গোদাগাড়ীতে এক মঞ্চে ৫ কমিটি ঘোষণা : এমপির সামনে দুপক্ষের সংঘর্ষ-ভাঙচুর

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে এক মঞ্চ থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের পাঁচটি কমিটি ঘোষণা করা হয়। মঞ্চে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী।
তার উপস্থিতিতে গোদাগাড়ী পৌরসভার পাঁচটি কমিটি ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা চেয়ার ভাঙচুর শুরু করে। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন সংসদ সদস্য।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গোদাগাড়ী পৌর যুবলীগের কমিটি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সম্মেলনে হট্টগোল শুরু হয়। ওই কমিটিতে উপজেলার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী আবদুর রহিম ওরফে টিপুকে পৌরসভা যুবলীগের ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ঘোষিত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে থানার দালাল ও মাদক ব্যবসার পৃষ্ঠপোষক বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষুব্ধ নেতাকর্মী।
রোববার বিকেলে গোদাগাড়ী উপজেলা সদরের একটি স্কুল মাঠে পৌরসভা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ ও কৃষক লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রশিদ নতুন কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম সম্পাদকদের নাম ঘোষণা করেন।
নাম ঘোষণার সময় তিনি বারবার করে বলেন, কোনো স্লোগান ও করতালি দেয়া যাবে না। কিন্তু যুবলীগের কমিটি ঘোষণার পরপরই মঞ্চের সামনে চেয়ার ভাঙচুর ও নেতাকর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় ওমর ফারুক চৌধুরী দ্রুত মঞ্চ ত্যাগ করে গোদাগাড়ী পৌরসভায় আশ্রয় নেন। পরে পুলিশ এসে তাঁকে সেখান থেকে বের হওয়ার ব্যবস্থা করে।
প্রত্যক্ষদর্শী নেতাকর্মী জানান, পৌরসভা যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন মোশাররফ হোসেন। ঘোষিত কমিটিতে তাঁকে ২ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়। আর ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয় মাদক ব্যবসায়ী আবদুর রহিম ওরফে টিপুকে। কমিটির সভাপতি করা হয়েছে পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল জব্বারকে। আর সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে আবদুল্লাহ আল মামুনকে। মামুন আগের কমিটিতেও একই পদে ছিলেন। ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহিম গোদাগাড়ী থানা-পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী।
গোদাগাড়ী থানার ওসি কামরুল ইসলাম বলেন, আবদুর রহিমের নামে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা বিচারাধীন। তিনি থানায় আসার আগে যুবলীগের সদ্য ঘোষিত কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর আবদুল জব্বার থানার দালালি করতেন বলেও তিনি শুনেছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের কোনো কমিটি গঠন না করার জন্য ওপর মহলের নির্দেশনা আছে। এরপরও ওমর ফারুক চৌধুরী তার নির্বাচনী এলাকার দুই উপজেলায় একের পর এক কমিটি গঠন করে যাচ্ছেন।
জেলা যুবলীগের সভাপতি আবু সালেহ বলেন, এক মঞ্চে পাঁচটি কমিটি ঘোষণা করার কোনো বিধান নেই। সেখানে তাঁর কোনো প্রতিনিধি ছিলেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপজেলা যুবলীগের নেতারা ছিলেন। জেলার সাংগঠনিক সম্পাদককে দায়িত্ব দেয়া ছিল। তিনি ছিলেন কি না, খোঁজ নিয়ে জানাতে পারবেন। আর তিনি নিজে ঢাকায় ছিলেন।
বিতর্কিতদের যুবলীগের কমিটিতে স্থান দেওয়ায় সভাপতি প্রার্থী মোশাররফ হোসেনের সমর্থকেরা চেয়ার ভাঙচুর শুরু করেন। এ সময় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মোশাররফ হোসেন বলেন, তিনি সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। নিয়ম ভেঙে তাকে ২ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ দেয়া হয়েছে। আর ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে একজন মাদক ব্যবসায়ীকে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধেই মাদকের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ আছে। তার দাবি, ৫০ লাখ টাকার বিনিময়ে এ কমিটি দেয়া হয়েছে। কে টাকা নিয়েছেন, জানতে চাইলে বলেন, ‘সেটা খোঁজ নেন, খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন।’
তবে অভিযোগের বিষয়ে নতুন সভাপতি আবদুল জব্বার বলেন, ‘আমি মাদক ব্যবসায়ীদের জন্য কাজ করি, এটা সম্পূর্ণ বাজে কথা। সভাপতি-সম্পাদকের কারও কোনো মাদক সম্পৃক্ততা নেই।’
জানতে চাইলে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, তানোর-গোদাগাড়ী জামায়াত-বিএনপি-অধ্যুষিত এলাকা ছিল। এখন আওয়ামী লীগ বাড়তে বাড়তে এমন অবস্থা হয়েছে, পদের যোগ্য লোকের অভাব নেই।
তিনি বলেন, ‘একটা ছেলে সাধারণ সম্পাদক হতে চেয়েছিল, তাকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তার সমর্থকেরা কয়েকখানা চেয়ার ভেঙেছে। এটা কি কোনো খবর!’
পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সময় পৌরসভায় আশ্রয় নেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, অনুষ্ঠানস্থল থেকে গাড়িতে না উঠে হেঁটে পৌরসভায় গিয়েছেন। ভেতরে গিয়ে বসে চা পান করেছেন। লোকজনের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছেন। তাঁর বের হওয়ার জন্য বাড়তি কোনো পুলিশ লাগেনি। তিনি নিজেই হট্টগোল থামিয়ে এসেছিলেন।
মাদক ব্যবসায়ীদের কমিটিতে রাখার বিষয়ে সংসদ সদস্য বলেন, গোদাগাড়ীতে মাদক ব্যবসায়ী নয়, এমন একটি লোক পাওয়া যাবে না। বিশেষ করে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ সড়কের দক্ষিণ পাশে।
তিনি বলেন, একসঙ্গে পাঁচটি কমিটি ঘোষণার ব্যাপারে কোনো বাধা নেই। একেকটি কমিটির বয়স ১২-১৩ বছর হয়ে গেছে। সামনে নির্বাচন। দ্রুত কমিটিগুলো করার জন্য একসঙ্গে করা হয়েছে।
ওসি কামরুল ইসলাম বলেন, সম্মেলনে একটা ঝামেলা হয়েছিল। সংসদ সদস্য এলাকায় আসলে এমনিতে পুলিশ প্রটোকল দেওয়া হয়। কিন্তু ঝামেলার কারণে চারজন পুলিশে পাহারা যাচ্ছিল না। থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠিয়ে তাঁর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।


প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২৩ | সময়: ৬:৩০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ