সর্বশেষ সংবাদ :

বাঘায় সড়কের ঢালে এখন সজনের চাষ

নুরুজ্জামান, বাঘা: সজিনা ও তার পাতা অতি পরিচিত ঔষধী ও সুস্বাদু সবজি। আমাদের দেশে এটি একটি বহুল পরিচিত গাছ। সজিনার ইংরেজি নাম ‘ড্রামস্ট্রিক’ যার অর্থ ঢোলের লাঠি এবং বৈজ্ঞানিক নাম মরিঙ্গা অলেইফেরা।
সজিনার উৎপত্তিস্থল পাক-ভারত উপমহাদেশ হলেও শীত প্রধান দেশ ব্যতিত সারা পৃথিবীতেই এই গাছ জন্মাতে দেখা যায়। আমাদের দেশে সারা বছর সজনে পাওয়া যায়। ঔষধি গুণাগুণের বিবেচনায় সজিনার তুলনা হয়না।
বর্তমানে নতুন ভাবে নির্মিত চারঘাট-বাঘা রাস্তার দুই ধারে ব্যাপক হারে লাগানো হচ্ছে পুষ্টি সমৃদ্ধ এই সজনে গাছ। যার প্রচেষ্টায় রয়েছেন বাঘা উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান। তার এই উদ্যোগে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
সরেজমিন বাঘা উপজেলার পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত শেষ সীমানা চন্ডিপুর তিনখুটির মোড় থেকে লক্ষ করা গেছে পশ্চিম দিকে মীরগঞ্জ পর্যন্ত রাস্থার দু’ধার দিয়ে লাগানো হচ্ছে শত-শত সজনে গাছ। রাস্তাটি বানেশ্বর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ডাবল লেন হিসাবে উন্নয়ন কাজ চলামান। এসকল সজনে গাছে বছরে তিন থেকে চারবার সজনে ধরবে বলে মন্তব্য করেন উপজেলা কৃষিবীদ কামরুল ইসলাম।
তার মতে, আমাদের দেশে সজনে ডাঁটা প্রধানত দুই প্রজাতির। এরমধ্যে এক প্রজাতির সজনে বছরে একবার ফলন দেয়। এই সজনের দুটি জনপ্রিয় জাত হল- পি.কে.এম ওয়ান এবং পিকেএম- টু।
এ ছাড়াও স্থানীয় ভাবে আরো একটি প্রজাতির নাম বারোমাসি সজনে বা ল্যাজনা বলে খ্যাত।
তিনি আরো বলেন, আমরা যে গাছগুলো লাগাচ্ছি সাধারণত এ গাছের উচ্চতা ১৫ থেকে ২৫ ফুট বা তারও বেশি হয়ে থাকে। ফলনের দিক থেকে একটি পূর্ণ বয়স্ক গাছে বছরে এক হাজার ৬শ’ টি পর্যন্ত সজিনার ফল বা ডাটা উৎপাদন হবে। বারোমাসি চারা লাগানোর ৬ মাস পর থেকে ফল ধরবে এবং তা সারা বছর পাওয়া যাবে। সাধারণত বছরে ২০টি ফলে ১ কেজি সজনে হয়। এ হিসেবে ১টি গাছ থেকে বছরে অনায়াসে ২ মণ সজনে উৎপন্ন হবে।
অপরদিকে উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, পুষ্টি বিজ্ঞানীরা সজিনা গাছকে অলৌকিক গাছ বলে অভিহিত করেছেন। কারণ এর পাতায় আট রকম অত্যাবশ্যক এমাইনো এসিডসহ ৩৮% আমিষ থাকে যা বহু উদ্ভিদে নাই। সজিনার পাতা পুষ্টিগুণের আধার।
এছাড়াও শুকনো সজনের পাতায় উচ্চ মাত্রায় পুষ্টি থাকে। সজনে পাতার গুড়া ডায়াবেটিকের মহা ঔষধ। সজিনার বীজের তেলে সে এসিড থাকে তা বহু রোগ প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। এ গাছের প্রতি গ্রাম পাতায় গাজরের চারগুণ বেশি ভিটামিন এ, দুধের চেয়ে ৪ গুণ বেশি ক্যালশিয়াম, কলার চেয়ে ৩ গুণ বেশি পটাসিয়াম, কমলালেবুর চেয়ে সাতগুণ বেশি ভিটামিন ও প্রোটিন আছে। এক কথায় এর উপাদান মানবদেহের জন্য অত্যান্ত উপকারী। নানা দিক ভেবে আমরা রাস্তার দুই ধার দিয়ে ফেলা নতুন মাটিতে সজনে গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের এ কাজ চলমান রয়েছে।
এ বিষয়ে বাঘা শাহদৌলা সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিষয়ের অধ্যাপিকা শরিফা খাতুন ও বাঘা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎস আসাদুজ্জামান বলেন, সজিনা পাতায় ৪২% আমিষ, ১২৫% ক্যালসিয়াম, ৬১% ম্যাগনেসিয়াম, ৪১% পটাশিয়াম, ৭১% লৌহ, ২৭২% ভিটামিন-এ এবং ২২% ভিটামিন সি সহ দেহের আবশ্যকীয় বহু পুষ্টি উপাদান থাকে।
ফলে এটি অন্ধত্ব এবং রক্তস্বল্পতা সহ বিভিন্ন ভিটামিন ঘাটতি জনিত রোগের বিশেষ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। সজিনার পাতাকে এন্টি-অক্সিডেন্টের খনি বলা হয়। এতে ৪৬ রকমের এন্টি-অক্সিডেন্ট বিদ্যমান। এরমধ্যে ভিটামিন সি, বিটা ক্যারোটিন, কিউরেকটিন এবং ক্লোরোজেনিক এসিড বিদ্যমান।
এদিকে উপজেলা কৃষি অফিসারের এই উদ্যোগে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয় লাকজন। তারা বলছেন, বাঘায় এর আগেও অনেক কৃষি অফিসার এসেছেন তবে শফিউল্লা সুলতান তিনি শুধু একজন কৃষি অফিসারই নন, তিনি একজন উদ্যোক্তাও বটে। তার প্রচেষ্ঠায় বাঘার প্রধান অর্থকারি ফসল আম কয়েক বছর ধরে বিদেশে রপ্তানী করা হচ্ছে। এক কথায় পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে এখন অত্র উপজেলায় ফসলের উৎপাদন ও চাষাবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে।


প্রকাশিত: মে ৬, ২০২৩ | সময়: ৪:৩০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ