যুবলীগের সম্মেলন ঘিরে বর্ণিল সাজ, ব্যাপক প্রস্তুতি : বিলবোর্ড-পোষ্টারে একাকার নগরী

স্টাফ রিপোর্টার: আর একদিন পরেই রাজশাহী যুবলীগের প্রতিক্ষীত সম্মেলন। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর রাজশাহী নগর ও জেলা যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনকে ঘিরে এখন উজ্জীবিত যুবলীগ। সম্মেলনকে ঘিরেও রাজশাহী যুবলীগে প্রাণ ফিরে এসেছে। পদ প্রত্যাশিরাও হয়েছেন তৃণমূল নেতাকর্মী মুখি। পুরো নগরীজুড়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু মহানগর ও জেলা যুবলীগের সম্মেলন। কে হচ্ছেন রাজশাহী মহানগর ও জেলা যুবলীগের আগামী দিনের কান্ডারী। এ নিয়ে চলছে নানান গুঞ্জন।
এবারের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনকে ঘিরে পদ প্রত্যাশিদের ফেস্টুন ব্যানার শোভা বর্ধন করছে পুরো নগরীজুড়েই। তবে এ ক্ষেত্রে নগর যুবলীগের উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা তুঙ্গে রয়েছে। কিছুটা অস্থিরতাও বিরাজ করছে। এরই মধ্যে যুবলীগের এক কর্মীর ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে।
টানা ২০ বছরের রাজশাহী যুবলীগের পট পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। এরফলে আওয়ামী লীগের প্রাণশক্তি এ সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রাণচাঞ্চল্য হয়ে উঠেছে। তবে এবার নতুন আঙ্গিকে যুবলীগকে সাজানো হবে এমন প্রত্যাশা নেতাকর্মীদের। রাজশাহীতে দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না হওয়া যুবলীগ অবশেষে চাঙা হয়েছে। রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলী ও সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন বাচ্চুর বয়স ৬০ পেরিয়েছে। তারা নিজ নিজ পদে আছেন প্রায় দেড় যুগ ধরে। আবার জেলার সভাপতি আবু সালেহও দায়িত্বে আছেন দেড় যুগের বেশি সময়। জেলার সাধারণ সম্পাদক এইচএম খালিদ ওয়াসি কেটুর মৃত্যুর পর চার বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন আলী আযম সেন্টু। তারাও আর বয়সে যুবক নন।
২৬ সেপ্টেম্বর মহানগর ও জেলা যুবলীগের এ সম্মেলন। সাত বছর পর হচ্ছে সম্মেলনের এই আয়োজন। নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা সম্মেলন ঘিরে তৎপর হয়ে উঠেছেন। তৃণমূলও চাঙা হয়েছে। তবে দিনক্ষণ এগিয়ে আসায় শুরু হয়েছে এক ধরনের অস্থিরতা। নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়াচ্ছেন কুৎসা। এরই মধ্যে যুবলীগের এক কর্মীর ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে।
সম্মেলনকে সামনে রেখে নগরজুড়ে সাজ সাজ রব বিরাজ করছে। ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে পুরো নগরী। বিশেষ করে পদপ্রত্যাশীরা নিজ নিজ নামের ফেস্টুনে রাঙিয়েছেন নগরীকে। আবার নগর পেরিয়েও ব্যানার ফেষ্টুনে ভরে উঠেছে সর্বত্রই। নগর যুবলীগের ব্যানার ফেষ্টুন শোভা পাচ্ছে শাহ মখদুম বিমানবন্দর গেট থেকেই। কর্মীরাও সমর্থন জানিয়ে নেতার পোস্টার টানিয়েছেন। সব মিলে রাজশাহী এখন উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে। তবে সপ্তাহখানেক ধরে নগর যুবলীগে চলছে অস্থিরতা। মানিক নামের এক কর্মীকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। এ ছাড়া অতীত তুলে কয়েকজন নেতা চালাচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রপাগান্ডা।
এবার যুবলীগকে চাঙ্গা করতে তৃণমূল নেতাকর্মীরা সভাপতি হিসাবে নতুন মুখের ওপর ভরসা রাখতে চাচ্ছেন। যুবলীগের নেতাকর্মীরা চাচ্ছেন তরুণ নেতৃত্ব। সব সময় তৃণমূল নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছেন, আপদে বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছেন এমন সভাপতি-সম্পাদক নির্বাচিত করার জন্য হাইকমান্ডের কাছেও আহ্বান জানিয়েছেন তৃণমূল নেতৃবৃন্দ।
পদপ্রত্যাশীরা বলছেন, আওয়ামী লীগের পরই সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে যুবলীগ সবচেয়ে শক্তিশালী। গেল ২০০৯ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নানা আন্দোলন-সংগ্রামে রাজশাহীতে তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি যুবলীগ। এ নিয়ে অসন্তোষ ছিল নেতা-কর্মীদের মাঝে। এমনকি মূল দল আওয়ামী লীগের মাঝেও হতাশা ছিল। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন করে কমিটি গঠনের উদ্যোগে এখন বেশ উজ্জীবিত সবাই।
সভাপতি প্রার্থী তৌরিদ আল মাসুদ রণি বলেন, দীর্ঘদিন পর সম্মেলনের ঘোষণায় উজ্জীবিত নেতারা। বিশেষ করে প্রতিটি ওয়ার্ডে সাধারণ নেতা-কর্মীরা খুশি। সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নাহিদ আকতার নাহান বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে কর্মীদের মধ্যে যে উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে, তাতে আগামী নির্বাচনে এই সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। নগর যুবলীগ বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে এবারের কমিটিতে থাকছেন না। কারণ কেন্দ্র থেকে পদ প্রত্যাশিদের জীবনবৃন্তান্তে অংশ নেননি।
এদিকে রাজশাহী জেলা যুবলীগের কমিটি হয়েছিল ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ। সে সময় দ্বিতীয়বারের মতো সভাপতি হন আবু সালেহ। আবু সালেহ ২০০৪ সালে প্রথম জেলা যুবলীগের সভাপতি হন। এরপর তিনিও ১৯ বছর ধরে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। দ্বিতীয় মেয়াদে আবু সালেহর কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হন খালিদ ওয়াসি কেটুু। কিছুদিন পর কেটু মারা গেলে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন আলী আজম সেন্টু। তবে দুজনের বিরোধের কারণে সংগঠনে স্থবিরতা লম্বা সময় ধরেই। অবশেষে সম্মেলনের দিন ঠিক হওয়ায় উজ্জীবিত জেলার নেতারাও।
একই দিনে একই মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে নগর ও জেলা যুবলীগের এই সম্মেলন। অনেকে বলছেন – বিষয়টি সবদিক থেকে ভাল হয়েছে। এ যেন একই মঞ্চে দুই ভাইয়ের বিয়ে এবং একই খরচে অতিথি আপ্যায়ন। আবার নগর ও জেলা নেতৃবৃন্দ নিজ নিজ সম্মেলন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় একে অপরের কমিটিকে প্রভাব খাটাতে চাইবে না। অর্থাৎ প্রভাবমুক্তভাবে দু’টি কমিটি পাবে রাজশাহী যুবলীগ।
ব্যানার ফেস্টুনে নগর যুবলীগের রঙ্গীণ উপস্থাপনের দিক থেকে পিছিয়ে আছে জেলা যুবলীগ। তবে পদ-প্রত্যাশিরা জোরে-শোরে নেতা-কর্মীদের কাছে পেতে সংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এব্যাপারে জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবারে সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশি। তিনি জানান, সম্মেলন ঘিরে নগর যুবলীগের ব্যানার ফেস্টুন বেশী থাকলেও আমাদের ব্যস্ততা কম নয়। পুরো জেলা জুড়েই আমাদের ভোটার ও কমিটি। সবার কাছে যাওয়া, ভোট চাওয়া এবং সংযোগ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি। তিনি বলেন, ভোটার ও নেতারা সার্বিক ও নিরপেক্ষ বিবেচনা করলে তিনি সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে শতভাগ আশাবাদি।
জেলা কমিটির জন্যও সভাপতি পদে ১০ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ১৮ জন নেতা জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। তবে গঠনতন্ত্র মেনে এবার প্রার্থী হিসেবে জীবনবৃত্তান্ত দেননি সভাপতি সালেহ। জেলায় সভাপতি পদের জন্য জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন বর্তমান সহসভাপতি মাহমুদ হাসান ফয়সাল সজল, মোজাহিদ হোসেন মানিক, আলমগীর মুর্শেদ রঞ্জু, আনোয়ার হোসেন, তাসিকুল ইসলাম, আরিফুল ইসলাম রাজা, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলী আযম সেন্টু, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের হোসেন রুবন, পবা উপজেলা যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি এমদাদুল হক, রেজাউন নবী আল মামুন। আর সম্পাদক পদে জীবনবৃত্তান্ত দিয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মেরাজুল ইসলাম মেরাজ, জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোবারক হোসেন মিলন, সামাউন ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান, জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সেজানুর রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু প্রমুখ।


প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৩ | সময়: ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ