যুব বিশ্বকাপজয়ীদের মানসিকতায় প্রেরণার উৎস পাচ্ছেন সাকিবও

স্পোর্টস ডেস্ক: আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে বছরের পর বছর ধরে রাজত্ব করেছেন সাকিব আল হাসান। অসাধারণ পারফরম্যান্সে রাঙিয়েছেন বিশ্ব ক্রিকেট। কিন্তু দেশের হয়ে কোনো পর্যায়েই দলীয় শ্রেষ্ঠত্বের স্বাদ তিনি পাননি বৈশ্বিক আসরে। তার নেতৃত্বেই এখন বাংলাদেশ দলে আছেন যুব বিশ্বকাপজয়ী ৫ ক্রিকেটার। তাদেরকে অনুপ্রেরণা মানছেন এমনকি সাকিবের মতো বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। বাংলাদেশ অধিনায়কের আশা, যুব বিশ্বকাপজয়ীদের মানসিকতার ছোঁয়ায় উজ্জীবিত হবে জাতীয় দলের ড্রেসিং রুমও।
২০২০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। ক্রিকেটের বিশ্ব আঙিনায় বাংলাদেশের একমাত্র শিরোপা সাফল্য সেটিই। সেই দলের শরিফুল ইসলাম ও তাওহিদ হৃদয় আগে থেকেই ছিলেন বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অংশ। এই এশিয়া কাপ দিয়ে দলে জায়গা ফিরে পেয়েছেন শামীম হোসেন। প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে ঠাঁই পেয়েছেন তানজিদ হাসান। পরে ইবাদত হোসেন চোটের কারণে ছিটকে যাওয়ায় প্রথমবারের মতো সুযোগ পেয়েছেন পেসার তানজিম হাসান।
যুব বিশ্বকাপ হয়ে এখন তারা খেলতে যাচ্ছেন এশিয়া কাপে, হাতছানি আছে বিশ্বকাপ খেলারও। এশিয়া কাপের দলে না থাকলেও ওই দলের মাহমুদুল হাসান জয়, পারভেজ হোসেন, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরিরা এর মধ্যেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদ পেয়েছেন। দুয়ারে কড়া নাড়ছেন রাকিবুল হাসান, শাহাদাত হোসেনরা। সামনের পথচলায় দেশের ক্রিকেটের সারথি তারাই।
যেহেতু বিশ্বজয়ের স্বাদ তারা পেয়েছেন, তাদের মানসিকতাও রাজত্ব করার মতোই। এটিকেই জাতীয় দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন সাকিব। এশিয়া কাপের খেলতে শ্রীলঙ্কায় যাওয়ার আগের দিন বাংলাদেশ অধিনায়ক বললেন, এই তরুণদের থেকে প্রেরণা পেতে পারেন দলের সবাই। “দেখুন ওরা যেহেতু একটা বিশ্বকাপ জিতেছে, ওদের মধ্যে একটা জয়ী মানসিকতা আছে। যেটা আমার কাছে মনে হয় যে, আমাদের দলকে আরও ভালো কিছু করার জন্য অনুপ্রাণিত করবে। ওদের সবার ভেতরে একটা মানসিকতা আছে যে, ওরা জিততে চায়। একটা টিমের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি, ওই মানসিকতা নিয়ে ওরা এই ড্রেসিং রুমে আসবে। ড্রেসিংরুমের আবহটা ওরা ওইভাবেই গড়ে তুলবে।”
সেই দলের আগ্রাসী ওপেনার তানজিদ হাসান নানা পথ ঘুরে, অনেক পোড় খেয়ে অবশেষে এবার জায়গা করে নিয়েছেন জাতীয় দলে। লিটন দাসের সঙ্গে এশিয়া কাপে বাংলাদেশের ইনিংস সূচনা করতেও দেখা যেতে পারে তাকে। আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান হওয়ায় তার কাছে উড়ন্ত সূচনা আশা করছেন অনেকেই। তবে এখনই তার ওপর প্রত্যাশার বড় ভার চাপিয়ে দিতে চান না সাকিব।
“আমি অনেক আশাবাদী (তানজিদকে নিয়ে)। শুধু আমি না পুরো দলই অনেক আশাবাদী যে ও অনেক ভালো খেলবে। তবে এর মানে এই না যে, এই দুই ম্যাচ বা চার ম্যাচ ও যদি ভালো না করে, তাহলে (ভবিষ্যতে) ও ভালো হতে পারবে না। আবার এমন না যে, এই চার ম্যাচ ভালো করলেই ও ভালো প্লেয়ার হয়ে যাবে। অনেক সামনে সময় আছে।”
“আমি যেটা আশা করব ওর থেকে যে, ও যেভাবে করে আসছে,সবশেষ কিছুদিন পারফরম্যান্স, যে জায়গায় খেলেছে, এমন পারফরম্যান্সটাই যেন করে এবং উপভোগ করে খেলাটা। ড্রেসিংরুমের পরিবেশ যেন উপভোগ করে। আমাদের সবার দায়িত্ব, ওকে যতটুকু সম্ভব স্বচ্ছন্দ অনুভব করানো। ও যদি সেরকম অনুভব করতে পারে, তাহলে আমার কাছে মনে হয়, ও ভালো কিছু করতে পারে বাংলাদেশের জন্য।”
সাকিব নিজে অবশ্য এখনও খুব একটা সময় কাটাননি তানজিদ-তানজিমদের সঙ্গে। এশিয়া কাপের প্রস্তুতি পর্বে সেভাবে ছিলেন না অধিনায়ক। শরিফুল-হৃদয়-শামীমরা অবশ্য টি-টোয়েন্টি দলে খেলেছেন সাকিবের নেতৃত্বে। তার পরও প্রস্তুতি ক্যাম্পে অধিনায়কের না থাকাটা খুব আদর্শ নয়। বিশেষ করে, সাকিব যখন ওয়ানডে নেতৃত্ব ফিরে পেয়েছেন মাত্রই কদিন আগে। তবে এসব ব্যাপার মানিয়ে নিতে তেমন কোনো সমস্যা হবে না বলেই ধারণা সাকিবের।
“এমন না যে খুব বেশি নতুন ক্রিকেটার আসছে, যাদেরকে আমি চিনি না। বেশিরভাগকে আমি অনেক দিন ধরে চিনি। বেশিরভাগই আমার নেতৃত্বে খেলেছে, বা আমি তাদের নেতৃত্বে খেলেছি। তাই খুব বেশি একটা মানিয়ে নেওয়ার দরকার আছে বলে মনে হয় না। যে দুই-একজন নতুন ক্রিকেটার এসেছে, আমার ধারণা তাদেরও আমার সম্পর্কে ভালো আইডিয়া আছে। আমার এবং কোচিং স্টাফেরও ভালো আইডিয়া আছে।”
“এখানে আসলে অ্যাডজাস্টমেন্টের খুব একটা দিক আছে বলে মনে হয় না। সবাই জানে কার দায়িত্ব কী। যেহেতু আমাদের ক্রিকেটিং একটা সংস্কৃতি আছে বা তৈরি করার চেষ্টা করছি, ওই জায়গা থেকে সবাই জানে যার যার জায়গা থেকে কাজটা বা কী করতে হবে ড্রেসিং রুমে।” এশিয়া কাপ খেলবে রোববার দুপুরে ঢাকা ছাড়বেন সাকিবরা। প্রথম ম্যাচে আগামী বুধবার তাদের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা।


প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২৩ | সময়: ৪:৫৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ