অর্থ আত্মসাতসহ নানা অভিযোগ, প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ

স্টাফ রিপোর্টার: পেশাগত অসদাচরণ ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে রাজশাহীর মোহনুপর উপজেলার কেশরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলামকে ব্যাখ্যা প্রদানের নোটিশ করা হয়েছে। গত ২৪ আগস্ট ম্যানেজিং কমিটি ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকমন্ডলী সভা করে এই ব্যাখ্যা প্রদানের নোটিশ প্রদান করেন। বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো. রুস্তোম প্রামানিক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগেও তাকে বিভিন্ন কারণে সাময়িক বরখাস্তসহ অভিযোগের বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক জানান, শফিকুল ইসলাম এই বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি করে চলেছেন। বিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ ও সমন্বয় না করে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা করতেন। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করলে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত ও অপমান করা হতো। তিনি বিদ্যালয় পরিচালনা নীতিমালা অনুসরণ না করে আয়-ব্যয়ের হিসাব ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পন্ন করেননি। এছাড়া তিনি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত অমান্য করে নিজের খেয়াল খুশি মতো বিদ্যালয় পরিচালনা করেছেন।
ব্যাখ্যা প্রদান নোটিশ থেকে জানা যায়, সাত দিনের মধ্যে প্রধান শিক্ষককে অবৈধভাবে গ্রহণকৃত অর্থ প্রদান করতে বাধ্য থাকিবে, ব্যাংকে রেজিস্ট্রি দেয়া বিদ্যালয়ের সম্পত্তি ফিরিয়ে দেয়া, অবৈধভাবে অর্থ গ্রহণের জন্য থানা ও কোর্টে যে অভিযোগ রয়েছে তা নিজ খরচে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করা ও বিদ্যালয়ের ল্যাবটপসহ যে সমস্ত দ্রব্য প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে রয়েছে তা বিদ্যালয়ে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও পেশাগত অসদাচরণ ও অর্থ আত্মসাতের জন্য তার বিরুদ্ধে কেন বরখাস্ত করা যাবে না তার জবাব চাওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বিদ্যালয়ের জমি (কেশরহাট মৌজা, জেএলনং ১০৮, হাল দাগনং ৬২৬, ৬২৪, ৬২৫, ৬২৬, ৬২৭, ৬২৮, ৬২৯ ও ৬৩২, পরিমান- ১ দশমিক ৪৩৩২ একর) মর্টগেজ দিয়ে ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড থেকে ৪০ লাখ টাকা নিয়েছেন। যার মর্টগেজ দলিল নম্বর ৩০২৫/২০২০ এবং পাওয়ার অব এটর্নি নম্বর ৩০২৬/২০২০। তবে এই টাকা বিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা না দিয়ে তিনি আত্মসাৎ করেছেন। বিদ্যালয়ে ঋণকৃত সমুদয় টাকা জমা ও অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে আদালতে মামলা করেন আব্দুল আজিজ নামের ওই অভিভাবক সদস্য।
এছাড়াও মো. নজরুল ইসলাম নিজামের কাছে থেকে ২০১৭ সাল হতে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৩১ লাখ টাকা প্রধান শিক্ষক নিজ স্বাক্ষরে গ্রহণ করেন। যা বিদ্যালয় ফান্ডে জমা দেন নি। এভাবে বিভিন্ন জনের নিকট থেকে কয়েক কোটি টাকা প্রধান শিক্ষক আত্মসাৎ করেছেন।
এব্যাপারে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, তৎকালিন ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত নিয়েই ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হয়েছিল। তিনি টাকা আত্মসাতের বিষয়টি অস্বীকার করেন। আরো কিছু প্রশ্ন করলে উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান তিনি।
কেশরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের এর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রুস্তম প্রামনিক বলেন, প্রধান শিক্ষকের ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন। তবে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সবই আগের। যেহেতু বিদ্যালয়ের বিষয় সেইহেতু এই পদে যিনিই থাকবেন-তাকেই পদক্ষেপ নিবে হবে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত হচ্ছে। সেই তদন্তে তার অনিয়ম, দুর্নীতি সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে তাকে কেন বরখাস্ত করা যাবে না এই মর্মে নোটিশ দেয়া হয়েছে।


প্রকাশিত: আগস্ট ৩১, ২০২৩ | সময়: ৫:০৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ