সর্বশেষ সংবাদ :

মৃত্যু অনিবার্য কিন্তু কোনো অকালমৃত্যু তো কাম্য নয়

তারেক রহমানঃ

জীবনকে বাঁচানো ও মরণকে ঠেকানো এ লেখার উদ্দেশ্য না। এ লেখার মূল উদ্দেশ্য অপ্রত্যাশিত মৃত্যু ও সড়ক-দুর্ঘটনার হার কমানো।

 

বাংলাদেশে সড়ক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরাতে অনেক আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা রাস্তায় নেমে এসেছিল। তারপরও কি পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে? ‘না’ হয়নি ।

 

বাংলাদেশের রাস্তাঘাটে যত সড়ক-দুর্ঘটনা ঘটে তার অধিকাংশই ঘটে তাড়াহুড়ো বা সময়কে অতিরিক্ত বেশী মূল্য দেওয়ার কারনে ! হোক সেটা পথচারীর ক্ষেত্রে বা গাড়িচালকের ক্ষেত্রে , মূল বিষয় ওইযে সময়কে অতিরিক্ত মূল্য দেওয়া।

 

আমি আপনাকে বলছি না যে সময় মূল্যবান না, আমি এটা বলছি যে ‘আমরা দিতে গিয়ে সময়ের মূল্য যেন না হারাই জীবন অমূল্য’ সময় তো অবশ্যই মূল্যবান তবে জীবনের চাইতে কিন্তু বেশী না। জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই সময়কে মূল্য দিব তবে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে গিয়ে সময়ের চাইতে না হয় নিজের জীবন ও অন্য আরেকটি মানুষের জীবন কে বেশী মূল্য দেই। ৫-১০ মিনিট সময় বাঁচানোর জন্য তাড়াহুড়ো ও ধৈর্য হীন হয়ে রাস্তায় চলাফেরা করতে গিয়ে নিজের বা অন্য আরেকটি মানুষের জীবন বা শরীরের কোন গুরুত্ব পূর্ণ অঙ্গ কেড়ে না নেই।

 

আমরা প্রতিদিন-ই লিখছি আর আপনারা প্রতিদিনই খবরের কাগজ পড়ছেন অথবা আমি আপনি টেলিভিশনে দেখতে পাই এখানে-ওখানে সড়ক দুর্ঘটনায় অনেকে নিহত বা আহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় শুধু একজন মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, পুরো পরিবারই ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা শুধু ক্ষতিগ্রস্ত মানুষটি বা তার পরিবারই অনুভব করতে পারে। আমাদের জীবনে এরকম ভয়ংকর কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আগে কি আমরা সচেতন হবো না ?

 

আর যদি বাস ট্রাক ড্রাইভারদের বলি উনাদের কাছে তো সময় থাকেই না কখনো। অন্য বাস কে পেছনে ফেলে, চিপা চাপা দিয়ে কিভাবে ঝড়ের গতি তে চালাবে এটাই তাদের বৈশিষ্ট্য । যাত্রী উঠানোর সময়েও ধীরে সুস্থে উঠানোর মত তাদের সময় থাকেনা আর নামানোর সময় তো যদি পাড়তো তবে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিত। এমন ঝড়ের গতি তে চলতে গিয়ে রাস্তার দু একটা মানুষ পিষে মেরে ফেলতে ও তাদের বাধেনা । প্রাইভেট কার, সিএনজি, রিকশা এদের ও এক ই অবস্থা। সামনে কোন মানুষ কিংবা অন্য গাড়ি পরলে হর্ন বাজাতে বাজাতে অস্থির ।রাস্তায় তো আর কেউ বসে থাকতে আসেনি, আপনার যেমন গন্তব্বে পৌছাতে হবে ঠিক তেমনি আপনার সামনের গাড়িটির কিংবা সামনের মানুষটাকেউ পৌঁছাতে হবে।

 

আমরা যদি দুর্ঘটনার কারণ গুলা খুঁজে বের করি- ভাঙাচোরা রাস্তা, ওভারটেকিং প্রবণতা, ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন যান চলাচল, মাদকাসক্ত হয়ে গাড়ি চালানো, অপ্রাপ্ত বয়সে ড্রাইভিং, বেপরোয়া গতি, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন, চালকের অদক্ষতা, প্রতিযোগিতামূলক যান চালানো যেমন সড়ক-দুর্ঘটনার কারণ ঠিক তেমনি বড় কারণ হচ্ছে পথচারী,যাত্রী ও চালকের অসচেতনতা ট্রাফিক পুলিশের দুর্নীতি,গাড়িচালকের লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে দুর্নীতিও সড়ক দুর্ঘটনার বড় কারণ। এসব সমস্যার সমাধান হলে সড়ক ব্যবস্থাপনায় ফিরে আসবে শৃঙ্খলা, কমবে সড়ক-দুর্ঘটনা।

 

এ সমস্যা সমাধানের জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন সবার সচেতনতা ও আন্তরিকতা আমাদের দেশ জনবহুল; কিন্তু সম্পদ ও রাস্তাঘাট সীমিত। তবে আমাদের যা আছে তা যদি আমরা সচেতনতার সঙ্গে ব্যবহার করি, তাহলে হয়তো আমাদের সমস্যা অনেকটাই কমে আসবে। তাই আমরা সময় থাকতে সচেতন হই। সময়ের মূল্য বোঝার পাশাপাশি একটা জীবনের মূল্য ও বুঝি।

 

 

 

 

সানশাইন/তৈয়ব

 


প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২২ | সময়: ৯:৩৫ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine