রাবি ছাত্রলীগের চার নেতা বহিষ্কার

স্টাফ রিপোর্টার : ‘প্রক্সি চুক্তির’ টাকা আদায় করতে শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলার আসামি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুশফিক তাহমিদ তন্ময়সহ চারজনকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্র। শনিবার রাতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রেক্ষিতে সংগঠনবিরোধী, শৃঙ্খলাপরিপন্থি, অপরাধমূলক এবং সংগঠনের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয় এমন কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে মুশফিক তাহমিদ তন্ময় (সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা), রাজু আহমেদ (যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, শের-ই-বাংলা ফজলুল হক হল শাখা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়), মহিবুল মমিন সনেট (কর্মী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, শহীদ হবিবুর রহমান হল শাখা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়) ও শাকোয়ান সিদ্দিক প্রাঙ্গণ (কর্মী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, শের-ই-বাংলা ফজলুল হক হল শাখা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়)-কে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হলো।
এর আগে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে ছাত্রলীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল তন্ময়কে। পরে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।
এ বিষয়ে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, কেন্দ্র থেকে যে সিদ্ধান্ত নিবে সেটা আমরা মেনে চলতে বাধ্য। তন্ময় এর আগেও বহিষ্কার হয়েছিল। পরে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। আবার অপকর্মের দায়ে আজ তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। পরবর্তীতে যে কেউ এমন অপকর্মে যুক্ত হলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার (১৮ আগস্ট) রাবি ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে জালিয়াতি অভিযোগে ছাত্রলীগের নেতাসহ মোট আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, প্রক্সি চক্রের একটি গ্রুপের সঙ্গে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা চুক্তি করেন আহসান হাবীব নামের এক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা নগদ ও ৬০ হাজার টাকার চেক পরিশোধ করেন তিনি। ভর্তির পরে বাকি টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভর্তি শেষে বাকি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে আটকে রেখে শিক্ষার্থীর বাবার কাছে আরও তিন লাখ টাকা দাবি করে ওই প্রক্সি চক্র। তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতনও করা হয়।
মামলার আসামিরা হলেন মো. আহসান হাবিব (১৯), রাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. প্রাঙ্গণ (২২), রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুশফিক তাহমিদ তন্ময় (২৪), বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই- বাংলা হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী রাজু আহমদ (২৩), মো. সাকিবসহ (২৪) আরও অজ্ঞাতনামা ২/৩ জন।
এজাহারে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত আহসান হাবীব পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স বিষয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য তার মায়ের সঙ্গে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু বিজ্ঞান ভবনে আসেন।
ভর্তি হওয়ার পর ওই ভবন থেকে বের হলে দুপুর পৌনে ৩টায় অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন ব্যক্তি তাকে কৌশলে অপহরণ করে। শের-ই-বাংলা আবাসিক হলের ৩য় তলায় নিয়ে আটকে রাখে তাকে। সেখানে অপহরণকারীরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ওই শিক্ষার্থীর বাবার কাছে ফোন করে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে গুম করার হুমকিও দেওয়া হয়।
পরে প্রক্টরিয়াল বডির লোকজনের সহায়তায় বিকেল সাড়ে ৫টায় শের-ই-বাংলা হলের ভেতর থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে হাবীব স্বীকার করেন, নিজে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করে প্রক্সি পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। তবে তার প্রক্সি পরীক্ষা কোন পরীক্ষার্থী দিয়েছে তা জানাতে পারেননি।


প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২৩ | সময়: ৬:১৩ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ