শেখ হাসিনার কনফারেন্স ডিপ্লোমেসি

সানশাইন ডেস্ক: ভারতের আমন্ত্রণে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনে ‘কনফারেন্স ডিপ্লোমেসি’র পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছে বাংলাদেশ। দিল্লিতে ‘গ্লোবাল সাউথের একটি বলিষ্ঠ কণ্ঠ’ হিসেবে বাংলাদেশ তার অবস্থান তুলে ধরেছে। বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানে বিশ্বের সংহতি শক্তিশালী করার ওপর জোর দিয়েছেন শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য উদ্যোগেরও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
জি-২০ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি সাইডলাইনে দক্ষিণ কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গেও কথা হয়েছে তার।
‘গ্লোবাল সাউথের বলিষ্ঠ কণ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ। বিভিন্ন বৈশ্বিক জটিলতার কারণে নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে ভঙ্গুর দেশগুলো। এ সমস্যা সমাধানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতিগুলোর প্রতি শেখ হাসিনা আহ্বান এজেন্ডা ২০৩০ বাস্তবায়ন, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে মসৃণ ও টেকসই উত্তরণ, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ এবং নারীর সমান অধিকার।
বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার একটি অন্যতম দিক হচ্ছে বিভিন্ন দেশের নেতারা যখন মিলিত হন, তখন মূল সম্মেলনের বাইরেও একে অন্যের সঙ্গে প্রয়োজনীয় অনেক আলোচনার সুযোগ পান। অংশ নেন মধ্যাহ্ন বা নৈশভোজেও। একইভাবে জি-২০ মূল সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দুই শীর্ষ নেতৃত্ব সম্পর্ককে ঝালিয়ে নিয়েছেন।
এদিনের ছবিতে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে দৃঢ়ভাবে ধরে রেখেছেন; যা উষ্ণ সম্পর্কের বহিঃপ্রকাশ। কূটনীতিতে এমন করমর্দনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উষ্ণ বা শীতল বডি ল্যাঙ্গুয়েজের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা হয়। আলতোভাবে বা দৃঢ় করমর্দন দিয়েও একজন নেতা আরেকজনের প্রতি তার মনোভাব প্রকাশ করতে পারেন।
একইসঙ্গে শেখ হাসিনা ও জো বাইডেন আলোচনার সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সাধারণভাবে দুই নেতা যখন কথা বলেন, তখন তৃতীয় নেতার উপস্থিত থাকলে ধরে নেওয়া হয় প্রথম দুই নেতার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ তিনি। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে শেখ হাসিনা ও জো বাইডেন আলোচনার পেছনে অনুঘটক হিসেবে ভারতের হাত থাকতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মেদ বিন সালমানের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। এবারের জি-২০ সম্মেলনের সাইডলাইনে দুই নেতা একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। সোমবার সকালে দুই নেতার বৈঠকে সৌদি যুবরাজ বাংলাদেশে বিভিন্ন সৌদি বিনিয়োগের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। ওই দেশে কর্মরত ২৮ লাখ বাংলাদেশির অবদানের কথা জানিয়ে তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরবে বিভিন্ন সংস্কার কর্মকাণ্ডের জন্য যুবরাজকে অভিনন্দন জানান। তিনি যুবরাজকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে তিনি সেটি গ্রহণ করেন এবং বাংলাদেশে আসার আগ্রহ ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ জানান, আর্জেন্টিনার ফুটবলকে সমর্থন জানানোর কারণে তার দেশের লোকের মন জয় করেছে বাংলাদেশিরা।
এসময় বাংলাদেশে দূতাবাস খোলার জন্য আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, খেলাধুলা, বাণিজ্য ও কৃষিসহ অন্যান্য বিষয়ে দুই দেশের সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পাবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে শেখ হাসিনার। এর ধারাবাহিকতায় প্রেসিডেন্ট শেখ মোহামেদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে সাইডলাইনে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ করার নিশ্চয়তা দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।
একই সঙ্গে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতির প্রশংসা করেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট। বাংলাদেশের একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া। ওই দেশের প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইয়ুলের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে শেখ হাসিনা। দুই দেশের মধ্যে সংস্কৃতি, ব্যবসা ও বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়ে একমত হয়েছেন উভয় নেতা। উল্লেখ্য, এর আগে আগস্ট মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেন্সবার্গে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে শেখ হাসিনা অন্যান্য শীর্ষ নেতৃত্বের পাশাপাশি চীন ও ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।


প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩ | সময়: ৫:৫২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ