রামেক হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টারের অপসারণের দাবি

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার রাসেল আলীর অপসারণের দাবিতে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারিরা পরিচালকের আবেদন দিয়েছে। ওয়ার্ড মাস্টার রাসেলের উপর অনাস্থা এনে সোমবার (২৩ অক্টোবর) রামেক হাসপাতালের রাজস্ব খাতের (চতুর্থ শ্রেণির) ১৬৫ জন কর্মচারির মধ্যে ১৫১ জন কর্মচারির স্বাক্ষরিত একটি আবেদন পরিচালক বরাবর দেয়া হয়েছে। একই সাথে রামেক হাসপাতালের তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারি কল্যাণ সমিতির পক্ষেও রাসেলকে অপসারণ করার দাবি করা হয়েছে। অপসারণের দাবির আবেদনের প্রেক্ষিতে আবারও ওয়ার্ড মাস্টার রাসেলের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। রামেক হাসপাতালের স্থায়ী তদন্ত কমিটির সদস্যরা তার বিরুদ্ধে এ তদন্ত করছেন বলে জানিয়েছেন পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. এফএম শামীম আহাম্মদ।
চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারি ইউনিয়সের সভাপতি মোজাহার আলী ও সাধারণ সম্পাদক সুমন ইসলাম স্বাক্ষরিত আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২২ সেপ্টেম্বর ওয়ার্ড মাস্টার রাসেল আলী তার ফেসবুক আইডিতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সকল কর্মচারিদের ‘জানোয়ারের বাচ্চা’ ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে পোস্ট দেন। সেখানে বেশ কিছু লোকজন অশ্লীল ভাষায় কমেন্ট করেছে। এতে হাসপাতালের কর্মচারিদের ভাবমুর্তিক্ষুন্ন হয়েছে। ওয়ার্ড মাস্টার রাসেল আলীর বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ড বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যার কারণে তিনি আরও বেশি বেপোরোয়া আচরণ এবং সরকারি কাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। যা প্রতিষ্ঠানসহ কর্মচারিদের জন্যই মঙ্গলজনক নয়। আমরা রাজস্ব খাতে ১৬৫ জন কর্মচারির মধ্যে ১৫১ জন কর্মচারীর রাসেলের প্রতি অনাস্থা প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে তাকে অপসারণসহ শাস্তির দাবি করছি।
জানা গেছে, রামেক হাসপাতালের কর্মচারি ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মইনউদ্দিনকে হুমকি, টাকার বিনিময়ে দৈনিক মজুরী ভিত্তিক কর্মচারি নিয়োগ, কার্মচারিদের কাছ থেকে মাসিক, সাপ্তাহিক চাঁদা তোলা, কারণে অকারণে কর্মচারি ছাটাই ও আবার টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেয়াসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০২০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ওয়ার্ড মাস্টার রাসেল আলীর বিরুদ্ধে তৎকালীন পরিচালক চার সদস্য বিশিষ্ঠ তদন্ত কমিটি গঠন করেন। যদিও স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় ওয়ার্ড মাস্টার রাসেলের এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাপারে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর মূলত এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত কমিটিকে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথাও বলা হয়। যদিও সাবেক পরিচালক দায়িত্বে থাকা অবস্থায় সেই তদন্ত আলোর মুখ দেখেনি। তদন্ত চলা অবস্থায় ওয়ার্ড মাস্টাল রাসেলের বিরুদ্ধে কর্মচারিরা বেশ কয়েকবার মানববন্ধন করে। মোটা অংকের টাকা নিয়ে চাকরি না দেয়া, কর্মচারিদের কাছ থেকে মাসিক ও সপ্তাহিক চাঁদা তোলাসহ নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে কর্মচারিরা রাসেলের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে।
এদিকে বর্তমান পরিচালক হাসপাতালে যোগদানের পর ওয়ার্ড মাস্টার রাসেলের বিরুদ্ধে গঠন করা তদন্ত কমিটিকে পুনরায় তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নিদের্শ দেন। এতে তদন্ত কমিটির সদস্যরা বিষয়টি পুন:তদন্ত করে ওয়ার্ড মাস্টার রাসেলের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের সত্যতা পান। তদন্ত কমিসটির সদস্যরা ওয়ার্ড মাস্টার রাসেলের নিয়মবর্হিভুতভাবে টাকার বিনিময়ে দৈনিক মজুরী ভিত্তিক কর্মচারি নিয়োগ, মাসিক মাসোয়ারা তোলাসহ তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত সব অভিযোগের প্রমাণসহ প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২ আগস্ট ওয়ার্ড মাস্টার রাসেলকে প্রথমবারের মত সতর্ক করা হয়। যদিও এর আগে তদন্ত কমিটির সদস্যরা ওয়ার্ড মাস্টার রাসেলকে দুরবর্তিস্থানে বদলী, তার দুটি ইনক্রিমেন্ট বাতিলের সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু রাসেলের শাস্তি স্বরুপ শুধু মাত্র প্রথমবারের মত সতর্ক করা হয়। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে ওয়ার্ড মাস্টার রাসেল ক্ষোভে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে ফেসবুকে পোস্ট দেন।
বিষয়টি নিয়ে রামেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. এফ এম শামীম আহাম্মদ জানান, কর্মচারিরা ওয়ার্ড মাস্টার রাসেলের অপসরণ দাবিতে অভিযোগ দেয়ার পর স্থায়ী তদন্ত কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে। তারা বিষয়টি তদন্ত করছেন। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


প্রকাশিত: অক্টোবর ২৬, ২০২৩ | সময়: ৬:৫৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ