সর্বশেষ সংবাদ :

খরায় চৌচির আমনের ক্ষেত

অহিদুল হক, বড়াইগ্রাম: বড়াইগ্রামে ভরা বর্ষাতেও তীব্র খরা ও অনাবৃষ্টির কারণে ধানের জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। পানির অভাবে খাঁ খাঁ করছে মাঠ-ঘাট। এসব কারণে উপজেলায় বোনা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। আর যেসব জমিতে চাষ হয়েছে, সেগুলোতেও ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রোপা আমন রোপণের মৌসুমও চলে যাচ্ছে, তাই জমি প্রস্তুত ও ধানের চারা বাঁচাতে এখন কৃষকদের ভরসা ভূগর্ভস্থ পানি। এতে বাড়তি খরচ গুণতে হচ্ছে তাদের।
উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নের সব এলাকাই এবার খরার কবলে পড়েছে। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মৌসুমের শুরু থেকেই কৃষকেরা গভীর-অগভীর সেচ পাম্প চালু করে আমনের চারা লাগাচ্ছেন।
এদিকে লোডশেডিংয়ের কারণে সেচ কাজও ব্যাহত হচ্ছে। সময় মত বৃষ্টির পানি না পেলে এসব জমির ধানের চারা মরে যাওয়ার আশঙ্কায় হতাশ হয়ে পড়েছেন চাষীরা। এ কারণে অধিকাংশ চাষীরা অর্থ খরচ করে জমির আগাছা পরিষ্কার করাসহ ধানের পরিচর্যা করা থেকে বিরত থাকছেন।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় এবার তিন হাজার ৭শ’ হেক্টর জমিতে বোনা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও খরা ও অনাবৃষ্টির কারণে চাষ হয়েছে তিন হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে। এছাড়া রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৯২০ হেক্টর। তবে এ পর্যন্ত মাত্র ৮২০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের চারা রোপন করা হয়েছে।
এসব জমিতে সেচের জন্য মাঠে ১১৪ টি গভীর নলকুপ, ৫ হাজার অগভীর নলকুপ ও ৬টি এলএলপি (লো লিফট পাম্প) সেচযন্ত্র রয়েছে। সব মিলিয়ে উপজেলায় ৫ হাজার ১২০টি সেচযন্ত্র রয়েছে। এরমধ্যে ৩১৭টি বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্র। বাকি ৪ হাজার ৮০৭ টি সেচযন্ত্র ডিজেলচালিত। খরা মোকাবিলায় বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত সেচযন্ত্রের প্রায় সবগুলোই চালু রয়েছে।
কৃষকরা জানান, এক বিঘা জমিতে বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র দিয়ে সেচ দিতে বর্তমানে ৪০০-৪৫০ টাকা পর্যন্ত খরচ পড়ছে। আমনের চারা লাগানোর জন্য জমি প্রস্তুত ও খরার কবলে পড়া আমনের চারা বাঁচাতে ইতিমধ্যে দুইবার সেচ দিতে হয়েছে। এই মৌসুমে এভাবে অনিয়মিত বৃষ্টিপাত চললে কমপক্ষে আরও ছয়বার সেচ দিতে হবে। সেই হিসাবে উপজেলার ১৯ হাজার ২২০ হেক্টর জমির আমন চাষে এবার সেচ বাবদ ব্যয় হবে প্রায় ৩৯ কোটি ২২ লাখ ৪৪ হাজার ৮৯৮ টাকা।
উপজেলার মামুদপুর গ্রামের কৃষক আবু রায়হান বলেন, প্রায় ২০-২১ দিন ধরে বৃষ্টির দেখা নেই। কখনও বৃষ্টি হলেও তাতে মাটিই ভিজে না। প্রচন্ড খরা ও অনাবৃষ্টির পাশাপাশি বিকল্প সেচের ব্যবস্থা না থাকায় আমার ৫ বিঘা জমিতে বোনা আমনের চাষ করতে পারিনি। পানির অভাবে এসব জমি ফেটে গেছে।
উপজেলার বাজিতপুর গ্রামের কৃষক হাসানুল বান্না উজ্জল বলেন, আমার জমির বোনা আমনের গাছ মরে গেছে। সে জমি পুনরায় চাষ দিয়ে ধানের বীজ বুনে দিয়েছিলাম। কিন্তু পরের বার আর চারাই গজায়নি। রয়না গ্রামের আবু বকর মন্ডল বলেন, অনাবৃষ্টির কারণে মাটি শুকিয়ে ফেটে গেছে। একদিকে খরা, আরেক দিকে ঘন ঘন লোডশেডিং। বারবার সেচ দেয়ায় ধান চাষে খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন, চলতি আমন মৌসুমে খরার প্রকোপ চলছে। ফলে কিছু কিছু জমির মাটি ফেটে যাচ্ছে। তবে এখনও যদি বৃষ্টি হয়, তাহলে এসব জমির বোনা আমনের তেমন ক্ষতি হবে না। আবার পানির অভাবে যারা রোপা আমন ধান লাগাতে পারছেন না, তারাও লাগাতে পারবেন।


প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০২৩ | সময়: ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ