রাবি ছাত্রলীগ নেতৃত্বে আসতে চান শিক্ষার্থীকে হত্যার হুমকি দেয়া সেই ছাত্রলীগ নেতা

রাবি প্রতিনিধি:

গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের এই ইউনিটের নতুন কমিটিতে কারা আসতে যাচ্ছেন তা নিয়ে ক্যাম্পাসে চলছে আলোচনা। আলোচনায় এগিয়ে থাকা এসব নেতাদের মধ্যে একজন হলেন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের সাধারণ সম্পাদক নাইম ইসলাম। তবে ছাত্রলীগের এই নেতার বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীকে নির্যাতন ও শিবির ট্যাগ দিয়ে হত্যার হুমকি, সিট বাণিজ্য, শিক্ষার্থীকে জোরপূর্বক রুম থেকে বের করে দিয়ে আসন দখলসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।

 

 

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থী ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী কৃষ্ণ রায়কে হল কক্ষে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাইম ইসলামসহ বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী। এসময় ভুক্তভোগীকে শিবির আখ্যা দিয়ে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। এই ঘটনায় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নাইম ইসলামের বিচার চেয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। পরবর্তীতে ঘটনাটি দেশব্যাপী আলোচিত হলে রাবি’র সোহরাওয়ার্দী হল প্রশাসন তদন্তে নামেন।

তদন্তে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয় এবং তদন্ত কমিটি হল শাখার সাধারণ সম্পাদক নাইমের ছাত্রত্ব বাতিলসহ ৪ দফা সুপারিশ করে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সে সময় রাবি শাখা ছাত্রলীগ থেকেও নাইম ইসলামকে শোকজ করা হয়।

এছাড়াও চলতি বছরের ৩ জুন, ছাত্রলীগের এক দলীয় কর্মসূচিতে না যাওয়ায় দুই শিক্ষার্থীর বিছানাপত্র নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠে হলের সাধারণ সম্পাদক নাঈম ইসলাম ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জোনায়েদ আহমদ ও একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসেন। এই নেতার বিরুদ্ধে সিট বাণিজ্যেরও একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

 

 

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সোহরাওয়ার্দী হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, “নাইম হলের আতঙ্কের নাম। হলে উঠতে গেলে সিট প্রতি পাঁচ থেকে দশ হজার টাকা গুনতে হয়। তাছাড়া টাকা দিয়ে হলে উঠলেও জোর করে বিভিন্ন প্রোগ্রামে নিয়ে যেতে বাধ্য করেন তিনি ; না গেলে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন করে।

শিক্ষার্থীদের একাংশ মনে করেন, “শাখা ছাত্রলীগের যেসব নেতাদের বিরুদ্ধে হলের সিট দখল, সিট বাণিজ্য, শিক্ষার্থী নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে; তারা যেনো রাবি শাখা ছাত্রলীগের নেতৃত্বে না আসতে পারে। এমনকি তাদেরকে কোনো ধরনের পদ দেওয়া উচিত নয় বলে মত তাদের।”

শিক্ষার্থীদের দাবি, “এসব নেতারা দায়িত্বে পেলে সিট বাণিজ্য, সিট দখল চরম পর্যায়ে চলে যাবে। তাই সৎ, মেধাবী, ক্লিন ইমেজ, শিক্ষার্থীবান্ধব নেতৃত্ব প্রয়োজন।”

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে নাইম ইসলাম বলেন, “হিন্দু শিক্ষার্থীকে শিবির ট্যাগ দিয়ে হত্যার হুমকি দেবার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও অবান্তর। যখন ঘটনা ঘটে, সেসময় আমি নিজে উপস্থিত ছিলাম না; হয়তো আমার কোন ছোট ভাই এই কাজের সঙ্গে জড়িত ছিল। শিবির বলার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। একটি কুচক্রী মহল এই বিষয়গুলো সামনে আনছে এবং আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।”

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ হীল বারী বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় একটি ঐতিহাসিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং আমদের শক্তিশালী একটা ইউনিট। এখানে কোনো বিতর্কিত নেতৃত্ব আসবেনা। আমাদের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং আমরা এ ব্যাপারে খুবই সতর্ক আছি।

সানশাইন/সোহরাব


প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৩ | সময়: ৬:৫১ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine