ছাতিমের গন্ধে বিভোর মন, নির্মল প্রশান্তি

স্টাফ রিপোর্টার: শীতের আগে প্রকৃতিতে সাধারণত কোন ফুল ফুটতে দেখা যায় না। প্রকৃতিতে যখন কিছুটা ফুল শূণ্যতা বিরাজ করে তখন ফোটে ছাতিম। হেমন্তের গোধূলি লগ্ন থেকে রাত অবধি মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে প্রকৃতিকে মাতিয়ে রাখে ছাতিম। বাতাসে ছাতিমের সুবাস অন্য ধরনের মাদকতা ছড়ায় হৃদয়ে। বুনো ফুল ছাতিমের মিষ্টি ঘ্রাণ।
এক সময় গ্রামে দেখা মিলতো ছাতিম গাছের। সন্ধ্যা নামলেই সুঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়তো বাতাসে। আর সেই সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়তো সারা গ্রাম। এ যেনো এক অন্য ধরনের পরিবেশ। কয়েক দশক আগে গ্রাম বা মাঠে কোন জঙ্গলে দেখা মিলতো অযত্নে বেড়ে উঠা ছাতিম গাছের। কিন্তু এখন আর সেভাবে দেখা মেলে না। সেই ছাতিম ফুলের ঘ্রাণের মাদকতা ছড়াচ্ছে রাজশাহী মহানগর জুড়ে। কংক্রিটের শহরে নগরিকের যান্ত্রিক জীবনে নির্মল প্রশান্তি এনে দিচ্ছে এ ফুলের সুবাশ।
রাজশাহী মহানগরীর বেশ কয়েকটি মহাসড়কের দুই পাশে ছাতিম গাছ লাগানো আছে। বিশেষ করে লক্ষ্মীপুর মোড় থেকে শহীদ কামারুজ্জামান চত্বর, নগরীর উপশহর ঈদগাহ মাঠের পশ্চিম পাশের রাস্তামসহ আরো কয়েকটি রাস্তার দুই পাশে রোপন করা হয়েছে ছাতিম গাছ। এখন সেসব গাছেই ফুটেছে ফুল। সারাদিন পরিশ্রম করে সন্ধ্যায় ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফেরা পথচারীদের প্রাণে অন্য রকম ভালোলাগা সৃষ্টি করতে ছাতিম ফুলের ঘ্রাণ।
রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন সড়কের ধারে কয়েক বছর আগে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে লাগানো হয়েছিল ছাতিম গাছগুলো। সেই গাছগুলোতে ফুটেছে ফুল। সন্ধ্যা নামলেই সেই ফুলগুলো থেকে ছড়িয়ে পড়ে সুঘ্রাণ। এ সুবাসে মুগ্ধ হয় পথচারী।
শরতের এ শেষ বেলাতে গাছজুড়ে শুধু ফুল আর ফুল। সাদা সাদা ফুলে ঢেকে থাকে পুরো গাছ। বিশেষ করে সন্ধ্যা থেকে শুরু করে রাতের পুরো সময়টায় এ ছাতিম ফুল ঘ্রাণ ছড়ায়। ঝাঁকড়া পত্রপল্লব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা উঁচু এই গাছের শাখা-প্রশাখায় ভরা সবুজ পাতা আর সাদা ফুলে সবুজাভ রঙে থোকায় থোকায় অগুনতি ফুলে প্রকৃতির কী নিঃসর্গ তা না দেখলে অনুভব করা যায় না। ছাতিম গাছ যেন তার সুবাসিত শিশি উপুড় করে সন্ধ্যার বাতাসে ঘ্রাণ ঢেলে দেয়। রাত বাড়ার সাথে সাথে পুরো এলাকা যেন হয়ে পড়ে মাদকতাময়। চাঁদের আলোতে দেখা যায় সারা গাছ ছেয়ে থাকা গুচ্ছ গুচ্ছ সাদা ফুল।
রাজশাহী মহানগরীর সাধুর মোড় এলাকার মিলন জানান, ছাতিম গাছ শহরে দেখা মিলতো না। গ্রাম থেকেই হারিয়ে যেতে বসেছিল গাছটি। হারিয়ে যেতে বসা ছাতিম ফুলের সুবাশ এখন নগরীতে মিলছে। বড় বড় গাছ সাদা ফুলে ঢেকে যায়। এ গাছের ফুলের ঘ্রাণ ছড়িয়ে যায় অনেক দুর পর্যন্ত।
নগরীর কয়েরদাঁড়া এলাকার রেদওয়ানুল হক জানান, সন্ধ্যা নামলেই নগরীর যেসব রাস্তার দুই ধারে ছতিম গাছ লাগালো আছে তার ফুলের মায়াবী ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশে। সেসব রাস্তা দিয়ে যেতেই বেশ ভালো লাগে।
শরতের শেষে সারা গাছ ভরে গুচ্ছবদ্ধ, তীব্রগন্ধী, সবুজ-সাদা ছোট ছোট ফুল ফোটে। ফল সজোড়, থোকায় থোকায় ঝুলে থাকে। এর আদি আবাস ভারত, চীন ও মালয়েশিয়ায়। ফুল সাদা ও আকারে কিছুটা বড়। এ গাছের সংস্কৃত নাম সপ্তপর্ণী। অঞ্চলভেদে একে ছাতিয়ান, ছাইত্যানসহ নানা নামে ডাকা হয়। ছাতিম ঘিরে অনেক মিথও রয়েছে। এ গাছে নাকি ভূত থাকে তাই একে শয়তানের গাছও বলে। পশ্চিমা বিশ্বেও আছে ছাতিমের বদনাম, ইংরেজিতে একে ডাকা হয় ‘ডেভিলস ট্রি’ নামে।


প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২৩ | সময়: ৫:১৪ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ