ড. ইউনূসের বিচার বন্ধের দাবি সার্বভৌমত্বের ওপর হুমকি : ১৭১ বিশিষ্ট নাগরিক

সানশাইন ডেস্ক: ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান বিচারপ্রক্রিয়া স্থগিতের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের লেখা খোলা চিঠির প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের ১৭১ জন বিশিষ্ট নাগরিক। তারা মনে করছেন, এই চিঠি দেশের সার্বভৌমত্ব ও বিচার বিভাগের ওপর হুমকি। এই ‘অযাচিত হস্তক্ষেপে’ উদ্বেগ জানিয়েছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, শিল্পী হাশেম খান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হাসান ইমামসহ দেশের ১৭১ জন বিশিষ্ট নাগরিক, বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবী এই বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিদাতাদের পক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে সই করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শিল্পী নিসার হোসেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের কয়েকজন নোবেলজয়ী, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের সদস্যের লেখা খোলা চিঠি তাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ওই খোলা চিঠির বক্তব্যকে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীন বিচার বিভাগের ওপর স্পষ্ট হুমকি হিসেবে মনে করছেন তারা।
বিবৃতিদাতারা বলছেন, চিঠিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে আদালতে চলমান মামলাগুলোর বিচার প্রক্রিয়া বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে। দেশের বিবেকবান নাগরিক হিসেবে আমরা বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়ার ওপর এ ধরনের অযাচিত হস্তক্ষেপে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।
খোলা চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছু আইনি ও নৈতিক প্রশ্ন সামনে চলে আসে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৪(৪) অনুযায়ী বিচারকরা তাদের বিচারিক কাজে সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন। সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীসহ রাষ্ট্র পরিচালনায় যুক্ত কারও বিচার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করার কোনো এখতিয়ার নেই। উল্লিখিত চিঠির বক্তব্য বাংলাদেশের সংবিধান ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) স্বীকৃত শ্রমিকদের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি। এই চিঠিতে ‘নিরপেক্ষ’ বিচারকের মাধ্যমে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বিচারের যে আহ্বান জানানো হয়েছে, তা বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থাকে হেয় করার সামিল বলে আমরা মনে করি।
সংবিধান অনুযায়ী সব নাগরিকই আইনের দৃষ্টিতে সমান উল্লেখ করে বিবৃতিদাতারা বলেন, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত সংবিধানে সবারই আইনি সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচারকাজও দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ও স্বাধীনভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। সেই প্রেক্ষাপটে ‘বিচারিক হেনস্তা’র অভিযোগ অমূলক ও অনভিপ্রেত। পাশাপাশি ড. ইউনূস বাংলাদেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে সবসময়ই দেশ-বিদেশে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সব কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছেন।
খোলা চিঠিতে সই করা ব্যক্তিদের নিজ নিজ দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ উল্লেখ করে বিবৃতিতে প্রত্যাশা করা হয়েছে, বিবৃতিদাতারা তাদের নিজ নিজ দেশের মতো বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থাকেও নিজস্ব আইন অনুযায়ী চলার সুযোগ দেবেন এবং সম্মান করবেন।


প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২, ২০২৩ | সময়: ৬:০০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ