সর্বশেষ সংবাদ :

মিয়ানমারে আটকে মুক্তিপণ আদায়, ৩ মানবপাচারকারী গ্রেপ্তার

সানশাইন ডেস্ক: মানবপাচারের অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব জানিয়েছে, চক্রটি অভিবাসন খরচ, পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া মালয়েশিয়ায় পাঠানোর কথা বলে তরুণদের মিয়ানমারে নিয়ে আটকে নির্যাতনের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায় করে আসছিল।
গত মার্চে এই চক্রটির মাধ্যমে মালয়েশিয়ার পথ ধরে বিপাকে পড়েন নারায়ণগঞ্জের ১৯ তরুণ, যাদের একজন নির্যাতনে প্রাণ হারান। শনিবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। গ্রেপ্তাররা হলেন মো. ইসমাইল (৪৫), মো. জসিম (৩৫) ও মো. এলাহী (৫০)। তাদের সবার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে। মানবপাচারের মামলায় এর আগেও তারা কারাভোগ করেছেন বলে জানায় র‌্যাব।
সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গত ১৯ মার্চ আড়াইহাজার এলাকার ১৯ জন তরুণ এই চক্রের মাধ্যমে টেকনাফ থেকে নৌপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় মিয়ানমারের কোস্টগার্ডের হাতে আটক হয়। তিনি বলেন, “এ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের পরিবারগুলো আড়াইহাজার ইউএনও কার্যালয়ে গিয়ে স্বজনদের ফিরে পেতে আবেদন করেন, থানায় মামলাও হয়। এই চক্রের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় পাচার হওয়া জহিরুল ইসলাম গত ২৪ মে মালয়েশিয়ার একটি হাসপাতালে যারা যান। গত ২৮ মে শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় তার লাশ দেশে আনা হয়।”
কমান্ডার মঈন বলেন, “গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ইসমাইল ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় ছিলেন। এসময় মিয়ানমারের আরাকানের নাগরিক (রোহিঙ্গা) রশিদুল ও জামালের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং সখ্যতা গড়ে উঠে। “পরবর্তীতে ইসমাইল দেশে ফিরে এসে ১০-১২ জনের একটি আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্র গড়ে তোলেন। চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন এলাকার তরুণদের কোনো অগ্রিম অর্থ ও পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর লোভ দেখাত। মালয়েশিয়া পৌঁছানোর পরে জনপ্রতি তিন লাখ ২০ হাজার টাকা করে দিতে হবে বলে জানাত দালালরা।”
তিনি জানান, মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুকদের ইসমাইলের কাছে নিয়ে আসতেন জসিম ও এলাহীসহ চক্রের অন্য সদস্যরা। তাদেরকে নারায়ণগঞ্জ থেকে বাসে টেকনাফের মানবপাচার চক্রের আরেক সদস্য আলমের কাছে হস্তান্তর করা হত। আলম সুবিধাজনক সময়ে তাদেরকে ট্রলারে করে মিয়ানমারে জামালের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। পরবর্তীতে জামাল তার মিয়ানমারের ক্যাম্পে তাদের আটকে রেখে নির্যাতন করে তা ভিডিও করতেন। পরে সেই ভিডিও আড়াইহাজারের ইসমাইলের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের পরিবারের কাছে পাঠিয়ে ছয় লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করা হতো।
“যাদের মুক্তিপণের টাকা পাওয়া যেত, তাদেরকে মিয়ানমার থেকে থাইল্যান্ডের সমুদ্রসীমা হয়ে মালয়েশিয়ায় রশিদুলের কাছে পাঠিয়ে দিত তারা। গ্রেপ্তার ইসমাইল নিজের ও অন্যান্য সদস্যদের অংশের টাকা রেখে অবশিষ্ট টাকা মালয়েশিয়ায় রশিদুলের কাছে মোবাইল ব্যাংকিং ও ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিত। পরবর্তীতে রশিদুল ও মিয়ানমারের জামাল মুক্তিপণের টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিত। রশিদুল প্রায় ২৫ বছর ধরে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করে মানবপাচার চক্র চালাচ্ছেন।”
র‌্যাব কর্মকর্তা আল মঈন বলেন, এই চক্রটি গত ১৯ মার্চ সর্বমোট ২২ জনকে একটি ট্রলারে তুলে যাত্রা শুরু করে। ট্রলারটি মিয়ানমার উপকূলে পৌঁছালে সেখানকার কোস্টাগার্ড ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করে। অবশিষ্ট তিনজনকে এই চক্রের সদস্য জামাল কৌশলে ছাড়িয়ে তার ক্যাম্পে নিয়ে আটকে রেখে মুক্তিপণের জন্য নির্যাতন করেন। তার মধ্যে জহিরুলের পরিবারের কাছে তারা ছয় লাখ টাকা দাবি করে।
তিনি আরো বলেন, পরবর্তীতে জহিরুলের পরিবার গত ১০ মে চার লাখ ২০ হাজার টাকা দেয় এবং অবশিষ্ট এক লাখ ৮০ হাজার টাকা মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর পর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। পরবর্তীতে জহিরুলকে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মিয়ানমার থেকে থাইল্যান্ডের সমুদ্রসীমা হয়ে সিঙ্গাপুরের পাশ দিয়ে মালয়েশিয়ার জোহার বারুতে পাঠায় পাচারকারীরা। নির্যাতনের কারণে সে অসুস্থ হয়ে পড়লে মালয়েশিয়া পুলিশ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। ২৪ মে সেখানকার হাসপাতালে মারা যান জহিরুল। তার মৃত্যুর সনদপত্রে মৃত্যুর কারণ হিসেবে নির্যাতনের কথা উল্লেখ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মিয়ানমার কোস্টগার্ডের হাতে আটক ১৯ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন।


প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২৩ | সময়: ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ