদেরই মাটিতে হাঁকিয়েছেন সেঞ্চুরি। শুধু তাই নয় তার ১৬৯ রানের ইনিংস কিউইদের মাটিতে এশিয়ার যে কোনও ব্যাটার হিসেবে সর্বোচ্চ। ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খাওয়া সৌম্য কীভাবে কঠিন সময়টা পার করেছেন সেই প্রশ্নে বলেছেন, ‘আমিতো খেলোয়াড়, আমাকে খেলতেই হবে। ভালো খেললে হয়তোবা ভালো নিয়ে লিখবেন, খারাপ করলে খারাপ নিয়ে লিখবেন। এটা আপনাদের কাজ, আমার কাজ খেলা। ওগুলো নিয়ে ওরকমভাবে ভাবা হয়নি। ভাবলে হয়তোবা নিজের ওপরই চাপ আসতো।’
খারাপ সময় কাটাতে নেতিবাচক খবর থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেছেন সৌম্য, ‘একটা সময় হয়তোবা দেখতাম। এখন সত্য কথা বলতে গত প্রায় এক বছর আমার ফোনে কোন নিউজ আসে না। কোন বন্ধু ক্রিকেট নিয়ে কথা বললে আমি তার সঙ্গে থাকি না। যে পজিটিভ কথা বলে আমি তার সঙ্গে থাকি। ভালো-খারাপ থাকবে কিন্তু খারাপ করলে তো ক্রিকেট ছেড়ে চলে যেতে পারবো না যেহেতু ক্রিকেট খেলোয়াড়। ক্রিকেটের জন্যই এতদূর আসা। ক্রিকেটের জন্য পরিশ্রম করছি। ক্রিকেট নিয়েই চিন্তা করছি।’
এরপরই সৌম্য বলেছেন ক্রিকেটার হিসেবে হাসির চেয়ে বেশি কেঁদেছেন তিনি, ‘ওঠা-নামা কী ভাইৃ. ক্রিকেট খেলোয়াড় প্রত্যেক দিন ভালো খেলবে না। যেমন একটা মানুষ প্রত্যেকদিন ভালো খাবার প্রত্যাশা করেন না। আমরাও খেলোয়াড়রা প্রত্যেক দিন ভালো প্রত্যাশা করি না। ক্রিকেটাররা হাসির চেয়ে বেশি কাঁদি।’
এমন প্রত্যাবর্তনে সৌম্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন তার পরিবার, স্ত্রী, সতীর্থ এবং প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে, ‘প্রথমত ধন্যবাদ দেবো আমার পরিবারকে। আমার স্ত্রীকে; সে সব সময় সমর্থন যুগিয়েছে। সতীর্থরা তো আছেই। হাথুরুসিংহে আসার পর তার সঙ্গে যতটুকু ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছি সে অনেক সমর্থন যোগাচ্ছে।’
বিশ্বকাপ দল গঠনের প্রায় তিন মাস আগে হঠাৎ করে আলোচনায় আসেন সৌম্য সরকার। কোথাও বলার মতো পারফর্ম না করলেও তাকে ক্যাম্পে ডাকেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। তাকে নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করেছেন, সুযোগ দিয়েছেন ইমার্জিং এশিয়া কাপে। এরপর বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সুযোগ পান ওয়ানডেতেও। শূন্য রানে দেন প্রতিদান। বিশ্বকাপের পর এবার কিউইদের বিপক্ষে অ্যাওয়ে সিরিজেও ডাক পেয়েছেন। প্রথম ম্যাচে অবশ্য শূন্য ফিরেছিলেন। বল হাতে ছিলেন খরুচে। অবশেষে দ্বিতীয় ম্যাচে খেলেছেন রেকর্ডগড়া এক ইনিংস।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলেনে অনুমিতভাবেই হাথুরুসিংহেকে নিয়ে প্রশ্ন ছুটে যায় তার কাছে। রাখ-ডাক না রেখে সৌম্য বলেন, কোচ তাকে ভালো বোঝেন, ‘এরকম কোনও কিছুই না, সৌম্য সৌম্যই ছিলাম। হয়তোবা সে (হাথুরুসিংহে) আমাকে ভালো বোঝে। যে জন্য ছোট একটা কথা বলেছে যা আমার জন্য ক্লিক করেছে।’
সৌম্য আরও যোগ করে বলেছেন, ‘আমরা কীভাবে দেখি সেটা বড় বিষয়। একটা মানুষ হেঁটে গেলে তার মধ্যে অনেক নেগেটিভিটি পাবেন। আপনি যদি কেবল নেগেটিভি দেখতে চান নেগেটিভিটিই দেখবেন। পজিটিভ চিন্তা করলে পজিটিভ জিনিস পাবেন। হয়তো উনি পজিটিভ জিনিসটাই চিন্তা করেন।’


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২১, ২০২৩ | সময়: ৬:৩২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ