স্থানীয় সরকারের উন্নয়ন মেলায় না থেকে উকালতি করলেন লাভলু

স্টাফ রিপোর্টার, বাঘা: রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় স্থানীয় সরকার দিবস ও উন্নয়ন মেলায় ইচ্ছাকৃত ভাবে যাননি স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান ও অনুষ্ঠানের সভাপতি এ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দিন লাভলু এবং বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাছ আলী। ১৭ সেপ্টেম্বর দেশের সকল উপজেলায় একযোগে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী উপজেলাভিত্তিক উন্নয়ন মেলা এবং স্থানীয় সরকার দিবসের প্রোগ্রাম।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে দেশের প্রতিটা উপজেলা পরিষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই প্রোগ্রাম। যেখানে পদাধীকার বলে অনুষ্ঠানের সভাপতি হলেন স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান। গত ১৪ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।
এবার রাজশাহীর বাঘা উপজেলার উন্নয়ন মেলা এবং স্থানীয় সরকার দিবসের প্রোগ্রামে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই প্রোগ্রামের উদ্বোধন করেছেন স্থানীয় সাংসদ ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহ্রিয়ার আলম। কিন্তু বাধ্যবাধকতা থাকা সত্তেও কোন কারন ছাড়া এই প্রোগ্রামে হাজির হন নাই প্রোগ্রামের সভাপতি বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাড. লায়েব উদ্দিন লাভলু এবং বাঘা পৌর মেয়র আক্কাছ আলী। উপজেলার সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ ও উপজেলার অন্য আরেকটি পৌরসভা আড়ানী মেয়র এবং বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকতাগণ উন্নয়ন মেলায় স্টল স্থাপন করে সরকারের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরেন। সেখানে বাঘা উপজেলা পরিষদের কোন স্টলও ছিল না।
বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দিন লাভলু রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি গত উপজেলা নির্বাচনে নৌকার মনোনিত প্রার্থী ছিলেন এবং বিনা ভোটে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। জনগণের ভোটে তিনি নির্বাচিত হন বিধায় জনগনের প্রতি তার কোন দায়বদ্ধতাও পরিলক্ষিত হয় না। এজন্য তিনি সরকারের উন্নয়ন মেলার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের সভাপতি হওয়া সত্তেও প্রোগ্রামে উপস্থিত হন নাই। জানাগছে তিনি এই দিন সরকারী প্রোগ্রাম বাদ দিয়ে ব্যক্তিগত পেশা উকালতি করতে রাজশাহী কোর্টে সময় কাটান।
এর আগে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের উপজেলা প্রশাসনের সরকারী প্রোগ্রামে তিনি উপস্থিত হননি। বিষয়টি নিয়ে উপজেলার জনপ্রতিনিধি, আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও জনসাধারন নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা-সহ ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বাঘা উপজেলার আড়ানী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় আমাদের ইউনিয়ন গুলোর বিপরীতে স্থানীয় সরকারের যেসব বরাদ্দ আসে সেখান থেকে উপজেলা পরিষদ ঠিকই একটি অংশ উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের জন্য রেখে দেন। এটা নিয়ে কখনও আমরা বিরোধীতাও করি না কারন তিনি জেলা আওয়ামী লীগের নেতা।
উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল, বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. লায়েব উদ্দিন লাভলুর এই আচরণকে সৃষ্টাচার বহির্ভূত উল্লেখ করে বলেন, বাধ্যবাধকতা থাকা সত্তেও একটি সরকারী প্রগ্রোমের সভাপতি হয়ে রাজনৈতিক কারনে গ্রোগ্রামে না আসাটা নিয়োম অমান্যের সামিল। এই প্রোগ্রামের প্রধান অতিতি ছিলেন জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আমাদের চারঘাট-বাঘার উন্নয়নের রুপকার, আমাদের অভিভবক ও নেতা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহ্রিয়ার আলম, এমপি। এই প্রোগ্রামে না আসা মানে এ্যাড. লায়েব উদ্দিন লাভলু সরকারের সিদ্ধান্তের অবজ্ঞা করলেন।
বাঘা উপজেলা আ’লীগের সিনিয়র সদস্য মাসুদ রানা তিলু বলেন, বাঘা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠিত ১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবসের মঞ্চেও উপস্থিত ছিলেননা বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এড: লায়েব উদ্দিন লাভলু। আমরা এমনটি প্রত্যাশা করিনি। আমরা স্বচ্ছতার ভিত্তিতে রাজনীতি করতে চাই।
এদিকে দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী, মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ জনগণ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন। ১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস পালন অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলো উপজেলা প্রশাসন। সেই মঞ্চে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন চারঘাট-বাঘার উন্নয়নের রুপকার ও বর্তমান সরকারের পর-পর দুই বারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং তিনবারের নির্বাচিত সাংসদ শাহরিয়ার আলম।
আজ (১৭ সেপ্টেম্বর) তিনদিন ব্যাপী স্থানীয় সরকার দিবস ও উন্নয়ন মেলারও আয়োজন করেন বাঘা উপজেলা প্রশাসন। এ মেলার শুভ উদ্বোধন করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। অথচ এ মঞ্চের সভাপতি বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিশেষ অতিথি বাঘা পৌর মেয়র সেখানে উপস্থিত হননি। এটা রাজনীতি ও জনপ্রতিনিধির সৃষ্টাচারে পড়ে না।
উপজেলা আ’লীগের নেতারা বলেন, বাঘা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে লায়েব উদ্দিন লাভলু আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন ,জনগনের প্রতিনিধি হতে হলে স্বচ্ছ মানুষিকতা নিয়ে রাজনীতি করা উচিত। তাঁরা সরকারি বেতন ভাতা উত্তোলন করবেন ,অথচ সরকারি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হবেন না, এটা কোন নেতা ও জনপ্রতিনিধির নৈতিক বৈশিষ্ট হতে পারেনা। অনেকেই এ বিষয়টি নিয়ে নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আখতার জানান, আমি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাড: লায়েব উদ্দিন লাভলুকে সভাপতি এবং বাঘা পৌর মেয়র আক্কাছ আলীকে বিশেষ অতিথি করা সহ যাদেরকে দাওয়াত দিয়েছি তারা সবাই উপস্থিত ছিলো। কিন্ত্র এই দুই নেতা কেন আসেনি সেটি আমার জানা নেই। আথচ প্রোগ্রামটা মূলত স্থানীয় সরকার বিভাগের মানে উপজেলা পরিষদের।


প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৩ | সময়: ৪:১৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ