সমাবেশ: দুই দলের শর্ত হবে একই, জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

সানশাইন ডেস্ক: বিএনপি বা আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন- কাউকেই এখনও ঢাকায় সমাবেশ করতে অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেছেন, অনুমতি দেওয়া হবে কি না সেই সিদ্ধান্ত নেবে ঢাকা মহানগর পুলিশ। আর অনুমতি দেওয়া হলে দুই দলের ক্ষেত্রেই একই শর্ত প্রযোজ্য হবে।
রাজনৈতিক কোনো দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে বাধা নেই মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেছেন, সমাবেশ থেকে সহিংসতা হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবসের কর্মসূচি জানাতে বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। সেখানে উপস্থিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সমাবেশ নিয়েও প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।
শুক্রবার দুই দলের সমাবেশের কর্মসূচি নিয়ে এক প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “দুই দলের জন্য একই নির্দেশনা থাকবে। এখন পর্যন্ত আমরা কাউকে অনুমতি দিইনি। আমাদের কমিশনার (ঢাকার পুলিশ কমিশনার) সাহেব এখন বসবেন। সিটি করপোরেশনের পুলিশ কমিশনার এটি নিয়ন্ত্রণ করেন থাকেন। তিনি বসে সিদ্ধান্ত নেবেন কি করবেন।”
বিএনপির মহাসমাবেশ হওয়ার কথা ছিল বৃহস্পতিবার। সেজন্য নয়া পল্টন অথবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান চেয়েছিল দলটি। এর পাল্টায় আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ বৃহস্পতিবার বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটেই শান্তি সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার কার্যদিবস হওয়ায় ঢাকা মহানগর পুলিশ কোনো দলকেই অনুমতি দিচ্ছিল না। বিএনপিকে সমাবেশের জন্য গোলাপবাগ মাঠ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছিল পুলিশের তরফ থেকে।
এ পরিস্থিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কর্মসূচি এক দিন পেছানোর সিদ্ধান্ত হয়। বুধবার রাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘোষণা দেন, বৃহস্পতিবার নয়, তারা মহাসমাবেশ করবেন শুক্রবার বেলা ২টায়। আর সেটা নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই হবে। তখন যুবলীগও জানায়, তাদের তিন সংগঠনের শান্তি সমাবেশ একদিন পিছিয়ে শুক্রবার বিকাল ৩টায় নেওয়া হয়েছে। শেরেবাংলা নগরে পুরাতন বাণিজ্য মেলা মাঠে সেই কর্মসূচি হবে।
তবে বৃহস্পতিবার আবারও সেই সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনে যুবলীগ। দলটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান জানান, শুক্রবার বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেইটে শান্তি সমাবেশ করার জন্য আবারও অনুমতি চেয়েছেন তারা। বিকাল ৩টায় সেখানে সমাবেশ হবে। জানতে চাইলে ডিএমপির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, বিকাল ৪টায় ব্রিফিং ডেকেছেন পুলিশ কমিশনার। সেখানেই সমাবেশের অনুমতি নিয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
অল্প দূরত্বে দুই দলের পাল্টাপাল্টি সমাবেশের কর্মসূচি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “আমরাও শুনেছি। আমরা এটি নিয়ে বসব। তারা যদি (সমাবেশ) করে, নিশ্চয় দুই দলকে কন্ডিশন (শর্ত) দিয়ে দেব তারা কী, কীভাবে করবেন এবং কি করতে পারবেন না, সেই কন্ডিশন দিয়ে দেব।
“সবাইকে সব সময় বলি রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি পালন করতে সরকারিভাবে কোনো বাধা নেই। কিন্তু তারা যেন নিয়মশৃঙ্খলা ও দেশের আইন মেনে চলেন এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করেন আমি সেই আহ্বান রাখব। আমি আহ্বান রাখব, তারা যেন কোনো রকম ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত না হন। তারা যেন জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টি না করেন।”
মন্ত্রী বলেন, “জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করলে বা জানমালের ক্ষতি, ভাঙচুর বা জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট করলে নিরাপত্তা বাহিনী তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে।” এর আগে গত ১২ জুলাই নয়া পল্টনে বিএনপি এবং বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগ সমাবেশ করে। সেদিন দুই দলকেই ২৩টি শর্ত দিয়েছিল ডিএমপি।
বিএনপিকে বৃহস্পতিবার রাস্তায় সমাবেশ করার অনুমতি না দেওয়ায় তারা সমাবেশ এক দিন পিছিয়ে দিয়ে সেই রাস্তাতেই কর্মসূচি পালন করতে চাইছে। সে প্রসঙ্গ ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা তাদের রাস্তা পরিহার করার জন্য বলব। তারপরেও তারা যদি না করেন, সেখানে দুর্ভোগ সৃষ্টি করলে নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করবে। যে দলই করেন শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখবেন এটিই মূল কথা।
“পুলিশ থেকে বড় বড় দলগুলোকে অনুরোধ করছি রাজপথ যেন বর্জন করেন। তারপর তারা যদি করেন, তাদের কাছে অনুরোধ থাকবে, তারা যেন সহিংসতায় না যায়।” স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমাদের স্পষ্ট বর্তা হচ্ছে, রাজপথে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে কোনো জায়গায় কর্মসূচি করতে আমরা সব সময় মানা করে আসছি। সব সময় আমাদের অনুরোধ থাকবে। তারপরেও কোনো দল যদি করে, তারা রিস্ক নিয়ে করবেন।”
পাল্টপাল্টি কর্মসূচি না দিলেই কি নয়– এমন এক প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এটা আমার কিছু বলার নেই, রাজনৈতিক নেতাদের কাছে জিজ্ঞাসা করবেন। আমি তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই মুহূর্তে। আমার সঙ্গে শুধু আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে কথা বলবেন। “অনুমতি দেওয়া হয় যেন জনদুর্ভোগ না হয়, এটা বলে দিয়ে। তাদের কর্তব্যটা কি আমরা জানিয়ে দিই। আমরা কিছু শর্ত সব সময় দিয়ে দেই যে এই জিনিস আপনারা করতে পারবেন না। সেগুলো মেনে না করলে সেটার ব্যবস্থা নেই।”


প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০২৩ | সময়: ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর