বিচার ব্যবস্থা পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে: মির্জা ফখরুল

সানশাইন ডেস্ক: বর্তমান বিচার ব্যবস্থা পুরোপুরি ‘সরকারের মূল নিয়ন্ত্রণে’ বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু এটুকু বলতে চাই, বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্র নেই। বিচার ব্যবস্থা যেটা আছে সেটা পুরোপুরি তাদের (সরকার) হাতে মূল নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।’
বৃহস্পতিবার এক সেমিনারে বিএনপি মহাসচিব এ অভিযোগ করেন। গুলশানে হোটেল লেকশোরে ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্টের উদ্যোগে ‘কারেন্ট স্ট্যাইট অব জুডিসিয়ারি: এ টুল টু অপরেস দ্য অপজিশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্টের কো-কনভেনর অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটার কারণ আছে। কারণটা হচ্ছে, তারা (আওয়ামী লীগ) গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। আমরা যে গণতন্ত্রের কথা বলছি, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কথা বলছি, সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তো আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে না, শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন না। এ জন্য করেন না–১৯৭৫ সালে তারাই কিন্তু একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল।’
দেশে বর্তমানে একদলীয় শাসন চলছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কেউ কথা বলতে পারে না। আজ যখন পুলিশ কর্মকর্তারা রাজনীতিবিদদের মতো কথা বলেন, যখন জজ সাহেবরা শপথবদ্ধ রাজনীতির কথা বলেন, তখন আমরা সাধারণ মানুষেরা কোথায় যাবো? কার কাছে যাবো? বিচার ব্যবস্থা যদি পুরোপুরি দলীয়করণ হয়ে যায় মানুষ কোথায় যাবে?’ ‘সে জন্যই আজ সবচেয়ে বড় যে জিনিসটা প্রয়োজন-এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধেই দাঁড়াতে হবে। শুধু বিচার ব্যবস্থা নয়, আজ যে রাষ্ট্র কাঠামো তৈরি করা হয়েছে, সেই কাঠামোটা ভেঙে দিতে হবে। ভেঙে দিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কাঠামো নির্মাণ করতে হবে’, যোগ করেন মির্জা ফখরুল।
এজন্য বিচার ব্যবস্থার সমস্যা সমাধানে জুডিসিয়াল কমিশন গঠনসহ ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাবনার কথাও উল্লেখ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘বুধবার সংসদে সাইবার নিরাপত্তা আইন পাস হয়েছে। যেটা এর আগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামে ছিল। যেটার ওপরে আমাদের সিভিল সোসাইটির মানুষেরা, সাংবাদিকরা, রাজনীতিবিদরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক যে সংস্থাগুলো আছে, এমনকি ইউনাইটেড নেশনসের যে মানবাধিকার কমিশন আছে তারাও বলেছেন, বিভিন্ন ধারা পরিবর্তন করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোনও পরিবর্তন না করে, শুধু নামটা পরিবর্তন করে গতকাল তারা সংসদে এই আইন পাস করেছে। আমি এর নিন্দা জানাচ্ছি, প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’ দুই দিন আগে ঢাকা বারে আইনজীবীদের ওপর পুলিশি হামলা ও উল্টো আইনজীবীদের বিরুদ্ধে মামলার ঘটনার নিন্দা জানান বিএনপি মহাসচিব। সেমিনারে হাইকোর্ট ডিভিশনের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী উচ্চ আদালতের বর্তমান অবস্থায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে নিজেদের মনঃকষ্টের কথাও বলেন।
ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্টের কনভেনর, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীনের সভাপতিত্বে এবং ব্যারিস্টার কায়সার কামালের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন-বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক বোরহান উদ্দীন খান, সুপ্রিম কোর্টের ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। সেমিনারে আরও ছিলেন-বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরীসহ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা।


প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৩ | সময়: ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ