রাবিতে ফলাফল নিয়ে শোরগোল

স্টাফ রিপোর্টার : সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) পরীক্ষা কমিটির বিরুদ্ধে ০.৫ (হাফ) মার্ক বাড়ানো ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে টেবুলেশনের কাজ করানোর অভিযোগ ওঠে। এরপর থেকেই বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে পক্ষে বিপক্ষে নানা মতামত উঠছে। কোর্স শিক্ষকের অনুরোধেই পরীক্ষা কমিটি শিক্ষার্থীর মার্ক বাড়ানোর দাবি করলেও কোর্স শিক্ষক তা অস্বীকার করেছেন। এদিকে ব্যাচের মেসেঞ্জার গ্রুপের স্ক্রিনশট ব্যবহার করে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদকে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে প্রতিবাদ জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, আইইআরের ১ম ব্যাচের স্নাতকে ৩.৮৬ পেয়ে প্রথম হওয়া শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেনকে ১০৫১ নম্বর কোর্সে ৭৯ দেন কোর্স শিক্ষক আরিফুর রহমান। পরবর্তীতে ৪ সদস্য বিশিষ্ট ব্যাচের পরীক্ষা কমিটি ০.৫ যোগ করায় তার গ্রেড এ থেকে এ+ হয়। এতে তার সিজিপিএ ৩.৯৪ হলেও ব্যাচের কোনো শিক্ষার্থীর মেধাক্রম পরিবর্তিত হয়নি। ওই ব্যাচে স্নাতকোত্তরে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা শিক্ষার্থীর সিজিপিএ ৩.৮৮। পরীক্ষা কমিটি সদস্যদের দাবি কোর্স শিক্ষক আরিফুর নিজেই কমিটিকে দেলোয়ারকে ০.৫ নম্বর দিতে বলেন। তবে কোর্স শিক্ষক আরিফুর রহমান বিষয়টি অস্বীকার করেন।
এদিকে ১ম ব্যাচের তিন শিক্ষার্থীকে দিয়ে টেবুলেশনের কাজ করার অভিযোগ ওঠে। এ বিষয়ে ব্যাচের মেসেঞ্জার গ্রুপের স্ক্রিনশট নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে কয়েকটি গণমাধ্যম। তবে ব্যাচ কমিটি ও ওই তিন শিক্ষার্থী জানান, বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রেশন কার্ডে বাংলায় নাম না থাকায় তারা গুগল ডক ফরমের মাধ্যমে বাংলায় তথ্য সংগ্রহ করে কমিটিকে দিয়েছেন। এছাড়া রেজাল্ট বা মার্কশিট সংক্রান্ত কোনো কাজে জড়িত ছিলেন না। ব্যাচের মেসেঞ্জার স্ক্রিনশট ব্যবহার ও খণ্ডিত তথ্য ব্যবহার করে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সংবাদ পরিবেশন করা হচ্ছে দাবি করে প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতিও দিয়েছেন ১ম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
কোর্সের শিক্ষক আরিফুর রহমান বলেন, একজন শিক্ষার্থী ৭৯ পেলে মানবিকতার জায়গা থেকে আমরা শিক্ষকরা সাধারণত এ+ করে দেয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু এই কোর্সে এই ছেলের পরীক্ষার খাতা দেখার পরে আমার মনে হয়েছিল, এই ছেলে আসলে এই কোর্সে এ+ ডিজার্ভ করেনা।
পরীক্ষা কমিটির সদস্য ড. হ্যাপি কুমার দাস বলেন, উনি (আরিফুর) গত ৯ আগস্ট পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ও দুইজন সদস্যের সামনে বলেছিলেন যে, মানবিকতার জায়গা থেকে কারো প্রয়োজন হলে নম্বর একটু বাড়িয়ে দিয়েন। এছাড়া আমরা জানতাম যে পরিস্থিতি বিবেচনায় ০.৫ মার্ক বাড়ানোর আইন ছিল। তবে এই ঘটনার পরে আমরা জানতে পেরেছি যে, আইনটা এখন আর এটা নেই। ০.৫ মার্ক বাড়ানোতে কারো কোনো অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি। কারো অবস্থানের পরিবর্তন হলে হয়তো এমনটা করা হতোনা।
ড. হ্যাপি কুমার দাস আরও বলেন, ফলাফল আনঅফিশিয়ালি প্রকাশিত হয়েছিল ১০ আগস্ট। গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে ২২ আগস্ট। মাঝখানে ১২ দিনে ফলাফলের বিষয়ে কোনো শিক্ষক-শিক্ষার্থী বা অন্য কেউ এই বিষয়ে অভিযোগ করেনি। কেউ গুড ইনটেনশন নিয়ে কমিটিকে বললেই ভুল সংশোধন করা যেতো। এভাবে গণমাধ্যমে অভিযোগ তুলে বিষয়টি নিয়ে ইস্যু তৈরী করাটা সত্যিই বিব্রতকর ও দুঃখজনক।
এই বিষয়ে আরিফুর রহমান বলেন, পত্রিকার সাংবাদিক বিষয়টিকে একটু ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছে। বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ উপস্থাপন করায়, বক্তব্যটা একটু অন্যরকম অর্থে হয়ে গেছে। রুবাইয়াৎ স্যার কিন্তু আসলেই খুব ভালো মানুষ। এখন আমি আসলে জানিনা কেনো এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
পরীক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক রুবাইয়াৎ জাহান বলেন, আমরা আসলে বুঝতে পারিনি যে আমাদের সহকর্মী এভাবে বিষয়টি (মার্ক বাড়ানোর অনুরোধ) অস্বীকার করবে। ওই শিক্ষকের মুখের কথায় বিশ^াস করে লিখিত নেয়া হয় নাই, এটাই হলো আমাদের অপরাধ।
এ বিষয়ে পরিচালক অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, মার্ক বাড়িয়ে দেয়ার বিষয়ে পরীক্ষা কমিটির সভাপতির কোনো এখতিয়ার নেই। আগে একটা প্রোভিশন ছিল যে, পরীক্ষা কমিটির সদস্যরা মনে করলে ১ মার্ক গ্রেস দিতে পারবেন। কিন্তু সেই প্রথাটা অনেক আগেই বিলুপ্ত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক এই বিষয়টি জানেননা, নাও জানতে পারেন, তবে এটা আমার কাছে ঠিক নয় মনে হয়েছে।
এদিকে পরীক্ষা কমিটির সদস্য ফয়সাল আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, ২য় সেমিস্টারের ফলাফল প্রস্তুত সংক্রান্ত কোনো প্রক্রিয়াতেই আমাকে ডাকেননি। ২৫ আগস্ট রাতে ইমার্জেন্সি মিটিংয়ের বিষয়ে আমাকে একটা ইমেইল করেছেন এবং যেদিন ডিফেন্স হয়েছিল, ওইদিন একটা ইমেইল করেছিলেন। টেবুলেশন শিট তৈরী করে এনে লাস্টের দিন আমাকে সই করার জন্য বলেছিলেন। আমি সেটাতে সই করে দিয়েছিলাম। এটা আমার একটা বোকামি আর কি।
এই বিষয়ে সহযোগী অধ্যাপক ড. হ্যাপি বলেন, কমিটির সকলেই ফলাফল প্রস্তুত প্রক্রিয়াতে কাজ করেছেন। ফলাফলের জন্য তিনটা খাতায় একজন শিক্ষার্থীর ফলাফলের জন্য মোট ছয়টা করে পঞ্চাশ জন শিক্ষার্থীর জন্য তিনশ’টা সই করতে হয় পরীক্ষা কমিটির সকল সদস্যকে। এখন কেউ যদি বলে যে, আমি তিনটা খাতায় তিনশতটা সই করেছি, কিন্তু আমি কিছু দেখিনি। তাহলে তো কিছু বলার নেই।
কমিটির সভাপতি অধ্যাপক রুবাইয়াৎ জাহান বলেন, তাকে (ফয়সাল আহমেদকে) যদি ফলাফল প্রস্তুত সংক্রান্ত প্রক্রিয়াতে না রাখা হয়, তাহলে তিনি ব্যাচ কমিটি বা ইনস্টিটিউটের পরিচালকের কাছে জানাতে পারতেন কিংবা টেবুলেশন শিটে স্বাক্ষর করতে আপত্তি জানাতে পারতেন। কিন্তু তিনি এসব কিছুই করেনি। এখন তিনি কেন গণমাধ্যমে এমন অভিযোগ তুলছেন সেটা উনিই ভালো বলতে পারবেন।


প্রকাশিত: আগস্ট ২৯, ২০২৩ | সময়: ৫:০১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ