ছাত্রদলের নিখোঁজ ৬ নেতাকে নিয়ে বিএনপির মিথ্যাচার

সানশাইন ডেস্ক: নির্বাচনকে সামনে রেখে নাশকতামূলক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশে অস্থিতিশীল করতে ছাত্রদল নেতারা অস্ত্র সংগ্রহ করেছিল বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তিনটি অস্ত্রসহ ছাত্রদলের ছয় নেতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অথচ বিএনপি গ্রেপ্তারের ঘটনা নিয়েও রাজনীতি করছে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার সময় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অকস্মাৎ সংবাদ সন্মেলনের ডাকেন। এসময় তিনি বলেন, শনিবার বিকালে আজিমপুরের নিজ বাসা থেকে বের হবার পরে নিখোঁজ হন ছাত্রদলের নেতা মমিনুল ইসলাম জিসান। অনেক খোঁজাখুজির পরেও তাকে না পেয়ে মমিনুলের খোঁজ নিতে তার বাসায় গেলে আরও পাঁচজনকে সাদা পোশাকের পুলিশ তুলে নিয়ে যাবার অভিযোগ করেন তিনি।
যদিও পরবর্তীতে তিনিই আবার বলেন, বেলা ১১টায় ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-সম্পাদক মমিনুল ইসলামকে আজিমপুরের বাসার সামনে থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সাথে তার খোঁজ নিতে যাওয়া আরও পাঁচজনকে তুলে নিয়ে গিয়েছে সাদা পোশাকধারী লোকেরা।
রুহুল কবির রিজভী একবার বলছেন শনিবার বিকেলে, আবার বলছেন সকাল ১১ টায় তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কখন তারা নিখোঁজ হয়েছে এটি নিয়ে বিভ্রান্ত খোদ বিএনপির নেতাকর্মীরা।
বিএনপি নেতা রিজভীর সংবাদ সম্মেলনের পর বিবৃতি দিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটি জানায়, ছাত্রদলের ছয় নেতাকে তুলে নেওয়ার পর তাঁরা এখন কোথায় আছেন, তা জানা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
অথচ লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার হেলালুদ্দিন শনিবার রাতেই জানিয়েছিল, ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) লালবাগ বিভাগ শনিবার সন্ধ্যায় সন্দেহজনক গতিবিধির কারণে লালবাগ থেকে ৬ জনকে আটক করে এবং রাতেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য লালবাগ থানায় হস্তান্তর করে।
গ্রেপ্তার হওয়া ছয় জন হলেন- ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম ওরফে জিসান (৩১), সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আরিফ বিল্লাহ (৩০), ছাত্রদলের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক মো. আরিফ বিল্লা (৩০), ছাত্রদলের ঢাবি শাখার সহসভাপতি মো. হাসানুর রহমান ওরফে হাসান (৩২), ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাহাদত হোসেন (৩১), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর (৩২) ও ছাত্রদলের ঢাবি শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল্লাহ আর রিয়াদ (২৯)।
রোববার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার খোন্দকার নুরুন্নবী জানান, নির্বাচনকে সামনে রেখে নাশকতামূলক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশে অস্থিতিশীল করতে ছাত্রদল নেতারা অস্ত্র সংগ্রহ করেছিল। এজন্য তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসময় তাদের কাছ তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৩৬ রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার খোন্দকার নুরুন্নবী বলেন, ‘তাদের মোবাইল জব্দ করে আমরা তাদের মোবাইল বিভিন্ন অস্ত্র ও জব্দ হওয়া অস্ত্রের ছবি দেখতে পাই। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি, তারা কার কাছ থেকে এবং কোথায় থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করেছে। তারা একটি অস্ত্র টেকনাফ থেকে আর দুটি অস্ত্র পাবনা থেকে সংগ্রহ করে।’
নুরুন্নবী বলেন, গ্রেপ্তারদের হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথনে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি কাদের কাছ থেকে তারা অস্ত্র সংগ্রহ করেছে। যারা অস্ত্র সাপ্লাই দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও আমাদের অভিযান চলছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও জানায়, আসন্ন নির্বাচনকে। কেন্দ্র করে তারা নাশকতামূলক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য অস্ত্র সংগ্রহ করছিল। তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনেসহ দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নাশকতা ঠেকাতে পুলিশ যে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা নিয়েও বিএনপি বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, ‘পুলিশের সাংবিধানিক দায়িত্ব হলো জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সেজন্য আইন অনুযায়ী তাদের নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। আসছে নির্বাচন এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার ডামাডোলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বদা সজাগ থাকতে হয়, সন্দেহজনক কোনো গতিবিধি দেখামাত্রই সেটাকে চ্যালেঞ্জ করা এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কাউকে থানায় নিয়ে আসা স্বাভাবিক আইনি কর্মকাণ্ডের মধ্যেই পরে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা কোন অপরাধী হলে সবাই চুপ থাকে। আর যদি বিএনপির কেউ হয় তাহলে টেকনাফ থেকে অ্যামিনেস্টি পর্যন্ত মানবতা গেল বলে মাতম উঠতে থাকে। অথচ অতীত ইতিহাস বলছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির নেতা-কর্মীরা মানুষ হত্যা, জ্বালাও-পোড়াও থেকে শুরু করে নানা ধরনের নাশকতামূলক কাজ করেছে।
অস্ত্র নিয়ে কেউ নাশকতার ষড়যন্ত্র করে, তাদের পুলিশ গ্রেপ্তার করবে এটিই আইনগত ব্যবস্থা। অথচ মানবতার দোহাই দিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যে বিবৃতি দিয়েছে তা দুঃখজনক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।


প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২৩ | সময়: ৫:২৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ