শিক্ষার্থীদের পাঠদান করালেন দুর্গাপুরের ইউএনও

রবিউল ইসলাম রবি, দুর্গাপুর : ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ১১টা। বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর কক্ষে তখন ধর্ম বিষয়ে পাঠদান চলছিলো। শিক্ষকের কড়া নজরদারিতে শিক্ষার্থীরাও মনোযোগী ছিলেন পাঠদানে। এমন সময় বিদ্যালয়ে আকস্মিক উপস্থিত হোন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আব্দুল করিম।
শ্রেণী শিক্ষক ইসমাঈল হোসাইনের অনুমতি নিয়ে শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করে ইউএনও নিজেই পাঠদান শুরু করেন। একজন পেশাদার শিক্ষকের মতো কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিশে যান মুহূর্তেই। রাজশাহীর দুর্গাপুরে সদ্য যোগদানকৃত উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আব্দুল করিমের গল্পটা এমনই।
বৃহস্পতিবার উপজেলার দাওকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করান তিনি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘শত ব্যস্ততার মাঝেও ইউএনও স্যার আকস্মিকভাবে (সারপ্রাইজ ভিজিট) বিদ্যালয় পরিদর্শনে আসবেন এ খবর আমাদের জানা ছিলোনা। ইউএনও স্যার বিদ্যালয়ে এসেই সপ্তম শ্রেণীর কক্ষে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করিয়েছেন। এ সময় শিক্ষার্থীরাও ইউএনও স্যারকে শিক্ষক হিসেবে পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত হোন’।
তিনি আরও বলেন, ‘ইউএনও স্যার বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মন খুলে কথা বলেছেন। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করেছেন এবং সাবলীলভাবে শিক্ষার্থীদের করা প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন’। ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী কে লিখেছেন? ইউএনও স্যারের এমন প্রশ্নে সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আথিয়া ইবনাথ জ্যোতি দ্রুত দাঁড়িয়ে দৃঢ়তার সাথে উত্তর দিয়েছেন। এ সময় খুশি হয়ে ইউএনও স্যার জ্যোতিকে পুরস্কৃত করেছেন’।
প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘সকাল ১১টার দিকে আকস্মিক পরিদর্শনে এসে ইউএনও স্যার প্রায় পৌনে একঘন্টা বিদ্যালয়ে অবস্থান করেন। শ্রেণীকক্ষে পাঠদান করানোর পর শিক্ষকদের সাথে মতবিনিময় করেন। পাঠদানের বিষয়ে শিক্ষকদের নানা পরামর্শ দেন। এছাড়া বিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রমে সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন। ইউএনও স্যারকে কাছে পেয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছেন। শিক্ষার মানোন্নয়ন স্যারের এমন কার্যক্রমকে আমরা সাধুবাদ জানাই’।
সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আথিয়া ইবনাথ জ্যোতি জানায়, ‘ইউএনও স্যার আমাদের পড়িয়েছেন। আমাদের পড়া ধরেছেন। কিভাবে পড়তে হবে শিখিয়ে দিয়েছেন। মজার মজার গল্প বলেছেন ও প্রশ্ন করেছেন। প্রশ্নের উত্তর দিতে পারায় স্যার আমাকে পুরস্কৃত করেছেন। স্যারকে হঠাৎ এভাবে পেয়ে আমরা অনেক আনন্দিত।’
বৃহস্পতিবার দাওকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঠদানের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতিতে এই উপজেলায় যোগদানের পর থেকেই নিরলসভাবে কাজ করছেন বলে শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিরা ইউএনও আব্দুল করিমের প্রশংসা করছেন। শুধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেই নয়, উপজেলার প্রতিটি দপ্তরে তাঁর এমন পদচারণা। সুযোগ পেলেই ছুটছেন হাট-বাজার, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের কাছে। শুনছেন তাদের নানা সমস্যার কথা। আশ্বাস দিচ্ছেন সমাধানের। ইতিমধ্যে কয়েটি সমস্যা সমাধান করে প্রশংসায় ভাসছেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল করিম বলেন, ‘উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। তাই শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য সকলকে সচেতন হতে হবে। এছাড়া বিদ্যালয়ের বাচ্চাদের পাঠদান করাতে আমারও ভালো লাগে। বিদ্যালয় পরিদর্শন করা আমার দায়িত্ব। পাশাপাশি আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য উৎসাহিত করছি।’ ইউএনও আব্দুল করিম আরও বলেন, ‘কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রতিকূলতা জয়ের গল্প শুনতে ছুটে যাই তাদের কাছে। সমস্যা সমাধানে এবং তাদের মনে সাহস যোগানোর চেস্টা করি। একদিন এরাই অন্যদের সামনে আসবে। এভাবেই চলবে হাজার হাজার বছর’।


প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৩ | সময়: ৬:১৩ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ