ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল ক্যাম্পেইন উপলক্ষে রাসিকে সংবাদ সম্মেলন 

স্টাফ রিপোর্টার :
রাজশাহী মহানগরীতে জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন-২০২৩ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্টিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (০৭ ই ডিসেম্বর) সকালে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন আয়োজিত নগর ভবনের সরিৎ দত্ত সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এফ এ এম আঞ্জুমান আরা বেগম।

 

তার বক্তব্যে দেশে সুষ্ঠ ও সফলভাবে জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন বাস্তবায়নের লক্ষে ও ভিটামিন ‘এ’ প্লাসের গুরুত্ব উল্লেখ করে বিস্তারিত বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ভিটামিন ‘এ’ অত্যবশ্যকীয় পুষ্টি Micronutrient)  , যা শিশুর স্বাভাবিক দৃষ্টি, দৈহিক বৃদ্ধি ও রোগ প্রতিরোধের জন্য অপরিহার্য। এটি চর্বিতে দ্রবনীয় ভিটামিন যা মানবদেহে তৈরী হয় না বলে খাদ্যের মাধ্যমেই এর চাহিদ পূরণ করতে হয়। প্রাণীজ উৎস এর মাধ্যমে ভিটামিন ‘এ’ উৎপন্ন হয় তা হলো ছোট মাছ, মাংস, কলিজা, ডিম। উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে তৈরী হয় গাজর, মিষ্টি আলু, সবুজ শাক, পাকা আম।

 

 

ভিটামিন এ শিশুদেহে যে যে ভূমিকা পালন করে তা উল্লেখ করে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এফ এ এম আনজুম আরা বলেন, ভিটামিন এ শিশুদেহে দৃষ্টি শক্তি স্বাভাবিক রাখে, রাতকানা ও অন্ধত্ব প্রতিরোধ করে। শিশু দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, শিশু মৃত্যুর ঝুকিঁ কমায়। শিশু দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করে। ডায়রিয়া ব্যাপ্তিকাল ও হাম পরবর্তী জটিলতা কমায়।

 

 

ভিটামিন এ এর অভাবজনিত কারণে কি কি রোগ হয় তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভিটামিন এ এর অভাবে শিশুদের মাঝে রাতকানা, অন্ধত্ব রোগ হয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে শিশুর মৃত্যু ঝুকিঁ বাড়ায়। শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত করে। শিশুর ত্বক খসখসে ও অমসৃণ হয় ইত্যাদি।

 

 

এফ এ এম আনজুম আরা বলেন, ভিটামিন এ এর অভাবে থাকে দরিদ্র জনগোষ্টীর ৫ বছরের কম বয়সী শিশু, কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণকারী শিশু। অপুষ্টি ও ঘন ঘন সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় শিশু যদি গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মা, খাদ্যে প্রাণীজ উৎসের খাবারের অনুপস্থিতি থাকে।

 

প্রাথমিক কি কি কারণে উল্লেখিত সমস্যগুলো হতে পারে তার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, ভিটামিন এ একটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান যা শরীর গঠনে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন এ এর অভাবে শরীরে নানারকম রোগের বাসা বাঁধতে পারে। গৃহীত খাদ্যে প্রয়োজনীয় ভিটামিন এ না থাকা। শাল দুধ না খাওয়ানো। ত্রুটিপূর্ণ সম্পূরক খাদ্যভাস তৈরী না করা। দারিদ্র ও ভিটামিন সমৃদ্ধ প্রাণীজ খাদ্যের উচ্চমূল্য থাকা। শিশুর স্বাস্থ্যে ভিটামিন ‘এ’ এর গুরুত্ব সম্পর্কে না জানা।

 

ভিটামিন এ এর অভাব সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে আছে উল্লেখ করে রাসিকের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ভিটামিন এ এর অভাব সারা বিশ্বের মানুষের মাঝেই আছে। প্রতি বছর সারা বিশ্বে প্রায় ৫ লক্ষ্য শিশু ভিটামিন এ এর অভাবজনিত রাতকানা রোগে ভোগে, বাংলাদেশে এই সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার এর মতো। বাংলাদেশে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে ২০.৫% মধ্যম থেকে মারাত্নক ভিটামিন ‘এ’ এর স্বল্পতায় ভূগছে।

 

 

ভিটামিন এ এর অভাব প্রতিরোধে করণীয় উল্লেখ করে এফ এ এম আনজুম আরা বলেন, ভিটামিন এ এর অভাব প্রতিরোধে জন্মের পরপরেই নবজাতক কে শাল দুধসহ মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। জন্মের পর প্রথম ৬ মাস পূর্ণ হলে শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। শিশুর বয়স ৬ মাস পূর্ণ হলে মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি ভিটামিন এ সমৃদ্ধ সুষম খাবার খাওয়ানো। বয়স অনুযায়ী নিয়মিত ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো। গর্ভবতী ও প্রসূতি মাকে তার পুষ্টি ও শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য বেশি করে গাঢ় রঙের শাকসবজি ও হলুদ ফলমূল খেতে দেওয়া। পরিবারের রান্নায় ভিটামিন এ সমৃদ্ধ ভোজ্য তেল ব্যাবহার করা বিশেষ করে বাজারে যেসকল তেলে ভিটামিন ‘এ’ থাকে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

 

এসময় উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিথ ছিলেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সাদিয়া আফরিন, ভ্যাটেরিনারি সার্জন ডাঃ মোঃ ফরহাদ উদ্দিন, জনসংযোগ কর্মকর্তা মোস্তাফিজ মিশু, ফুড এন্ড স্যানিটেশন অফিসার শেখ আরিফুল হক, সহকারী জনসংযোগ কর্মকর্তা মোঃ রকিবুল হক তুহিনসহ গণমাধ্যমকর্মীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সানশাইন / শামি


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৭, ২০২৩ | সময়: ১০:১১ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine